‘সহিংসতা হলে দাঁতভাঙা জবাব’

‘সহিংসতা হলে দাঁতভাঙা জবাব’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ কোনো সমাবেশে আমরা বাধা দেব না। যদি সেখানে সহিংসতার উপাদান যুক্ত হয় আন্দোলন, সমাবেশ, বিক্ষোভের মাধ্যমে তাহলে সেটার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।’

শনিবার বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগরের অন্তর্গত দলীয় সংসদ সদস্য এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী মেয়রদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শেষে
তিনি এসব কথা বলেন।

আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি আহ্বান করেছে, এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, শান্তিপূর্ণ কোনো সমাবেশে আমরা বাধা দেব না। যদি সেখানে সহিংসতার উপাদান যুক্ত হয়; আন্দোলন, সমাবেশ, বিক্ষোভের মাধ্যমে তাহলে সেটার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আন্দোলন তারা করে করুক। তারা কার বিরুদ্ধে আন্দোলনটা করছে? আমি নীতিগত প্রশ্ন করছি, যাদের বিবেক আছে তাদের কাছে বিষয়টা আমি আপিল করছি, আন্দোলনটা তারা কার বিরুদ্ধে করছে? বেগম জিয়াকে তো সরকার কারান্তরীণ করেনি? বেগম জিয়াকে এই সরকার মামলাও দেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলা হয়েছে। এই মামলার বিচারও হচ্ছে উচ্চ আদালতে। সরকার যদি রাজনৈতিক কারণে তাকে জেলে দিত? এটা রাজনৈতিক মামলা নয়, এটা করাপশনের মামলা। এই মামলাটা সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার করেছে। রাজনৈতিক কারণে সরকার যদি বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করত তাহলে রাজনৈতিক কারণে মুক্তি দেওয়ার প্রশ্ন আসতে পারত। কিন্তু এটা রাজনৈতিক কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি কাজেই সরকারের রাজনৈতিক বিবেচনা করার এখানে কোনো সুযোগ নেই।’

‘তারা যদি মনে করেন, আন্দোলন করে সরকারকে বাধ্য করবেন বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে? তাহলে তারা বাধ্য করতে পারে আদালতকে এবং সেটা কতটা সমীচীন ও যুক্তিযুক্ত বিচার ব্যবস্থার দিক থেকে? আদালতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, আন্দোলন ঘোষণা করা তারা কেন করছে? এটা কোন গণতন্ত্র? আমি ড. কামাল হোসেনকে জিজ্ঞাসা করতে চাই?

খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অজুহাতে আগামী দিনে কোনো রকম সহিংসতার চেষ্টা করা হলে কঠোরভাবে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে’-বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন কাদের।

তিনি বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘তারা আন্দোলনের ডাক দিতে পারেন। আমরাও বলছি তারা রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, তারা আন্দোলন করতে চান করবেন; সরকার হিসাবে আমাদের জনগণের জানমাল রক্ষার দায়দায়িত্ব আছে।’

‘রাজনৈতিকভাবে যদি কোনো আন্দোলন হয়, আমরা সেটা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবো কিন্তু আন্দোলনের নামে যদি সহিংসতা, ভায়োলেন্সের উপাদান যুক্ত হয়; যেটা তারা বারবার করে আসছে, আদালত প্রাঙ্গণকেও তারা কলুষিত করেছে, সেরকম কোনো আন্দোলন যদি তারা করতে চান সেটা কিন্তু মোকাবিলা করে দাঁতভাঙা জবাব দেব।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট জালিয়াতির কোনো সুযোগ ছিল না। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। ছোট খাটো ভুল-ত্রুটি বাদ দিলে নির্বাচনটি একটি ভালো নির্বাচন হয়েছে। যারা পর্যবেক্ষক ছিল তারাও কিন্তু বিরূপ মন্তব্য করেনি একমাত্র বিএনপি ছাড়া। বিএনপি বিষোদগার করছে কারণ তারা হেরে গেছে। তাদের বিষোদগার এত বেড়ে গেছে যে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। তাদের আন্দোলনের হুমকি দেখে আমরা অভ্যস্ত। এগুলা আমরা বারবার শুনে আসি।’

বিএনপির নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘তাদের ভোটার কোথায় ছিল নির্বাচনের দিন? নির্বাচনের আগে দুই সিটির মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে যে জমায়েত, মিছিল আপনারা করেছেন, তাদের এজেন্ট পর্যন্ত কেন্দ্রে আসেনি। তাহলে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিল কিভাবে? ভোট পাহারার লোকজন কই? তাদের যে ভোট সেটা কেন পড়লো না? সেই ভোট কেন তারা দিল না, বাধা কোথায় পেয়েছে? আমি তো মনে করি যে নির্বাচন হয়েছে এটা অনেক স্বস্তিদায়ক।’

ঢাকার দুই সিটির নবনির্বাচিত মেয়র ও ঢাকা মহানগরের দলীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে মতবিনিময় সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরে কাদের বলেন, ‘ঢাকা মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা দেওয়ার পর তাদের পরবর্তী কাজ হবে, তৃণমূল এর মূল পর্যায় থেকে সংগঠন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ এছাড়া তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষের আন্দোলন ঠেকানোর জন্য আমাদের রাজনৈতিকভাবে সংগঠনকে শক্তিশালী করা দরকার। সংগঠনের বিরুদ্ধে, দলের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে আজকে যে ষড়যন্ত্র সেটাও প্রতিরোধ করতে হলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। এই ব্যাপারে আমরা সবাই একমত। এই লক্ষ্যে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেখান থেকে কিছু সিদ্ধান্ত আমরা কার্যনির্বাহী সভায় রিকমেন্ডেশন আকারে পাঠাবো।’

ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটার কম আসা প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘এখানে একটা বিষয় হলো ছুটির কারণে অনেকে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। পরিবহনের একটি বিষয় আছে। আর আমাদের সংগঠনেও দুর্বলতা আছে, যার কারণে ভোটার নিয়ে আসার বিষয়টা যতটা গুরুত্ব দেওয়ার দরকার ছিল তা দেওয়া হয়নি। সবাই ভাবছে ভোটাররা তো আসবেই, তাদের যে নিয়ে আসতে হবে সেখানে কিছুটা কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মুকুল বোস, যুগ্ম সাধাররণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, সদস্য আমিরুল আলম মিলন, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসসহ দলীয় সংসদ সদস্যরা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।