দেশে ‘চিকিৎসা জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করুন: তারেক রহমান

দেশে ‘চিকিৎসা জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করুন: তারেক রহমান

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবিলম্বে দেশে ‘চিকিৎসা জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার আহবান জানিয়ে বলেছেন, চলমান সংকট মোকাবেলা একই সঙ্গে তিনি ডাক্তারসহ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের কাজকে অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণা এবং বিশেষ বোনাস প্রদান, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত সংখ্যক সেফটি মেডিক্যাল কিট্স সরবরাহ করে দেশের প্রতিটি উপজেলায় করোনা ভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রবীণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের চিকিৎসা সেবায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ, করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষি শ্রমিক, গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানার শ্রমিক এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে আর্থিক সহায়তার উদ্দেশে দ্রুততার সঙ্গে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং দেশে কমপক্ষে আগামী ছয় মাসের জন্য জাতীয় কিংবা স্থানীয় সকল নির্বাচন স্থগিত করতে হবে।

বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোর রাতে লন্ডন থেকে প্রদত্ত এক ভিডিও বক্তৃতায় তারেক রহমান এ আহবান জানান।

বক্তৃতার শুরুতে তারেক রহমান তাঁর মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির ঘোষণায় শোকরিয়া জানিয়ে বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে এটি অবশ্যই আনন্দ ও স্বস্তির খবর। সন্তান হিসেবে এ জন্য আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই’। তিনি চলমান সঙ্কটকে সবার জন্যই মহাবিপদ উল্লেখ করে আতংকিত না হয়ে বরং সাহস ও ধৈর্য নিয়ে এবং নিরাপদ থাকার সকল নির্দেশনা অনুসরণ করে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।

তারেক রহমান বলেন, সারা বিশ্বের মানুষ এক মহাবিপদের কাল অতিক্রম করছে। বিশ্বের সকল ধনী গরিব, শক্তিমান কিংবা দুর্বল, সাদা কিংবা কালো প্রতিটি মানুষ-ই এখন ভীত ও আতংকিত। প্রতিটি দেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। দেশে দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বাড়ছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। তাই বর্তমান পরিস্থিতি একাধারে একটি বৈশ্বিক সংকট। আবার প্রতিটি দেশের কাছে এটি একটি জাতীয় সঙ্কট। এটি এখন মানুষের বাঁচা মরার প্রশ্ন। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশ এবং জনগণের স্বার্থে সবাইকে যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে অবশ্যই বর্তমান সরকারের বৈধতার সংকট রয়েছে, কিন্তু চলমান করোনা ভাইরাস সংকট আরো ভয়াবহ এবং অত্যন্ত বিপর্যয়কর।

তারেক রহমান, জনগণের রায়ে ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি একাধিকবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। অনেক সংকটময় পরিস্থিতি-ও মোকাবেলা করেছে। সারা বিশ্বের সাথে মাতৃভূমি বাংলাদেশ এখন ভয়াবহ সংকটে। তাই এই সংকট মোকাবেলায় বিএনপি সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, 'দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি'।

তারেক রহমান বলেন, দোষারোপের রাজনীতি, মুখরোচক ব্যাক্যবান, কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে কিংবা হুমকি-ধামকি শক্তি দেখিয়ে এই ঘোর বিপদ মোকাবেলা সম্ভব নয়। তাই এই বিপদের দিনে প্রতিটি মানুষকে একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের প্রতিটি নাগরিককে নিজের অবস্থা- অবস্থান কিংবা রাজনৈতিক পরিচয় ভুলে গিয়েসর্ব্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে নিজেকে, নিজের পরিবারকে এবং প্রতিবেশীকে নিরাপদ রাখার নীতি গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, তবে এই বিপদ মোকাবেলায়, সবার আগে প্রয়োজন, রাষ্ট্র ও সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।

তারেক রহমান বলেন, এই ভাইরাসটি এতটাই ছোঁয়াচে এবং স্পর্শকাতর যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে বলেছে, কারো সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেও কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, সাবান কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে যাতে মানুষ থেকে মানুষের সংস্পর্শে এটি ছড়াতে না পারে।

তিনি বলেন, বর্তমান বিপদ মোকাবেলায় ‘লক ডাঊন’ ‘কোয়ারেন্টাইন‘ কিংবা ‘সেলফ আইসোলেশন’ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কিন্তু বাংলাদেশের বিরাজমান বাস্তবতায় এমন পরিস্থিতির সঙ্গে দেশের জনগণ ততটা পরিচিত নয়। তাই এসব পদক্ষেপ সফল করতে হলে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রয়োজন, সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ যাতে দলমত, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ সক্রিয়ভাবে ‘লকড ডাঊন’ ‘কোয়ারেন্টাইন’ কিংবা ‘সেলফ আইসোলেশন’ প্রক্রিয়ার সফল প্রয়োগ ঘটাতে পারে। এ কারণে সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে সফলভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

করোনা ভাইরাস চিকিৎসার জন্য দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালগুলোকে উপযোগী করে গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, সম্প্রতি দেশের অন্যতম বড় হসপিটাল রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের মহাপরিচালক লিখিতভাবে জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের সরবরাহ করার মতো প্রয়োজনীয় মাস্ক হসপিটালে নাই। যা সত্যিই অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, চিকিৎসকরাই যদি নিরাপদ বোধ না করেন তাহলে তারা রোগীর চিকিৎসা করবেন কিভাবে?

তারেক রহমান বলেন, জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল কিটস সংগ্রহ করা এবং দ্রুততার সাথে ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন। তা না হলে, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে দেশ ও জনগণকে যে কোনো অবহেলায় অত্যন্ত চড়া মূল্য দিতে হবে।

দেশের এই সংকটকালে তারেক রহমান করোনা ভাইরাস চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত সকল, ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের কঠিন ত্যাগের বিষয়টি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে আপনাদেরকে হয়তো আরো কঠিন ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আপনাদের এই ত্যাগ সারাবিশ্ব শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে, করবে’।

দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে তারেক রহমান আতংকিত হয়ে অধিকমাত্রায় কেনাকাটা করে ঘরে মজুদ না করার আহবান জানিয়ে বলেন, এই বিপদের সময় কিছু কিছু মানুষের মজুদদারীর কারণে যাতে আরেকজন বঞ্চিত না হয় এ বিষয়ে প্রত্যেকের সচেতন থাকা প্রয়োজন, অন্যের প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রাখা সবার কর্তব্য।

তারেক রহমান বলেন, দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দি লক্ষাধিক মানুষ। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুন বেশি বন্দির বসবাস হওয়ায় কারাগারগুলোতে বিরাজ করছে অমানবিক অবস্থা। তিনি বলেন, খবর বেরিয়েছে, কারাবন্দীদের মধ্যেও করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক খবর। এই অবস্থায়, একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য হলেও যাচাইবাছাই করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কয়েদি বিশেষ করে রাজনৈতিক বিবেচনায় বন্দি তাদেরকে কারামুক্ত করা দরকার। ইতালি, ইরান সহ অনেক দেশই নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই অনেক কয়েদিকে শর্তসাপেক্ষে মুক্ত করে দিয়েছে।

তারেক রহমান একইসঙ্গে কক্সবাজার জেলায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাসের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে যাতে করোনা ভাইরাস হানা দিতে না পারে সেটি যে কোনো মূল্যে নিশ্চিত করা জরুরি অন্যথায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তারেক রহমান দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী শুভার্থী, সমর্থক, সবার প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, এখন মার্চ মাস। মহান স্বাধীনতার মাস, এই মাসটি সবার জন্য গৌরবের মাস। এই মাসে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

তারেক রহমান বলেন, সাম্য মানবিকতা আর ন্যায় বিচারের প্রেরণায় যে বাংলাদেশটি আমরা স্বাধীন করেছিলাম সেই প্রিয় স্বদেশ আজ চরম বিপদে। এই বিপদ মোকাবেলায় স্বাধীনতার ঘোষকের দল বিএনপি’র প্রতিটি নেতা-কর্মীকে মানুষের কল্যানে আবারো বিশেষ ভূমিকা পালন করার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, একটি দায়িত্বশীল দলের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে নিজেকে এবং নিজেদের পরিবারকে নিরাপদ রাখার পাশাপাশি প্রতিবেশীর কল্যানে বিশেষ করে নারী শিশু ও বয়স্কদের সহায়তায় যথাসম্ভব ভূমিকা পালনেই জন্যও দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি তিনি আহবান জানান।

ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া কিংবা বাংলাদেশ, দেশের প্রতিটি নাগরিক যিনি যেখানেই থাকুন, সবার সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা কামনা করে তারেক রহমান বলেন, ‘এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য আমরা মহান আল্লাহর রহমত কামনা করছি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি শিগগিরই আমাদেরকে এই মহা বিপদ থেকে রক্ষা করবেন’।