নাইকো চুক্তিতে দুর্নীতি হয়নি, রায় গোপন করতে চাপ দিয়েছে আ'লীগ সরকার: বিএনপি

নাইকো চুক্তিতে দুর্নীতি হয়নি, রায় গোপন করতে চাপ দিয়েছে আ'লীগ সরকার: বিএনপি

নাইকো চুক্তিতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্দোষ বলে রায় দিয়েছে কানাডার আন্তর্জাতিক সালিসি ট্রাইব্যুনাল। রায়ের বিষয়টি যেন জনসম্মুখে প্রকাশ না করা হয় সেজন্য আওয়ামী লীগ সরকার চাপ দিয়েছে।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, মাগুরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত কবীর মুরাদের স্মরণে এ নাগরিক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।

মির্জা আলমগীর বলেন, ‘নাইকো চুক্তিতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। এই মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্দোষ বলে রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক সালিসি ট্রাইব্যুনাল। অন্যান্য যাদের জড়িত করা হয়েছে তারাও নির্দোষ।’

তিন সদস্যের আইসিএসআইডির সালিসি ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা হলেন- মাইকেল ই. স্নাইডার (ট্রাইব্যুনালের সভাপতি, উভয় পক্ষের নিয়োগ), প্রফেসর ক্যাম্পবেল ম্যাকলাহান কিউসি (বাংলাদেশ পক্ষের নিয়োগ) এবং প্রফেসর য়ান পলসন (নাইকো পক্ষের নিয়োগ)।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নাইকো মামলার মূল মামলা যেটা আন্তর্জাতিক আদালত হয়েছে তা গোপন করে সরকার এ মামলা করেছে। এ মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে অলরেডি রায় হয়েছে। এই মামলার রায়ে বলা হয়েছে, নাইকো চুক্তিতে কোনো ধরনের কোনো রকম দুর্নীতি হয়নি এবং খালেদা জিয়াসহ অন্যায়ভাবে যাদের এ মামলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল তারা সম্পূর্ণ নির্দোষ।’

তিনি বলেন, ‘আপনাদের আমি অনুরোধ করব এই বিষয়টা সবাই একটু জানার চেষ্টা করবেন। আমি ছোট্ট করে একটু বলতে চাই, এখানে বলা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিষয়টি যেন জনসম্মুখে প্রকাশ না করা হয়। এজন্য ইন্টারন্যাশনাল সেন্ট্রাল ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্টসকে চাপ দিয়েছে সরকার, যেন বেগম জিয়াকে নির্দোষ বলে রায় দেওয়া হয়েছে এটা প্রকাশ করা না হয়।’

মির্জা আলমগীর আরো বলেন, ‘এই মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে যারা বিচারক ছিলেন তারা সবাই বিদেশি। আমাদের সরকারও সেখানে ছিল, তারা অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিল। শুনানির শেষে তারা বলেছেন, নাইকো সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত এবং বেগম খালেদা জিয়ার এখানে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই এবং এখানে যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের দুর্নীতির কোনো প্রমাণ তারা করতে পারেনি। এই ধরনের যতগুলো মামলা দেওয়া হয়েছে এই সবগুলো মামলা মিথ্যা মামলা। তারেক রহমানকে যে সকল মামলায় জড়ানো হয়েছে, তার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকার দীর্ঘ সময় ধরে বলে আসছেন তারেক রহমান এ সকল দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। অথচ আজ পর্যন্ত তারা একটিরও প্রমাণ করতে পারেনি। এবং একটি মামলায় মামলার বিচারক তাকে নির্দোষ বলে রায় দেওয়ার কারণে ওই বিচারককে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে।’

সরকার বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ তার করায়ত্ত করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য ও সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সরকার এই বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে। আজকে বাংলাদেশ বলতে যে রাষ্ট্র এই রাষ্ট্রে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে ফেলা হয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজকে প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদেরকে ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড যদি দেখেন তবে লক্ষ্য করবেন সবচেয়ে নিম্নমানের লোকজনগুলোকে নিয়ে আসে শুধু মাত্র রাজনৈতিক কারণে ভিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাস কোর্স, থার্ড ক্লাস এ সকল লোকজনকে নিয়ে এসে ভাইস-চ্যান্সেলর বানানো হচ্ছে এবং রাজনৈতিক ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে এখন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়, বিসিএসে রিক্রুটমেন্ট করা হয়। এভাবে সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা তাদের নিজেদের আয়ত্তে আনার জন্য দলীয়করণ করছে।’

দেশের অর্থনীতি প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘সরকার বাইরে থেকে ঢোল বাজায় উন্নয়ন উন্নয়ন কিন্তু ভেতর একদম ফাঁকা। এই রাষ্ট্রকে পরিপূর্ণভাবে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আওয়ামী লীগ চূড়ান্ত করে ফেলেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন এসেছে অনেকেই প্রশ্ন করছেন বিগত নির্বাচনে এই অবস্থার পরেও আপনারা নির্বাচনে গেছেন কেন? আমরা বলেছি নির্বাচনকে আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। আমরা একটি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি হিসেবে এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে যেতে চাই। আমাদের নির্বাচনে যেতে হবে ও নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জনগণের কাছে যাব এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়েই এই সরকারকে আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরাজিত করব। এটাই আমাদের কাজ, এ কাজটি আমরা করতে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা সফল হবো। কারণ জনগণের যে শক্তি সেই শক্তির কাছে সকল অপশক্তি পরাজিত হয়।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার শুধু মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে ওটা তাদের সবচাইতে বড় ফটোটা দিয়ে তারা টিকে আছে এই পর্যন্ত। কিন্তু ওই মুক্তিযুদ্ধের সব কিছুকে তারা ধ্বংস করেছে। তারা সংবিধানকে ধ্বংস করেছে এবং বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার সকল আয়োজন করেছে। আপনার দেখবেন এখানে এক ব্যক্তি হয়ে যাচ্ছে, একটি পরিবার হয়ে যাচ্ছে। মোটকথা পরিবারতন্ত্র চলছে এখন।’

তিনি আরো বলেন, ‘এটা আপনারা লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন মনোনয়ন কাদের দেওয়া হয় এবং সংগঠনগুলোর দলীয় প্রধান কাদের বানানো হয়। আমি শুধু আপনাদের একটি কথা বলতে চাই, এই সংলাপ এই লড়াই ছোটখাটো কোনো লড়াই না। এই লড়াইয়ে সবাই অংশ নিতে হবে। প্রত্যেকে অংশ নিয়ে প্রত্যেকের মধ্যে মুক্তির একটি বাসনা নিয়ে আমাদের এদের পরাজিত করতে হবে। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাই এবং এই ভয়াবহতা নিয়ে সরকার তার পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।’

জিয়া পরিষদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম সলিমুল্লাহ খান এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও শামছুজ্জামান দুদু।