কারামুক্ত হলেন খালেদা জিয়া

কারামুক্ত হলেন খালেদা জিয়া

সাজানো প্রহসন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় দুই বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর অবশেষে মুক্তি পেলেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া শেষে বুধবার বিকাল ৪টা ১২ মিনিটে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল প্রিজন সেল থেকে বের হন।

বিএনপি'র চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রিজন সেল থেকে মুক্তি দেয়ার পর পরিবারের সদস্যরা এবং বিএনপির মহাসচিব এবং দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তাকে গ্রহণ করেন। সেখান থেকে সরাসরি গুলশানে নিজ বাসভবন ফিরোজায় উঠবেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

খালেদা জিয়াকে ঢাকা মেট্রো-ভ ১১-০৬৯২ নিশান প্রোটোল গাড়িতে নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ পরিবার সদস্যরা বিএসএমএমইউ হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসভবনে রওনা করেন।

এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে একনজর দেখতে এবং শুভেচ্ছা জানাতে দলটির নেতাকর্মীরা ভিড় করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে। করোনা পরিস্থিতিতে জড়ো না হবার জন্য দলের পক্ষ থেকে পূর্বেই আহবান জানানো হলেও তা উপেক্ষা করেই ভীড় করেন হাজারো কর্মী-সমর্থক।

সেখানে তাদের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে দেখা যায় নিরাপত্তাকর্মীদের।

খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বের হবার মুহূর্তে স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে পুরো এলাকা। নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়ে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে স্লোগান দেন।

এর আগে খালেদা জিয়াকে নিতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ পরিবারের সদস্যরা বিএসএমএমইউতে পৌঁছান। সেখানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনসহ নেতাকর্মীরা আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ছয় মাসের জন্য তার সাজা স্থগিত করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তি দেয়ার পর থেকে এই ছয় মাস গণনা শুরু হবে।

দুইটি শর্তে তাকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে আইনমন্ত্রী জানান। সেগুলো হলো, এই সময়ে তাঁর ঢাকায় নিজের বাসায় থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

আইনমন্ত্রী বলেন, ''বেগম খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায়, মানবিক কারণে, সরকার সদয় হয়ে দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।''

এদিকে মঙ্গলবার বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ঘোষণা আসার পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, এতে দল ও নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি বোধ কাজ করছে।

তিনি বলেন, ''সরকারের এই সিদ্ধান্তে দল ও নেতাকর্মীরা যেমন স্বস্তি বোধ করছেন, আবেগ কাজ করছে, পাশাপাশি তাদের মধ্যে একটি আতঙ্কও কাজ করছে এটা ভেবে যে এমন একটা সময়ে তাকে মুক্তির এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, যখন করোনাভাইরাস নিয়ে একটি দুর্যোগ চলছে।''

দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন খালেদা জিয়া। তার মধ্যে গত ১১মাস ধরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

২০০৮ সালে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ মামলা দায়ের হয়।

দশ বছর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে মামলার রায়ে তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়।

তবে পরে হাইকোর্ট সেই সাজা বাড়িয়ে দশ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

এমজে/