খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি আজ

খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি আজ

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির জন্য আজ বৃহস্পতিবার দিন ধার্য রয়েছে। আবেদনটি আজকের আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকার ১২ নম্বর ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আদালতের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন গতকাল বিকালে সুপ্রিমকোর্টে পাঠানো হয়।

এ জামিন শুনানি কেন্দ্র করে বেশ কিছু দিন ধরেই উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক ও আদালত অঙ্গনে। বিএনপির নেতাকর্মীসহ রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেরই নজর রয়েছে উচ্চ আদালতের দিকে।

এর আগে গত বৃস্পতিবার তার স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন না পেয়ে আদালত বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি পেছানোয় আদালতকক্ষে নজিরবিহীন হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। জামিন শুনানির দিন এগিয়ে আনার দাবিতে বিএনপি-সমর্থক আইনজীবীরা আদালতকক্ষের ভেতরে প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ মিছিল করেন। হট্টগোল শুরুর পর থেকে সেদিন আপিল বিভাগ একটি মামলারও শুনানি করতে পারেনি।

এ অবস্থায় আজকের জামিন শুনানি কেন্দ্র করে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে। আপিল বিভাগে আদালতকক্ষের ভেতরে বসানো হয়েছে আটটি সিসি ক্যামেরা। গতকাল দুপুর থেকেই সুপ্রিমকোর্টের ভেতরে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রতিটি প্রবেশ পথ, আদালত চত্বর ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিকালে সুপ্রিমকোর্টের মাজার গেট, মূল গেট ও বার কাউন্সিল গেটের পাশে তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। আজকে সুপ্রিমকোর্ট চত্বর ও আদালতকক্ষে প্রবেশে থাকবে বেশ কড়াকড়ি। আইডিকার্ড চেক করেই কেবল ঢুকতে দেওয়া হবে।

সুপ্রিমকোর্ট অঙ্গনের নিরাপত্তার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে দায়িত্বরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিরা জাহান বলেন, গত দিনের মতোই নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকবে। তবে অতিরিক্ত হিসেবে, সেদিনকার মতো ঘটনা যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, তিনটি মোটরসাইকেলে কে বা কারা আগুন দিয়েছে। আমরা বিষয়টি দেখছি। তবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে চিহ্নিত বা আটক করা হয়নি।

বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আমরা আইনজীবী। আমরা এমন কোনো কিছু করা না বা সরকারেরও এমন কিছু প্রত্যাশা করা উচিত নয়, যাতে করে বুলেটপ্রুফ পুলিশকে কোর্টের বারান্দায় থাকতে হয়। এটি আসলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য করা হচ্ছে। তবে আইনজীবীরা পুলিশের বুলেটপ্রুফ পোশাককে ভয় করে না।

বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের যুিক্ত তুলে ধরে খন্দকার মাহবুব বলেন, একজন বয়স্ক, অসুস্থ মহিলা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, টাকা আত্মসাতের কথা নেই। সাত বছরের এ সাজার মামলায় ইতোমধ্যে প্রায় দুই বছর সাজা খাটা হয়েছে। এ ধরনের মামলায় হাইকোর্ট থেকে অহরহ জামিন দেওয়ার নজির রয়েছে। পার্শ¦বর্তী দেশগুলোতেও এ ধরনের রাজনৈতিক মামলায় আদালতই জামিন দিচ্ছেন। তাই আশা করছি আদালত ন্যায়বিচার করবেন এবং খালেদা জিয়া জামিন পাবেন।

এর আগে গত ২৮ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদন চান আপিল বিভাগ। সেদিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির বেঞ্চ ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আদালতে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। অসুস্থতার বিষয়টি উল্লেখ করে তাকে মানবিক কারণে জামিন দিতে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীর আবেদনের পর ওই আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ৫ ডিসেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন প্রস্তুত ও দাখিলের জন্য সময় আবেদন করেন।

এমজে/