খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে রাজধানীতে বিএনপির বিক্ষোভ

খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে রাজধানীতে বিএনপির বিক্ষোভ

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় মিছিলটি রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার থেকে শুরু হয়ে বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মিছিলে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।

মিছিলে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান দেন। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে রাজপথ।

মিছিল শেষে পথসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশে এখন গুণী, সম্মানীয় ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিদের মানসম্মান ধুলোয় লুটোপুটি খাচ্ছে। দেশজুড়ে চলছে তুঘলকী শাসন। ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’– এটি তোয়াক্কা না করে বরং এখন দেশে চলছে এক ব্যক্তির চোখরাঙানির শাসন। এ জন্যই আমরা দেখছি দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী যিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ অথচ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে।

বিচারপতি সিনহাকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রীর বিষোদগারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশের প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এই সাবেক প্রধান বিচারপতির একটি রায় আওয়ামী সরকারের বিপক্ষে ছিল বলেই আওয়ামী সরকার তার প্রতি ক্ষুব্ধ হওয়ার অংশ হিসেবে সম্প্রতি একজন মন্ত্রী তাকে নিয়ে যে অশালীন ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে এটি প্রমাণ হয়েছে যে, দেশের বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সর্বক্ষেত্রে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চায় সরকার।

বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রাখার প্রতিবাদ জানিয়ে রিজভী বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই বলেই তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, যিনি বারবার হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রকে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে স্বৈরশাহীর কবল থেকে উদ্ধার করেছেন, যিনি গণমানুষের সর্বাধিক প্রাণপ্রিয় নেত্রী সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারাবন্দি করে রেখেছে প্রতিহিংসাপরায়ণ বর্তমান সরকারপ্রধান। বিনাভোটে জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ভালোভাবেই জানে যে, এবার ক্ষমতা হারালে জনগণের ওপর নির্বিচারে চলা জুলুম-নির্যাতনের ন্যায্য হিস্যা জনগণ আদায় করে ছাড়বে। আর এই উপলব্ধি থেকেই গদি হারানোর ভয়ে পথ নিষ্কণ্টক করতে এবং জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিতে আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রনায়ক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর বেগম খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে-যাতে জনগণের ভোট ও নির্বাচনের অধিকার নিয়ে কেউ প্রতিবাদী হতে সাহস না পায়।

বেগম খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতিশীল হচ্ছে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও বেগম জিয়ার প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ সরকার ও সরকারপ্রধানের নিষ্ঠুর আচরণ যেন থামছেই না। দেশনেত্রীকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে সরকার। খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকারের এ ধরনের অমানবিক আচরণের লক্ষ্য একটিই- তা হলো তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিতে পারলেই ক্ষমতার মসনদ হারানোর কোনো ভয় থাকবে না। কিন্তু দেশের একজন জনপ্রিয় নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সরকারের এ নজিরবিহীন হিংসাশ্রয়ী নিষ্ঠুর আচরণে সারা দেশের মানুষের ক্ষোভ এখন তরঙ্গায়িত হয়ে উত্তাল ঢেউয়ে রূপান্তরিত হচ্ছে। দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ স্বৈরশাহীর লাল দেয়ালের লৌহ কপাট ভেঙে গণতন্ত্রের বলিষ্ঠ সিপাহসালার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমি আবারও অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং তাকে তার পছন্দের হাসপাতালে সুচিকিৎসার সুযোগ দানের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি কারাবন্দি সব নেতাকর্মীরও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

এমজে/