ডিসি রদবদল

আগাম আওয়ামী নির্বাচনের নীল নকশা : রিজভী

আগাম আওয়ামী নির্বাচনের নীল নকশা : রিজভী

ঢাকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ২২ জেলার ডিসি রদবদল আগাম আওয়ামী নির্বাচনের নীল নকশা। তাদের দলীয় লোকজন দিয়ে নির্বাচনের জন্য মাঠ সাজানো হচ্ছে।

রবিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের বক্তব্যেও এমন আলামত পাওয়া গেছে। তবে যতই মাঠ সাজানো হোক, নীল নকশা করা হোক বেগম খালেদা জিয়া বিহীন কোনো নির্বাচন এই দেশের জনগণ হতে দেবে না।

সোমবার বিকালে নয়া পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রিজভী আহমেদ আরো বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় তার প্রতি প্রধানমন্ত্রী বারবার ক্ষোভের নির্দয় বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বের করে দিয়েছে। তার সন্তানদের নির্যাতন করেও শেখ হাসিনা ক্ষান্ত হচ্ছে না। তাই মিথ্যা ও সাজানো মামলায় তাকে কারাগারে নেয়া হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, জনসমাবেশ, প্রতিবাদ সভা, মিছিল করা ইত্যাদি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। মানুষের অধিকার পুলিশের বিধি-নিষেধের ওপর নির্ভর করে না। এ অধিকারগুলো মানুষের জন্মগত। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৭ ও ৩৯ অনুচ্ছেদে সমাবেশের অধিকার এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সমাবেশের জন্য পুলিশি অনুমতি নিতে হয় এমন নজিরতো পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। অপরাধ দমনের জন্য জনগণের টাকায় পুলিশ পালিত হয়, আর সেই পুলিশ অপরাধ দমন না করে রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকারকে নিষ্পিষ্ট করছে বুটের তলায়।

তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এমন নজির যেখানে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দেয়া হয়। বাংলাদেশে কেনো বিএনপিসহ বিরোধী দলের সভা সমাবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে? আইনকে ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করলে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে না। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান হয় রাজনৈতিকভাবে। আইন, বিচার সবারই শেষ কথা হলো জনমত। বর্তমান সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বিরোধী দলকে দমন করতে যা করাচ্ছে সেটি জনমতের বিরুদ্ধে বেআইনী কাজ।

রিজভী আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কখনোই টিকেনি। শেখ হাসিনারও দুঃশাসনের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত জনগণ মেনে নেয়নি, নিবেও না। আইনের শাসনকে উপেক্ষা করে বেআইনিভাবে পুলিশ, প্রশাসন এরা যদি চেষ্টা করে কিছুদিন মনে হবে যে, সব শক্তি তাদের মধ্যে চলে এসেছে। কিন্তু অন্যায় এখানে চিরস্থায়ী হয় না, ভবিষ্যতে হবেও না।

‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘরে করেন বাইরে কেনো?’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবয়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের কী আওয়ামী লীগের সম্পাদকের পাশাপাশি জোনাল সামরিক শাসকের দায়িত্ব পালন করছেন? কারণ গণতন্ত্রে তো এ ধরণের ভাষা নেই। এখন হাসিনাতন্ত্র চলছে বলেই গণতন্ত্রহীন ভাষা প্রয়োগ করতে পারছেন ওবায়দুল কাদের সাহেবরা। আমরা যে কর্মসূচি পালন করছি তা গণতন্ত্রে স্বীকৃত কর্মসূচি। গণতন্ত্র মানে ঘরোয়া সভা করা নয়, বরং উম্মুক্ত স্থানে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করা। আসলে ওবায়দুল কাদের সাহেবদের ঐতিহ্যই হচ্ছে মানুষের গলায় ফাঁসির দড়ি দিয়ে কণ্ঠরোধ করা। জনসম্মতিহীন সরকারের প্রধান কাজই হচ্ছে মানুষের অধিকার ছিনিয়ে নেয়া। সেটি ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, জাল, ঘষা-মাজা নথির ওপর ভিত্তি করে হয়রানিমূলক মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া প্রধানমন্ত্রীর জিঘাংসা চরিতার্থ করার এক ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত। দেশের জনসম্মতিতে বেগম খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ নির্দোষ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জনগণের টাকায় শেখ হাসিনা দেশে বিদেশে সরকারি সফরে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছেন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন। এটা প্রধানমন্ত্রী করতে পারেন না, দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে এটার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হতো। কিন্তু দুদক কী এ বিষয়ে কোনো তৎপরতা দেখাতে পারবে? দুদক চেয়ারম্যান নিজেও স্বীকার করেছেন দেশে সুশাসন না থাকায় দুর্নীতি রোধ করা যাচ্ছে না। দুদক চেয়ারম্যানের কথায় প্রমাণিত হয় তিনি সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহসী নন।

সোমবার সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে বিএনপির প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশী বাধা এবং হামলার নিন্দা জানিয়ে রিজভী আহমেদ বলেন, বৃহস্পতিবার ঢাকায় কালো পতাকা প্রদর্শনকালে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে সাবেক এমপি কামরুদ্দিন এহিয়া খান মজলিসকে পুলিশ গ্রেফতার করে। শেরে বাংলানগর থানা বিএনপি নেতা শাহাদৎ হোসেন দুর্জয়, মফিজুল ইসলাম, আরমান হোসেনসহ পাঁচজনের অধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অসত্য মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি এবং আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন তিনি।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৯৩০ঘ.)