‘মাঠে-ময়দানের বিষয় মাঠে থাকুক, মানবিক কারণে খালেদা জিয়ার জামিন চাই’

‘মাঠে-ময়দানের বিষয় মাঠে থাকুক, মানবিক কারণে খালেদা জিয়ার জামিন চাই’

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি ও বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে বাহাস হয়েছে। এ সময় একে অপরের মধ্যে হাস্যরসও হয়েছে।

আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

সকাল সাড়ে ৯টায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়।

শুনানির শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘মাই লর্ড, কোর্টে এসে পুলিশের তল্লাশি, নিরাপত্তা দেখে আমার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে।’

জবাবে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনও হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমারও তো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। আপনারা সুপ্রিম কোর্টের সামনের গেটে এসে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন, ভাঙচুর করেছেন, মিছিল-সমাবেশ করছেন।’

এর জবাবে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক বিষয়। মাঠে-ময়দানের বিষয় এখানে আনা ঠিক হবে না। মাঠে-ময়দানের বিষয় মাঠেই থাকুক।’

প্রধান বিচারপতি আইনজীবীর কাছে জানতে চান আপনাকে কি পুলিশ কিছু বলেছে? জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘না। আমি বারের সাবেক সভাপতি, আমাকে তো খাতির করে পাঠিয়ে দিল! কিন্তু বাকি আইনজীবীদের কী হবে?’ প্রধান বিচারপতি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘কিছু না করলে কিছু হবে না।’

এরপর জামিনের ওপর শুনানি শুরু করেন বিচারকরা।

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘মাই লর্ড, আমরা মামলার মেরিট নিয়ে কথা বলতে চাই না। মানবিক কারণে জামিন চাই। তিনি বয়স্ক একজন নারী, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। মানবিক কারণে তার জামিন চাই। আমাদের কাছে অফিশিয়ালি কোনো মেডিকেল রিপোর্ট নেই। তাই উপস্থাপন করতে পারছি না। নন-অফিশিয়ালি একটি রিপোর্ট রয়েছে। তা আমরা উপস্থাপন করতে চাই না।

তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের লোকজন তার সঙ্গে বিএসএমএমইউ’তে দেখা করেছেন। আমরাও গতকাল বিএসএমএমইউ’র ভিসির সঙ্গে দেখা করেছি। তার কাছে মেডিকেল রিপোর্ট চেয়েছি। তিনি আমাদের রিপোর্ট দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল তাকে বলেছেন, আদালতের নির্দেশ ছাড়া কাউকে মেডিকেল রিপোর্ট দেয়া যাবে না।

এর প্রতিবাদ জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমাকে মেলাইন করা হচ্ছে। আমি ভিসিকে কিছুই বলিনি।’

এরপর বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘মাই লর্ড, আপনি চাইলে মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট তলব করতে পারেন।’

বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার আশা করি। এটা সর্বোচ্চ আদালত। আশা করি, আল্লাহর রহমতে শুনানি শেষে বেগম খালেদা জিয়া জামিন পাবেন।’

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ বেগম খালেদা জিয়া এতই অসুস্থ যে তার অ্যাডভান্স চিকিৎসা দরকার। মানবিক কারণে তিনি জামিন পাবেন, এই গ্রাউন্ডে আমরা তার জামিনের প্রার্থনা করেছি।’

এরপর প্রধান বিচারপতি আগামী ৫ ডিসেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ওই দিন জামিনের আদেশের জন্য দিন ঠিক করেন।

প্রসঙ্গত, বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানিকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। কারাগারের ফটক থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে আটক করা হয়। পরে গ্রেফতার করা হয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদকে। পরে পুলিশের রিমান্ড আবেদন ও আসামিপক্ষের করা জামিন আবেদনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম (সিএমএম) আবু সাঈদের আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।