নতজানু সরকার সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ করতে পারে না: রিজভী আহমেদ

নতজানু সরকার সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ করতে পারে না: রিজভী আহমেদ

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, সীমান্তে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশীদের হত্যা করছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বিএসএফ। বাংলাদেশের ভেতর থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনও চালায় বিএসএফ। কিন্তু বর্তমান সরকার কতটুকু নতজানু যে, এর আগে আমরা দেখেছি- বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীরা বিএসএফের হত্যাকাণ্ডের কোনো প্রতিবাদ না করে বরং তাদের গুলিতে নিহত বাংলাদেশীদেরই অভিযুক্ত করেছে।

রবিবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে করোনার সঙ্কটেও সরকারের মন্ত্রীরা ঘরে বসে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে দেশ চালাচ্ছেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়েছেন, করোনায় সয়লাব জনগণ কী মরণদশায় ভুগছে এগুলি উপলব্ধি করার ক্ষমতা তাদের নেই। যদি থাকতো তাহলে করোনা পরীক্ষার ওপর ২০০ টাকা ফি ধার্য করতো না, এই মহামারীর মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করতো না, বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিলের দাপটে সাধারণ মানুষের দম বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতো না, পাটকল বন্ধ ও পাটশ্রমিকদের ছাঁটাই করতো না।

রিজভী বলেন, গত তিন মাসে বিএসএফ ২৫ জন বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা করেছে। গত ২ জুলাইতেও তারা একজনকে হত্যা করছে। গতকালও (শনিবার) চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মানসিক ভারসাম্যহীন জাহাঙ্গীর আলমকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ভয়ঙ্কর অমানবিক মনুষ্যত্বহীন ঘটনা দেশবাসীকে গভীরভাবে মর্মাহত করেছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার টু শব্দটি পর্যন্ত করে না। এই বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী চুপ কেনো? সীমান্ত হত্যা বন্ধে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। নতজানু সরকার কোনো প্রতিবাদ করারও সাহস পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে এই একপেশে হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশীরা। গত তিন মাসে বিএসএফ কর্তৃক সব হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

‘জনগণের পাশে না থেকে ঘরে বসে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করছে বিএনপি নেতারা। প্রতিদিন ঘরে বসে শুধু সমালোচনা করে’ গত শনিবার তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, তথ্যমন্ত্রীর মতো উদ্ভট ও ডাহা মিথ্যা কথা বলার মতো লোক বাংলাদেশে আর কতজন আছেন তা আমার জানা নেই। তার চোখে মুখে মিথ্যার ঝলক বেরিয়ে আসে। তথ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই-আপনাদের মন্ত্রী-এমপিরা কে মাঠে আছে, কে জনগণের পাশে আছে? আমরা তো দেখছি-আপনাদের এমপি মানব পাচারের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে গ্রেফতার হচ্ছে। অবশ্য জনগণ দেখছে-আপনাদের জনপ্রতিনিধিদের খাটের তল থেকে, মাটির তল থেকে, গ্যারেজের ভেতর থেকে শুধু চালের বস্তা, তেলে বস্তা বের হচ্ছে। এগুলি জনগণের টাকায় সরকারী ত্রাণ। আর আপনাদেরকে দেখছি-সেলফ লকডাউনে থেকে বিরোধী দল ও মতের মানুষদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে। আপনাদের মন্ত্রী-এমপিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি। বিএনপি’র তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীরা এই দুঃসময়ে বিভিন্ন সহায়তা নিয়ে কোটি কোটি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

রিজভী বলেন, ঢাকা শহরে বাড়ীওয়ালারা ভাড়াটিয়া খুঁজে পাচ্ছে না। সবাই ঢাকা ছেড়ে গ্রামমুখী হচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষরা করোনার আঘাতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে, এর ওপর বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও জ্বালানি তেলের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধিতে তাদের জীবন ওষ্ঠাগত। শ্রমিক ছাঁটাই আর চাকুরিচ্যুতির হিড়িক পড়ে গেছে দেশব্যাপী। চাকুরী হারিয়ে আত্মহত্যা করছে মানুষ। এক নজীরবিহীন সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে মধ্য ও স্বল্প আয়ের মানুষ।

তিনি বলেন, সরকারের লোকেরা এই সঙ্কটগুলোর নজর না দিয়ে জনদৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বিরোধী দলের ওপর ঝাঁক বেঁধে আক্রমণ শুরু করেছে। সেখানে শুধু মিথ্যা কথার ফুলঝুরি নয়, চলছে গুম, মিথ্যা মামলা, হামলা ও গ্রেফতারের হিড়িক।

রিজভী আহমেদ এর ফেসবুক আইডি নেই

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ বলেন, আমি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আবারো আপনাদের জানাচ্ছি যে, আমার নামে কোনো ফেসবুক একাউন্ট নেই। আমি কোনো ফেসবুক পরিচালনা করি না। কিন্তু কতিপয় অসাধু ও প্রতারক ব্যক্তি আমার নামে ফেসবুক একাউন্ট খুলে প্রতারণা করছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

এমজে/