রিজভী রচিত ‘সময়ের স্বরলিপি’ বই প্রকাশ

রিজভী রচিত ‘সময়ের স্বরলিপি’ বই প্রকাশ

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রচিত লেখা ‘সময়ের স্বরলিপি’ বই প্রকাশিত হয়েছে। শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় বইটির পাঠ উন্মোচন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ।

অনুষ্ঠানে সময়ের স্বরলিপি বইটির লেখক রুহুল কবির রিজভী জানান, বইটি বিক্রির মাধ্যমে যে অর্থ আয় হবে তার পুরোটাই তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নামে গড়ে তোলা বেগম খালেদা জিয়া ফাউন্ডেশনে দান করবেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, গাজী মাজহারুল ইসলাম, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল, মীর সরফত আলী সপু, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, মোস্তাক মিয়া, আমিনুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান সুমন সহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বইয়ের পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠানে ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, মাত্র দুই ঘণ্টায় বইটি পড়ে শেষ করেছি। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিক, আমরা ৮৭ বছরের জীবনে এমন জনপ্রিয় রাজনীতিক আমি দেখিনি। বেগম খালেদা জিয়া যাকে আমি এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছি। তার উপস্থিতি হলে আরও আনন্দিত হতাম, দেই দিন খুব শিগগিরই আল্লাহ তাআলা দেবেন বলে আশা করি।

বইটির পর্যালোচনার কথা তুলে ধরে বিশিষ্ট এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, বইয়ের লেখা উপভোগ করেছি আর ভেবেছি, এমন শাণিত লেখনির অধিকারীর লেখা বই এতো দেরিতে পাবো কেনো? এর আগেও তো প্রকাশিত হতে পারতো। রিজভী নিজেই লিখেছন, ছাত্র জীবন ও রাজনীতির হাতেখড়ি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ১২বার কারাগারে অতিথি হতে হয়েছে। এ সম্পর্কে আমার অনুভব, যে রাজনীতির জন্ম হয়েছে জনকল্যাণের লক্ষ্যে তা যখন কিছু সংখ্যকের নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতা অর্জন ও অর্জিত ক্ষমতাপ্রসূত সুযোগ-সুবিধা উপভোগের জন্য ব্যবহৃত হয়, তখন কিছু সংখ্যক প্রাজ্ঞ ও নীতি নিষ্ট নাগরিককে কারাগারে যেতে হয়। রাজনীতিকে নতুনভাবে জনকল্যাণমুখী করার লক্ষ্যে।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে রিজভীর যে পর্যালোচনা তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। তার কথায়, প্রেসিডেন্ট জিয়া ছাত্র সমাজকে তারুণ্যজনিত অদম্য শক্তিকে দেশীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে দেশ গঠনের কাজে নিয়োজিত করতে চেয়েছিলেন। কেননা সুশিক্ষা জাতীয় ঐক্য আনে, উৎপাদন বাড়ায় এবং ব্যক্তিগত সামাজিক উন্নতির নিশ্চয়তা দেয়। এই প্রবন্ধে শহীদ জিয়া একজন রাষ্ট্রনায়ক।

এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, রিজভী আহমেদ সুস্পষ্টভাবে লিখেছেন, আমাদের জাতীয় ইতিহাসের প্রতি পটে জাতীয় নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রনায়কের সকল উপাদানের উপস্থিতি দেখা যায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মধ্যে। বীরত্ব, দেশপ্রেম, বলিষ্ঠতা, বাস্তব কাণ্ডজ্ঞান, দূরদর্শিতা, প্রশ্নাতিত সততা, ধৈর্য্য ও সহনশীলতার বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। আসলে লেখক সঠিক বলেছেন। রাজনীতিকরা ক্ষমতার অন্ধকার গুহায় বন্দি হয়ে শুধুমাত্র ক্ষমতাপ্রসূত সুবিধার দিকে দৃষ্টি রাখেন, ক্ষমতাবৃদ্ধিতে খুশি হন। রাষ্ট্রনায়ক ক্ষমতাকে সমাজের কল্যাণমুখী কর্মসূচির মাধ্যম রূপে দেখে থাকে। তাই সেক্ষেত্রে রাজনীতিক চান ক্ষমতাকেন্দ্রীকরণ, রাষ্ট্রনায়ক চান ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চান। রাজনীতিকরা জনগণকে তাদের ক্ষমতা লাভের সোপান হিসেবে ব্যবহারে সন্তুষ্ট, রাষ্ট্রনায়ক কিন্তু রাষ্ট্রীয় তাদেরকে ক্ষমতার অংশীদার করতে চান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ভিসি বলেন, রিজভী সত্যই বলেছেন, রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ- আইন বিভাগ, নির্বাহী এবং বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে বর্তমান স্বৈরশাসনের সরকার। এই অবস্থায় দেশবাসীর একমাত্র ভরসা চতুর্থ স্তম্ভ দেশের সাংবাদিক সমাজ। তারাই এই সমাজকে টিকিয়ে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, লেখক রিজভী আহমেদের রাজনৈতিক সমস্যার পর্যালোচনার স্টাইল চমৎকার। লেখায় তিনি কোন প্রতিপক্ষ বাছাই করে তীব্র সমালোচনায় তাকে ঘায়েল করার মানসিকতা নেই। জাতীয় সমস্যাগুলোকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরার দক্ষতা প্রশংসনীয়। কোন কোন ক্ষেত্রে পরামর্শ দিয়েছেন তাও অভিনন্দন যোগ্য। তার মত তরুণ এদেশে যদি সচেতন দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে জাতীয় সমস্যা সম্পর্কে চিন্তা করতেন তাহলে আমরা অনেক বেশি আস্থাশীল হতে পারতাম। আমি আশা করবো রিজভী আহমেদের সময়ের স্বরলিপি বইটি তরুণদের পাঠ্যসূচিতে পরিণত হবে এবং রিজভী ব্যস্ততার মধ্যে রাজনীতির সমস্যা সম্পর্কে লিখবেন।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, এই দলের জন্য রিজভীর যে অবদান, যে ত্যাগ এটা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দিনের পর দিন এই দলীয় কার্যালয়ে রিজভী দিন কাটায়। রিজভী আহমেদ এবং দল একেবারে মিশে গেছে তার রক্তের ধমণীতে। শত অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন, জেল-জুলুমের মধ্যেও মাঝে মাঝে রিজভীকে দেখি বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য রাস্তায় নেমে মিছিল করছে। যেটা আমরা অনেকের মধ্যে দেখিনা। যাদের এটা করার কথা তাদের এটা করতে দেখিনা। রিজভী কতদিক সামলাবে। দল পাহাড়া দিচ্ছে, আবার রাস্তায় নেমে মিছিল করছে।

বইটির বিষয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, সময়ের স্বরলিপি বই লেখার জন্য আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই। যিনি দিনরাত এখানে থাকে, অসংখ্য নেতাকর্মীরা আসে, এর মধ্যে সময় বের করে বইটি লিখেছে। দলের একজন অত্যন্ত প্রতিভাবান, একাডেমিক ও রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডসহ সবকিছু নিয়ে যদি মূল্যায়ণ করি সে আমাদের দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, আমরা রিজভীর এই ত্যাগ ও অবদান এ দলের কোন নেতাকর্মী কোনদিন ভুলে যাবে না।

দলের নেতাকর্মীদের বই বড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের রিডিং কমিউনিটি খুব কম, পড়ার লোক খুব কম। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, আমেরিকার পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম রিডিং কমিউনিটি। সেখানকার মানুষ পড়ে। দলের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সকলেই যেনো সময়ের স্বরলিপি পড়েন। তার লেখার মধ্যে দর্শন আছে।

এমজে/