‘৬৪৫ দিন ধরে বন্দি খালেদা জিয়াকে চিরপঙ্গু করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে’

‘৬৪৫ দিন ধরে বন্দি খালেদা জিয়াকে চিরপঙ্গু করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে’

বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

রিজভী বলেন, কারাগারে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের অপকৌশল প্রয়োগ করছে সরকার। বিনা চিকিৎসায় তাকে কারাগারে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যার চক্রান্ত চলছে। গত ৬৪৫ দিন যাবত বিনা অপরাধে কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া যে গুরুতর অসুস্থ এটা দেশের প্রতিটি মানুষ জানেন। অথচ সবকিছু জেনেও শুধুমাত্র রুদ্ধকপাট মুক্তিহীন দেশনেত্রীকে রোগে-শোকে কষ্ট দেয়ার জন্যই তাঁর চিকিৎসায় বাধা দেয়া হচ্ছে। সুচিকৎসার অভাবে ৭৫ বছর বয়স্ক চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা দিন দিন আশংকাজনকভাবে অবনতি ঘটছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ইতিহাস আওয়ামী লীগের।

সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই সরকার অন্ধ প্রতিহিংসার বশে বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতেই তার সুচিকিৎসা প্রদানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তার প্রাপ্য জামিনে সরাসরি বাধা দেয়া হচ্ছে। নগ্নভাবে আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে অসত্য সংবাদ পরিবেশন করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা এক ভয়াবহ চক্রান্তের বর্ধিত প্রকাশ।

বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরা বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিচ্ছেন না অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সরকারের শেখানো বক্তব্য ও ব্যাখ্যা দিলেও সুচিকিৎসার কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। গত এক সপ্তাহে কোনো চিকিৎসক বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাননি। তার হাতে যে ব্যথা ছিল তা পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। নার্সরা তার হাতে-পায়ে হাত দিতে পারছেন না, হাত দিলেই তিনি প্রচণ্ড যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। তার ডান পায়ের গোড়ালিতে একটা ফোড়ার কারণে সেই যন্ত্রণা আরও তীব্রতর হয়েছে। অথচ সরকারী চিকৎসকরা দেশনেত্রীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন না।

বেগম খালেদা জিয়ার জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাকে জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। দেশবাসী তার অসুস্থতা নিয়ে উৎকন্ঠায় প্রহর গুনলেও স্বাস্থ্যের সঠিক অবস্থা জনগণের সামনে প্রকাশ করছে না সরকার।

রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার রিউমেটোয়েড আর্থাইটিস এর জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড এর চেয়ারম্যান এখনও কোনো মতামত দিচ্ছেন না। অথচ ইতোমধ্যে রিউমেটোয়েড আর্থাইটিসের তিন জন চিকিৎসক সদস্যের সমন্বয়ে বোর্ডের যে রিপোর্ট সেটিও প্রকাশ করা হচ্ছে না। মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান তার বোর্ডের অপর তিন জন সদস্যকে নিয়ে অদ্যাবধি কোনো বোর্ড মিটিংও করেননি। মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অন্যান্য সদস্যদেরকে জানাচ্ছেন না।

বুধবার বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার স্বজনদের সাক্ষাতের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বুধবার দেশনেত্রীর সঙ্গে তার ভাই-বোনরা সাক্ষাত করে তার গুরুতর অসুস্থতায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছেন। দেশনেত্রী হাইলি এক্টিভ ডিফরমিং, রিউমেটোয়েড আর্থাইটিস, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। রোগের প্রয়োজনীয় যথাযথ চিকিৎসা ও পরিচর্যা না হওয়ার কারণে উনার হাত ও পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলোসহ বিভিন্ন জয়েন্ট ফুলে গেছে এবং তাতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। উঠতে-বসতে পারছেন না। জয়েন্টগুলো শক্ত হয়ে যাচ্ছে,যা অচিরেই স্থায়ী রুপ ধারণ করতে পারে। হাত, পায়ের আঙুল বেঁকে যাচ্ছে। নিজ হাতে কিছু খেতেও পারছেন না।

সরকারের মন্ত্রীদের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার এসব জটিল ও গুরুতর রোগগুলোকে নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা উপহাস করছেন। জনগণের সেন্টিমেন্ট তোয়াক্কা করে না বলেই সরকার দেশের একজন জনপ্রিয় নেত্রীর জীবনকে নি:শেষ করে দেয়ার সব আয়োজনে ব্যস্ত রয়েছে। একদলীয় পলিটিক্যাল মনোপলি বজায় রাখার জন্যই বেগম জিয়ার জীবন বিপন্নের আয়োজনে সরকারের আগ্রাসী অসহিষ্ণুতা প্রবল হয়ে উঠেছে। সেজন্য তাঁর চিকিৎসার অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছে। জেলখানায় সঠিক চিকিৎসা হয়না এটা সবাই জানেন। সেখানে স্বাভাবিক পরিবেশ না থাকায় যেকোন জটিল রোগ ক্রমাগত সুচিকিৎসার অভাবে প্রাণহানির পর্যায়ে উপনীত হয়।

বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকারের টালবাহানার পরিণতি ভালো হবে না হুশিয়ার করে বিএনপির এই নেতা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের প্রতীক, সাহস ও প্রেরণার প্রতীক। সরকারের এই টালবাহানায় বেগম খালেদা জিয়ার কোনো ক্ষতি হলে এর পরিণতি ভালো হবে না। এখনও সময় আছে, বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে, বিএনপির বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন। দেশটাকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেবেন না। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, চারবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন প্রতিহিংসার মিথ্যা মামলায় বন্দী ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগহীন একজন মানুষ।

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ জানেন, এই বিনা ভোটের ভুয়া সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তাকে নিয়ে যা করছে তা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারো বলবো-এই ষড়যন্ত্র তো অনেক হলো, এবার থামুন। দেশনেত্রীর নি:শর্ত মুক্তির জন্য আবারও জোর আহবান জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, অধ্যাপক শাহিদা রফিক, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এমজে/