রায় খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অন্তরায় হবে কিনা দেখছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

রায় খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অন্তরায় হবে কিনা দেখছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রায় ও কারাগারে যাবার বিষয়টি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলকে অবহিত করেছে বিএনপি।

বুধবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের পর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের একথা জানান।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, দেশনেত্রীর হয়রানিমূলক মামলার রায় এবং বর্তমানে গণতন্ত্রের যে অবস্থা রয়েছে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার রায়ের বিষয়টি আমরা তাদেরকে অবহিত করেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই রায়টি আগামী নির্বাচনে অন্তরায় হবে কিনা সেই বিষয়টা তারা দেখছেন। মির্জা আলমগীর আরো বলেন, একটা জিনিস আপনাদেরকে বুঝতে হবে বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশ আইন, আইনের শাসন, বিচার, বিচার বিভাগ ও রায় এগুলোর বিষয়ে নিজস্ব নর্মস-ভ্যালু পোষণ করে।

তাদের পক্ষে বাংলাদেশের বিষয়গুলো বুঝতে কষ্ট হয়। বেগ পেতে হয়। তাদের যে কালচার আর আমাদের দেশের যে অবস্থা তারা তা মেলাতে পারে না। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। এ কারণে হয়তো বা তারা দেখছে, বলছে আমরা অবজার্ভ করছি।

মির্জা আলমগীর বলেন, অবজারভার পাঠানোর জন্য নির্বাচন কমিশন তাদেরকে চিঠি দিয়েছেন, তারা পাঠাবেন কি পাঠাবেন না- প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন না হলে সাধারণ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক তারা পাঠান না। গতবার (দশম সংসদ নির্বাচন) তারা পাঠাননি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই বিষয়গুলো খুব পরিষ্কার যে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে পরেও গোটা বিশ্বের যে প্রতিক্রিয়া ছিল, তারা বলেছে যে, একটা ফ্রড ইলেকশন হয়েছে এবং নির্বাচনটা গ্রহণযোগ্য নয়। এখনো তারা আশা করে যে, ইনক্লুসিভ ইলেকশন হবে। সেজন্য তারা কাজ করছে। নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে তারা কথা-বার্তা বলছেন।

মির্জা আলমগীর বলেন, তারা বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। সব দল অংশ নিক এটা তারা চায়। ভোটাররা যাতে ভোট দিতে পারে, তাদের মতামত যেন প্রকাশ করতে পারে সে বিষয়টা সম্পর্কে পরিস্কার করে তারা বলেছে।

বিএনপি মহাসচিব আরেক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই। সম্ভবত আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে।

দলীয় সূত্রে জানায়, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী লিফলেট বিতরণ, গণস্বাক্ষর, মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদানসহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। এর আগে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশ করেন ইইউ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিটে শুরু হয়ে প্রায় একঘণ্টা চলে এ বৈঠক। সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে ইইউ সদস্যরা গুলশান কার্যালয় ত্যাগ করেন।
ইইউ প্রতিনিধিদলে ছিলেন- বাংলাদেশ সফররত দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান জিন ল্যামবার্ট, জেমস নিকলসন রিচার্ড করবেট, ওয়াজিদ খান ও সাজ্জাদ করিম। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, আবদুল কাইয়ুম, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার বিকালে বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিদেশি কূটনৈতিকদের সঙ্গে ব্রিফ করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সেখানেও দলীয় চেয়ারপারসনের হয়রানিমূলক সাজা ও সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়ে তাদের অবহিত করা হয়।

উল্লেখ্য, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার বৈঠক করেন ইইউ প্রতিনিধি দল। এ সময় ইইউ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সিইসির কাছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কিনা জানতে চান।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০৪৭ঘ.)