গণতন্ত্র হত্যা দিবস

ঢাকা বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিপেটা, আহত ৫০

ঢাকা বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিপেটা, আহত ৫০

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করেছে বাংলাদেশের বিরোধীদলগুলো। তারি ধারাবাহিকতায় সোমবার কালো দিবস কর্মসূচি পালন করতে গেলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের মিছিলে বেপোরোয়া লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। আর তাতে আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী।

কার্যালয় ঘেরাও করে বিএনপিকে এই দিনটিতে কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। কোনো কর্মসূচির পালনের সুযোগ দেয়া হয়নি প্রধান এই বিরোধী দলকে।

আটটি বাম দলের এই জোট আজ ‘গণতন্ত্রের কালো দিবস’ পালন উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। এই জোটে রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ (মার্ক্সবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন।

প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু হয় দুপুর ১২ টার দিকে। সমাবেশ শেষে পৌনে একটার দিকে কয়েক শ মানুষের মিছিলটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে রওনা হয়। তবে হাইকোর্টের কাছে কদম ফোয়ারার সামনে পুলিশের প্রথম বাধার মুখে পড়ে মিছিলটি। ব্যারিকেড ভেঙে মিছিলটি সামনের দিকে এগোতে থাকে। ওই সময় পুলিশ জোটের মিছিলে লাঠিপেটা করে। 

পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিলটি সামনের দিকে এগোলে বেলা একটার দিকে মৎস্য ভবনের সামনে দ্বিতীয় ব্যারিকেডের সামনে পড়ে। সেখানে পুলিশের উপস্থিতি ও ব্যারিকেডের সংখ্যা বেশি ছিল। পুলিশের শক্ত বাধার মুখেও জোটের নেতা-কর্মীরা এগোনোর চেষ্টা করলে তাঁদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।

সেখানেও বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ব্যারিকেড ভাঙ্গার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এসময় উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ারও ঘটনা ঘটে। নারী কর্মীদের সড়কে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তখন ৬ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। 

পুলিশ ও বামজোটের সংঘর্ষের ঘটনায় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পথচারীরা এদিক সেদিক ছোটাছুটি শুরু করে। পল্টন, সচিবালয়, প্রেসক্লাব, মৎসভবন এলাকায় যানযট দেখা দেয়। এসময় যানবাহনগুলোকে পুলিশ বিকল্পপথে ঘুরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

বেধড়ক লাঠিপেটায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন,‘আমরা চার-পাঁচ জনকে আটক করেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে সংঘর্ষে পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান। আহত দুই পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, মৎস্য ভবন এলাকায় বাম জোট কর্মীদের থামাতে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। ব্যারিকেড ভেঙে নেতাকর্মীরা এগোতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ সময় বাম নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায় বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল্লাহেল কাফি সাংবাদিকদের জানান, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। এতে তাদের নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন। হামলা চালিয়ে ভোট ডাকাতি রক্ষা করা যাবে না। তিনি আরও জানান, সরকারের বিরুদ্ধে অব্যাহত লড়াই সংগ্রামের জন্য ও বিপ্লবকে সফল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ (মার্ক্সবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনসহ মোট ৮ দল সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কর্মসূচি ছিল পূর্ব নির্ধারিত। সেটা আগে থেকেই গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছিল। আমরা যাতে কর্মসূচি পালন না করতে পারি এজন্য আগে থেকেই পুলিশ প্রেসক্লাবে অবস্থান গ্রহণ করে। এরপর পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে। আমাকেও তারা আহত করেছেন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কর্মী রাশেদুল হক বলেন, আমাদের কর্মসূচি ছিল সম্পন্ন শান্তিপূর্ণ। কিন্তু, পুলিশি হামলায় তা পণ্ড হয়ে গেছে। দলের সাধারণ সম্পাদক গুরুত্বর আহত হয়েছেন। হাসপাতালের কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন।

এদিকে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকেছে গণতান্ত্রিক বাম জোট।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে এ দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করছে বামজোট।

এমজে/