ভারত-কানাডা-রাশিয়ায় পংকজ নাথের বাড়ি, রাস্তায় চলে ২৪০টি গাড়ি

ভারত-কানাডা-রাশিয়ায় পংকজ নাথের বাড়ি, রাস্তায় চলে ২৪০টি গাড়ি

সংগঠনের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়ার পর এবার বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে বরিশাল নগরীর সদর রোডের রয়েল রেস্তোরাঁয় এ সংবাদ সম্মেলন করেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাজিরহাট থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র। সংবাদ সম্মেলনে পংকজ দেবনাথের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জমি দখল, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের অভিযোগ তোলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সঞ্জয় চন্দ্র বলেন, দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন এমপি পংকজ দেবনাথ। ভারত, কানাডা ও রাশিয়ায় পংকজ দেবনাথের বাড়ি ও ব্যবসা রয়েছে। ঢাকার ধানমন্ডিতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, উত্তরায় বিলাসবহুল ১০তলা বাড়ি, মালিবাগে পোশাক কারখানা ও পরিবহন ব্যবসাসহ নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে তার। বর্তমানে ঢাকার রাস্তায় ২৪০টি গাড়ি চলে তার। অবৈধভাবে এসব সম্পদ বানিয়েছেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে সঞ্জয় চন্দ্র আরো বলেন, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের চরে দেড় হাজার একর জমি থেকে বছরে প্রায় চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এমপি পংকজ দেবনাথ। আলিমাবাদ ইউনিয়নের শ্রীপুরের গাগড়িয়ার চরে হাজার হাজার একর জমি ভুয়া খতিয়ান দেখিয়ে দখল করেছেন পংকজ দেবনাথের চাচাতো ভাই রামকৃষ্ণ দেবনাথ।

তিনি বলেন, জনপ্রতি ৬০ হাজার টাকা করে নিয়ে সরকারি জমির ৮০০ বন্দোবস্তের কার্ড অনুমোদন দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। ডিও লেটার দিয়ে বালুমহালের টেন্ডার বন্ধ করে ছোট ভাই মনজ কুমার দেবনাথ ও চাচাতো ভাই রিপন দেবনাথের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হয়ে কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন পংকজ দেবনাথ। টেন্ডারবাজি, সিন্ডিকেট ও জেলা পরিষদের ঘাট দখল করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের ফান্ডের নামে টেন্ডারবাজি করে হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা থেকে ১৫ ভাগ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন পংকজ দেবনাথ।

সঞ্জয় চন্দ্র আরো বলেন, নিয়োগ বাণিজ্য, দখল ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলায় এবং বরিশালের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে এমপি পংকজ দেবনাথের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে দুর্নীতি দমন আইনে একটি মামলা করায় নির্যাতনের শিকার হই আমি। যেহেতু এখন দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলছে সেহেতু সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পংকজ দেবনাথের বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিতে আনার চেষ্টা করছি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। ছয় বছর ধরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে। আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে প্রতিপক্ষদের ইন্ধনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

গত ২৪ অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথকে সম্মেলন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নির্দেশ দেন।

পংকজ দেবনাথ বরিশাল-৪ আসনের বর্তমান এমপি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও নিজ নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের একাংশ সংবাদ সম্মেলন করে পংকজ দেবনাথের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং ক্যাডার দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ করেছিল। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর আলোচনায় আসেন তিনি।

আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন। এর আগে মোল্লা মো. আবু কাওছার ও পংকজ দেবনাথকে সরিয়ে দেয়ার পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক এক নেতাকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির দায়িত্ব দেয়া হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর ২০০৯ সালে ঢাকায় পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন পংকজ দেবনাথ। ‘বিহঙ্গ’ নামে পরিচালিত তার পরিবহন একটি রুট নিয়ে শুরু করে ব্যবসা। গত বছর পর্যন্ত পাঁচটি রুটে ২৪০টি বাস চলছে তার কোম্পানির। নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পংকজ দেবনাথ।