করোনা মোকাবিলায় এক হয়ে কাজ করার আহ্বান বিএনপির

করোনা মোকাবিলায় এক হয়ে কাজ করার আহ্বান বিএনপির

আতঙ্ক না ছড়িয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দলমত নির্বিশেষে সকলকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে আমরা মনে করি যে, করোনাভাইরাস একটা জাতীয় ও বৈশ্বিক বিপর্য্য়য়। সেজন্য দলমত ও জাতি-ধর্ম নির্বিশেষ সকল মানুষের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি- আসুন, আতঙ্কগ্রস্থ না হয়ে আমরা সবাই মিলে এটা মোকাবিলা করি।’

‘মোকাবিলা করতে গিয়ে আমাদের যা যা করা দরকার, সেগুলো আমরা যেন করি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে এই বৈশ্বিক বিপর্যয়কে মোকাবিলা করতে হবে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘‘লিফলেটে আমাদের বক্তব্যে যেভাবে বলা হয়েছে জনসমাগম থেকে দূরে থাকা, স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া, মানুষদের সচেতন করে তোলা- বিশেষ করে যারা গ্রামে আছেন, তাদেরকে দলের পক্ষ থেকে বলছি আমরা, ‘আপনারা বাড়িতে থাকুন।’ সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা উচিত- ‘তোমরা হোম কোয়ারেনটাইনে চলে যাও।”

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি অনুরোধ জানাব, দয়া করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়াবেন না। মানুষের এই দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন।’

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের প্রাক-প্রস্তুতি ছিল না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের ইচ্ছাকৃত উদাসীনতা এর জন্য দায়ী। করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট, চিকিৎসকদের বিশেষ পোশাক সরবারহ, তাদের প্রশিক্ষণসহ এই রোগের আক্রান্তদের স্বাস্থ্য সেবার বিষয়ে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

প্রান্তিক-নিম্ন আয়ের মানুষদের ভাতা প্রদানের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। দেশে এ পর্যন্ত দুজন মারা গেছেন, ২৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এতে গোটা শহর খালি হয়ে গেছে। আমি আজ বেরিয়েছিলাম গ্রিণ রোড, ধানমন্ডি এলাকায়। সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা— যারা রিকশা চালায়, যারা সিএনজি চালায়, নির্মাণ শ্রমিক যারা।’

আমরা আরও আশঙ্কা করছি যে, ‘গার্মেন্টসের যে ডিমান্ড বিদেশে থেকে আসে- এরই মধ্যে সেই চাহিদা বাতিল হয়ে গেছে। এতে করে মালিকেরা ভয়াবহ দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন যে, শ্রমিকদের বেতন কীভাবে দেবেন। আমরা মনে করি দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের সরকারের তরফ থেকে ভাতা দেওয়া উচিত। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আপদকালীন পারিবারিক ভরণপোষণ ও বিশেষ ভাতা-বিমার ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার যদি এই ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ না করে; আর যদি একমাস এরকম অবস্থা চলে, তাহলে মে বি এ সিচুয়েশন লাইক ফেমিন। কারণ, সাধারণ মানুষ তো খাবার পাবে না। এরপরে দাম বাড়তে শুরু করেছে। চালের দাম তো বেড়ে গেছে, পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’

সরকারের কোনো প্রস্তুতি ছিল না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘চীনে যখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে, তারা যখন জরুরিভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বার বার বলা হচ্ছে- এই বিষয়টি তখনও কিন্তু আমাদের সরকার হালকা করে দেখেছে; হালকা করে কথা বলেছে।’

উপনির্বাচন প্রসঙ্গে

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজ তিনটি আসনে উপনির্বাচন হয়ে গেলো। আমরা এত করে বললাম-নির্বাচনটা বন্ধ করুন। আজ টু পারসেন্ট ভোট কাস্টিং হয়নি। একেবারেই ভোটার নেই। তারপরে আবার আমাদের দলের এজেন্টদেরও বের করে দেওয়া হয়েছে।’

ঢাকা-১০, বাগেরহাট ও গাইবান্ধার অনুষ্ঠিত নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এই কমিশন আসলে একটা ক্লাউনে পরিণত হয়েছে এবং তারা নিজেদের জায়গাটা কোথায়, সাংবিধানিকভাবে তাদের অবস্থানটা কোথায়—সেটাও তারা বোঝে না। আর বোঝে না বলেই তারা এসব কাজ করছে; জাতীয় দুযোর্গের মধ্যে এরকম নির্বাচন করছে।

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরুউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

এমজে/