‘সরকার মুজিববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত, করোনাভাইরাস নিয়ে উদাসীন’

‘সরকার মুজিববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত, করোনাভাইরাস নিয়ে উদাসীন’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সরকার মুজিববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত। তারা করোনাভাইরাস নিয়ে উদাসীন। তাই তো করোনা মোকাবেলায় এখনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ‘করোনাভাইরাস: বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশ পরিস্থিতি’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক কর্মশালা ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব।

মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার গত বছরের ডেঙ্গুর ব্যাপারে সঠিক তথ্য দেয়নি। তেমনি করোনা নিয়েও সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে তিনজন আক্রান্ত। কিন্তু আমরা পত্রপত্রিকায় দেখছি তিনজন নয়, আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।

সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জনগণকে সচেতন করা উচিত। ডাক্তার-নার্সরা করোনা রোগীর কাছে যে যাবে তার কোনো ব্যবস্থা নেই। সবার নজর দেয়া উচিত করোনাভাইরাস মোকাবেলার প্রতি।

তিনি বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে জল ও স্থলবন্দরগুলোতে যে প্রিভেনটিভ ম্যাটার সরকার তা করছে না, করতে পারছে না। ইতোমধ্যে ১২১টা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটাকে মহামারী ঘোষণা করেছে। করোনার এখনও কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। বাংলাদেশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে আছে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমার পরিচিত একজন বিদেশ থেকে এসেছেন, তাকে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি বিমানবন্দরে। আমি নিজেও দেখেছি কাউকে কোনো পরীক্ষা করা হচ্ছে না। নদী ও সমুদ্রবন্দরগুলোতেও স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। অথচ সরকার বলছে আতঙ্কের কিছু নেই। কিন্তু বিশেষ কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থাই নেই।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. একেএম আমিনুল হক। ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আবদুস সালামের পরিচালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি ডা. আবদুস সেলিম, কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে ড্যাবের মহাসচিব আবদুস সালাম করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন।

প্রস্তাবগুলো হল- এক. করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কমিটিতে মন্ত্রী, এমপি ও বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দলমত নির্বিশেষে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের যেমন প্রকৌশলী, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিক ইত্যাদি ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করা হোক। একইভাবে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটিগুলোতেও সমাজের বিভিন্ন স্তরের ও বিভিন্ন পেশার মানুষদের একীভূত করা হোক।

দুই. দেশের অভ্যন্তরে করোনাভাইরাসের অনাকাক্সিক্ষত অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কার্যকরী স্ক্রিনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বিস্তারিতভাবে দেশের জনগণকে অবহিত করা হোক।

তিন. যথাযথ চিকিৎসা দেয়ার লক্ষ্যে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতি সম্পর্কে অনতিবিলম্বে জনগণকে অবহিত করা হোক। সে ক্ষেত্রে কোথাও কোনো দুর্বলতা বা ব্যত্যয় জনগণের কাছে পরিলক্ষিত হলে এখন প্রস্তুতিপর্বেই সেগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

চার. করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেকে ও চার পাশের মানুষকে মুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে অবহিত করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি অনতিবিলম্বে শুরু করতে হবে।

পাঁচ. করোনা আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী চিকিৎসক ও নার্সদের প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্টের অস্থিত্ব আমাদের দেশে দৃশ্যমান নয়। যা সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী তা জনগণকে জানানো উচিত।