বিএনপি মাথা নত করেনি, লড়াই-সংগ্রাম করে যাচ্ছে: মির্জা আলমগীর

বিএনপি মাথা নত করেনি, লড়াই-সংগ্রাম করে যাচ্ছে: মির্জা আলমগীর ফাইল ছবি

বিএনপি কখনও মাথা নত করে বসে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, বিএনপি উঠে দাঁড়াবে সেই ফিনিক্স পাখির এবং জয়ী হবে। বিএনপি কিন্তু কখনও মাথা নত করে বসে যায়নি। লড়াই করছে, সংগ্রাম করছে।’

রবিবার (৫ জুলাই) বিকালে উত্তরার বাসা থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সিলেটে সাউথ সুরমা ন্যাশনালিস্ট ফোরামের এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটা আছে। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য এই সরকার দুর্নীতি করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে একেবারে ভেঙে দিয়েছেন, ভঙ্গুর করে দিয়েছে। এখানে মানুষ কোনো স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে না।’

হাসপাতালগুলোর চিত্র তুলে ধরে মির্জা আলমগীর বলেন, ‘হাসপাতালে গেলে অক্সিজেনের অভাব, ভেন্টিলেটর বাদ-ই দেন। আপনার এমনিতেই লোকে অক্সিজেন পাচ্ছেন না। সাড়ে তিন হাজার টাকার অক্সিজেন এখন ৪ হাজার থেকে ৩৮ হাজার টাকা দাম হয়ে গেছে। মাস্ক, স্যানিটাইজার ও সুরক্ষার সামগ্রী যা-ই বলুন, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রকৃতপক্ষে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই, তারা ব্যর্থ হয়ে গেছে এই কাজে।’

তিনি আরো বলেন, ‘খুব কঠিন ছিল না এটাকে (করোনাভাইরাস) নিয়ন্ত্রণ করা। আপনারা দেখেছেন, ভিয়েতনাম নিয়ন্ত্রণ করেছে, কিউবা নিয়ন্ত্রণ করেছে, চীনে এতোবড় আক্রমণের পরে তারাও নিয়ন্ত্রণ করেছে, নিউজিল্যান্ড করেছে। অর্থাৎ সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে, তারা যদি কাজ করার মতো সত্যিকার অর্থেই একটা ভালো ইচ্ছা থাকে, তাহলে সে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে কাজগুলো করা খুব কঠিন ছিল না।’

‘আমি মনে করি, আমাদের এখানে যে ভুলগুলো হয়েছে সেই ভুলগুলো সরকারের সম্পূর্ণ অজ্ঞতা, অদক্ষতা ও অযোগ্যতার কারণে আজকে কোভিড-১৯ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বারবার ভুল হয়েছে, একবার ঢাকা থেকে চলে যাওয়া আবার ঢাকায় নিয়ে আসা, আবার ঢাকায় কিছু কিছু অঞ্চল লকডাউন করা। এখন আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি যে, কোরবানির ঈদ আসবে, এই ঈদের আবার কীভাবে ব্যাপক সামাজিক সংক্রমণ হবে।’

মির্জা আলমগীর আরো বলেন, ‘আমরা দেখছি যে, সিলেটে গত কয়েকদিনের সংক্রমণ প্রচণ্ডভাবে বেড়েছে। ইট হ্যাজ বিকাম এ হটস্পট নাউ। আমি সিলেটের নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ জানাই, সরকার কী করছে না করছে- এটা দেখার দরকার নেই। তারা যা করছে তারা করুক। আপনারা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, এই উদ্যোগগুলোকে সফল করার জন্য আপনারা সবাইকে নিয়ে এগিয়ে আসার চেষ্টা করুন। আজকে যে উদ্যোগটা আপনারা নিয়েছেন, এটা একটা মহৎ উদ্যোগ। এটা নিয়ে কাজ করুন।’

তিনি বলেন, ‘একদিকে স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন করছে। আমাদেরকে কাজ করতে দেয় না। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দিয়েছে, নেতাকর্মীদের গুম, হত্যা করা হয়েছে। সিলেটের ইলিয়াস আলীকে গুম করে দিয়েছে, কোনো হদিস নেই আজ পর্যন্ত।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারপরও বিএনপি কিন্তু আপনার কখনও মাথা নত করে বসে যায়নি। লড়াই করছে, সংগ্রাম করছে। আমি বিশ্বাস করি যে, বিএনপি উঠে দাঁড়াবে সেই ফিনিক্স পাখির এবং জয়ী হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি আসবেন সামনে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের সঙ্গে আসবেন, এসে গণতন্ত্রকে আমরা প্রতিষ্ঠা করব। সব ধরনের সংকটকে মোকাবিলা করে আমরা জয়ী হব। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

সিলেটে সাউথ সুরমা ন্যাশনালিস্ট ফোরামের উদ্যোগে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সিলেটের সাবেক বিএনপির সভাপতি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ হকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।

সাউথ ন্যাশনালিস্ট ফোরামের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব কামাল হাসান জুয়েলের পরিচালনায় ভার্চুয়াল আলোচনায় সিলেটের সিটি মেয়র বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান জীবন, সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি এম এ মালেক সিলেট জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমেদ এবং সিলেট জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মকসুদ আহমদ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।