পেনড্রাইভ থেকে রাজাকারের তালিকা প্রিন্ট করতেই ৬০ কোটি টাকা খরচ!

পেনড্রাইভ থেকে রাজাকারের তালিকা প্রিন্ট করতেই ৬০ কোটি টাকা খরচ!

সদ্য স্থগিত করা রাজাকারের তালিকা করতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ৬০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বুধবার সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দালাল আইনে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তাদের নামের তালিকা আমরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। তবে এসব মামলায় যারা খালাস পেয়েছেন তাদের নামের তালিকাও নোট হিসেবে সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রী তালিকা চেয়েছেন, আমরা দিয়েছি। কিন্তু তা প্রকাশ করবেন কিনা তা আমাদের বলেননি।’

এদিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উনারা যা দিয়েছেন সেই পেনড্রাইভে যা ছিল আমরা তা হুবহু প্রকাশ করেছি।

প্রশ্ন হলো- তাহলে ৬০ কোটি টাকা গেলো কোথায়?

এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‘পেনড্রাইভ থেকে তালিকা প্রিন্ট করতেই কি ৬০ কোটি টাকা খরচ হয়?’

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসান আল মামুন লিখেছেন, ‘পেন ড্রাইভ থেকে ৬০ পৃষ্ঠা কাগজ প্রিন্ট করতে কি ৬০ কোটি টাকা লাগে মন্ত্রী মহোদয়! এদেশের আর কোনো সেক্টর বাকি আছে কি লুটেপুটে খাবার??’

এদিকে প্রকাশিত রাজাকারদের তালিকা পাকিস্তানিদের তৈরি করা বলে দাবি করেছেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘রাজাকার গঠন করেছিল পাকিস্তান সরকার, সুতরাং তাদের করা তালিকাই সঠিক। সেই তালিকার ফটোকপি দেখতে চাই। অন্য কিছু নয়।’

তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলছেন, ‘‌দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন এবং সংযোজন-বিয়োজন কোনো কিছুই করিনি।’ এদিকে যাচাই-বাছাই না করে নাম প্রকাশ করায় ভুল স্বীকার করে এর দায়ভার গ্রহন করেছেন তিনি।’

বুধবার দুপুরে মানিকগঞ্জ বিজয় মেলা মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলায় ভুল স্বীকার করে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি জানি বল্লার চাকে হাত দিয়েছি। রাজাকার, আলবদর, আলসামসদের তালিকা প্রকাশ করেছি। তবে দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করছি আমাদের একটু ভুল হয়ে গেছে। আমি সেই জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কিছু লোক এবং যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাদের কয়েকজনের নাম রাজাকারের তালিকায়ও এসে গেছে।

মন্ত্রী আরো বলেন, এই তালিকায় ইচ্ছাকৃত ভুল ছিল না। রাজাকারদের তালিকায় যাদের নাম ছিল, তা সঠিক ছিল বলে বিশ্বাস করা হয়েছিল। এ কারণে যাচাই বাছাই না করেই তালিকা প্রকাশ করায় আমরা হোঁচট খেয়েছি। কাজ করতে গেলে ভুল তো হতেই পারে। ৬৪ জেলার ৪৬০টি উপজেলায় যে সম্পূরক তালিকা আসবে তা পূর্ণ সতর্কতার সঙ্গে প্রকাশ করা হবে। ত্রুটিপূর্ণ তালিকা মন্ত্রণালয়ের নিজ উদ্যোগে সংশোধন করা হবে। মন্ত্রী আরো বলেন, রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের তালিকা প্রকাশ করায় সঙ্গত কারণেই একটা বিশেষ শ্রেণি ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে।