‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ স্লোগানে মুখর নয়াপল্টন

সমাবেশের জন্য আর অনুমতি নিবো না, যখন খুশি তখন রাজপথে নামবো: মির্জা আলমগীর

সমাবেশের জন্য আর অনুমতি নিবো না, যখন খুশি তখন রাজপথে নামবো: মির্জা আলমগীর

আগামীতে যতো সভা-সমাবেশ করা হবে এজন্য কারো কাছ থেকে কোন অনুমতি নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, ‘আমাদের এই সমাবেশ আজকে সকাল ১০টার সময় অনুমতি দিয়েছে আর বলেছে শুধু আজকের জন্য (অনুমতি)। কিন্তু এরপরে আর কখনও আমরা (বিএনপি) অনুমতি নিবো না। আমরা আমাদের যখন খুশি তখন সমাবেশ করবো। এটা আমাদের অধিকার, সংবিধান অনুযায়ী অধিকার। তাই সকলকে দল-মত নির্বিশেষে সামনের দিনগুলোতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে।’

রবিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে একথা বলেন তিনি।

মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা দেখেছি এই সরকার আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমাদের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সামনে একটাই লক্ষ্য যে, গণতন্ত্রের প্রতীক দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি করা এবং স্বৈরশাসকের পতন ঘটানো। এই সরকার জনগণের নির্বাচিত সরকার না। সুতরাং তারা অবৈধভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। জনগণের সমর্থনে নয়। দেশে গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম সেই গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজন হলে আবার বুকের রক্ত দিব।

সরকারকে ব্যর্থ দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকার সব কিছুতে ব্যর্থ হয়েছে, এমনকি বাংলাদেশ নামক যে একটা রাষ্ট্র এই রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে ব্যর্থে পরিণত করেছে। তারা হাজার হাজার পুলিশ নিয়োগ দিচ্ছে কিন্তু দেশে কোন ছিনতাই-রাহাজানি কমছে না। তারা সড়ক নিয়ে আইন করেছে অথচ রাস্তায় প্রতিদিনই মানুষ এক্সিডেন্ট করে মারা যাচ্ছে।’

‘আজকে ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, শেয়ার মার্কেট লুট করে নিয়েছে, ব্যাংক চলছে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন নয় দলীয়করণ করে নিয়েছে। আজকে মিডিয়াকেও দখল করে নিয়েছে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখে তারা আজকে সরকার চালাতে চায়, দেশ চালাতে চায়।সুতরাং আমাদের দেশকে যদি রক্ষা করতে হয় নিজেদেরকে রক্ষা করতে হয় তাহলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

বিএনপি পাগল রিজভী হাওলাদারের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, ‘আমাদেরকর্মী বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ তিনি সবসময় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে সবসময়ই আমাদের এই কার্যালয়ে থাকতেন। সেই রিজভী অনশন করা অবস্থায় গতকাল কার্যালয়ে মারা গেছেন। তাকে সবসময়ই কার্যালয়ে দেখতাম বুকের মধ্যে ‘গণতন্ত্রের মায়ের মুক্তি চাই’ লেখাটা লিখে রাখতেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি ও তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।’

রবিবার বেলা ২টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমাবেশ শুরু হয়। এতে বক্তব্য রাখেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

সমাবেশে সবার মুখে মুখে একটি দাবি, সেটি হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। নেত্রীর মুক্তির দাবিতে লাখো নেতা-কর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নয়াপল্টন এলাকা।

এর আগে সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফ্যাস্টুন সহকারে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাইটিংগেল, ফকিরাপুল ও নয়াপল্টন এলাকার রাস্তায় যান চলাচল কমে যায়। তবে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে একটি লেন যান চলাচলের উন্মুক্ত রাখা হয়। সমাবেশকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্তক অবস্থানে ছিলেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সমাবেশের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আজ সকালে অনুমতি দেয়া হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অথবা প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করার জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। পরে নয়াপল্টনে পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় পুলিশ।

এর আগে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল শনিবার সমাবেশ করার কথা ছিল বিএনপির। পুলিশের অনুমতি না থাকায় সেদিন সমাবেশ করেনি দলটি। পরে গতকালই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রবিবার সমাবেশ করার ঘোষণা দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।