‘‌‌সোনার খনির’ মালিক আওয়ামী লীগ নেতা এনু-রুপন গ্রেফতার

‘‌‌সোনার খনির’ মালিক আওয়ামী লীগ নেতা এনু-রুপন গ্রেফতার

গত বছর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর আলোচনায় আসেন ক্যাসিনো কারবারি দুই ভাই এনামুল হক এনু ও রূপন ভূঁইয়া। যদিও শুরু থেকেই তারা পলাতক ছিলেন।অবশেষে তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সোমবার সকালে রাজধানীতে পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেফতারের কথা জানিয়েছেন সিআইডির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন।

এনামুল হক এনু পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তার ভাই রুপন ভূঁইয়া একই কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। এই দুই ভাইয়ের আরেক পরিচয় রয়েছে। তারা কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ ওরফে ক্যাসিনো সাঈদের ব্যবসায়িক পার্টনার। ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনোর অংশীদার। থানা পর্যায়ের আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার টাকা রাখার জায়গা নেই।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় তাদের টাকায় ঠাসা একে একে পাঁচটি ভল্ট খুঁজে পেয়েছিল র‌্যাব। আরও একটি ভল্টে মিলেছিল স্বর্ণালঙ্কার। অত্যাধুনিক অস্ত্র আর গোলাবারুদও উদ্ধার হয় তাদের বাসা থেকে। শুধু তা-ই নয়, র‌্যাব ঢাকাতেই এনামুলের ১৫টি বাড়ির সন্ধান পায়। এনামুলের আরও অন্তত ৩০টি বাড়ি রয়েছে বলে তাদের কাছে সংবাদ রয়েছে।

সে সময় অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাব কর্মকর্তারা টাকা, অস্ত্র আর স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারের পর হতবাক হয়ে পড়েন। হতবাক স্থানীয়রাও। তাদের কেউ কেউ বলেন, তারা দুই ভাই তো দেখি 'সোনার খনির' মালিক! স্থানীয়রা বলেন, আগে এই দুই ভাই ক্যাসিনোর খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা নিজেরাই মালিক বনে যান ক্যাসিনোর। যেন আলাদিনের চেরাগ চলে আসে হাতে। মাত্র তিন বছরেই হু হু করে বাড়তে থাকে তাদের বিত্তবৈভব। ঢাকায় একে একে বাড়ি কিনতে থাকেন তারা। আজ সিঙ্গাপুর তো কাল ব্যাংকক। রাতারাতি ভাগ্যের পরিবর্তনের বিষয়টি এলাকার মানুষের চোখ এড়ায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে সূত্রাপুরের বানিয়ানগরে তাদের বাড়িতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে তিনটি ভল্টে খুঁজে পায় ১ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ৭২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। ছয়তলা ওই বাড়িতে অভিযান শেষে নারিন্দার লালমোহন সাহা স্ট্রিটে এনামুলের কর্মচারী আবুল কালাম কালু এবং শরৎগুপ্ত রোডে তার বন্ধু হারুনুর রশীদের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় আরও দুটি ভল্ট থেকে মোট ৪ কোটি টাকা জব্দ করা হয়। এসব টাকা ক্যাসিনোর বলে র‌্যাবের ধারণা। র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেন, টাকা রাখার যায়গা না পেয়ে এ দুই ভাই সোনা কিনে রাখেন।

গত সেপটেম্বরে অভিযানের সময় র‌্যাব জানায়, রাজধানীতে এনামুলের অন্তত ১৫টি বাসার সন্ধান পেয়েছেন তারা। তবে ওয়ারী, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, বংশাল, কোতোয়ালি এলাকায় এনামুল ও রুপনের আরও ৩০টি বাড়ি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। সপ্তাহখানেক আগে কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদের সঙ্গে সিঙ্গাপুর হয়ে থাইল্যান্ড গেছেন এনামুল। তিনি সাঈদের ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি ও বাড়ি দখল সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য। তিন-চার বছর আগে তারা হঠাৎ করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি কেনা শুরু করেন।

সূত্রাপুরের বাড়িটি দেড় বছর আগে হারুনুর রশীদ নামে একজনের কাছ থেকে তারা কিনেছেন। সূত্রাপুরের এ বাড়িতে অভিযান শেষে এনামুলের বাকি দুটি ভল্টের সন্ধানে আরো দুটি বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। এনামুলের কর্মচারী আবুল কালাম ওরফে কালুর নারিন্দার ৮৩/১ লালমোহন দাস লেনের চতুর্থ তলার বাসা থেকে একটি ভল্ট জব্দ করা হয়। ওই ভল্ট খুলে পাওয়া যায় আরও দুই কোটি টাকা। ওই বাসার আলমারিতে রাখা একটি ব্যাগের ভিতর থেকে একটি পিস্তল ও ১৮ রাউন্ড গুলিও জব্দ করা হয়। এরপর এনামুলের বন্ধু হারুনুর রশিদের ২২/১ শরৎগুপ্ত রোডের তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে জব্দ করা হয় আরেকটি ভল্ট। এখানে পাওয়া যায় আরও ২ কোটি টাকা।

এনামুলের কর্মচারী কালামের স্ত্রী শিলা রহমান জানান, তার স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা এনামুলের বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন সাইট তদারক করেন। টাকার ভোল্ট সম্পর্কে তিনি দাবি করেন, এনামুলের বডিগার্ড পাভেল এসে একটি ব্যাগ এবং ভল্টটি রেখে যান। অন্যদিকে, এনামুলের বন্ধু হারুনের স্ত্রী লিপি দাবি করেন, দুজন লোক এসে তাদের বাসায় ওই ভল্ট রেখে যান। ভিতরে কী ছিল তা তারা জানতেন না।

স্থানীয়রা জানান, ওয়ারী, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, বংশাল, কোতোয়ালি থানা এলাকায় এনামুল ও রুপনের অসংখ্য বাড়ি থাকলেও তারা মূলত কোন বাড়িতে থাকতেন তা কেউ জানে না। তারা যেসব বাড়ির মালিকানা দাবি করেন, সেগুলো কেনার নাম করে অল্প কিছু টাকায় বাড়ির মালিকের কাছ থেকে বায়না করতেন। এরপর অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বিনা টাকায় পুরো বাড়ি দখল করে নিতেন। যেসব বাড়ি কাগজপত্রে ঝামেলাপূর্ণ মনে করতেন, সেসব বাড়ি তারা টার্গেট করতেন।