খালেদা জিয়ার সু-চিকিৎসা দাবি চিকিৎসকদের

খালেদা জিয়ার সু-চিকিৎসা দাবি চিকিৎসকদের

ঢাকা, ৫ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : অবিলম্বে কারাগারে বিশেষজ্ঞ একটি মেডিক্যাল টিম পাঠিয়ে কারান্তরীণ বেগম খালেদা জিয়ার সার্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সু-চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে সচেতন চিকিৎসক সমাজ।

সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সচেতন চিকিৎসক সমাজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে চিকিৎসক নেতারা এ দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশে মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. একেএম আজিজুল হক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুস সালাম, ড্যাবের সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. শহীদ হাসান, উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক ডা. শহীদুল আলম, অধ্যাপক ডা. মোস্তাক আহমেদ, ডা. হারুন-উর রশিদ, ডা. মো. শহিদুল আলম. ডা. গাজী আব্দুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিশিষ্ট অর্থপোডিক বিশেষজ্ঞ ও বিএমএর সাবেক সহ সভাপতি অধ্যাপক ডা. রফিকুল কবির লাবু বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে জাতি আজ উদ্বিগ্ন। অনতিবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করে স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলো আশু সমাধান করা প্রয়োজন। এর মধ্যে অতি সত্তর কারাগারে বিশেষজ্ঞ একটি মেডিকেল টিম পাঠিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার শরীরের সার্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা সচেতন চিকিৎসক হিসাবে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যগত কারণে। আপনারা জানেন, ৭৩ বছর বয়স্ক এই মহিয়ষী বিদূষী মহিলা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। বক্ষ্যব্যাধিতে আক্রান্ত বহু বছর থেকে, বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে। উনাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে যে পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ ভবনে রাখা হয়েছে, সেখানে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের জন্য উনার পূর্বের শ্বাসকষ্ট জনিত বক্ষ্যব্যাধি মারাত্নকভাবে বেড়ে যেতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ব্যবস্থা ঐ পরিত্যক্ত জেলখানায় নেই।

বেগম খালেদা জিয়া বিগত ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছেন জানিয়ে রফিকুল কবির লাবু বলেন, জরাজীর্ণ পরিবেশ, একাকীত্ব এবং সরকারের মানসিক নির্যাতনের কারণে উনার রক্তের শর্করা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে অথবা কমেও যেতে পারে। যা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। অথচ ওখানকার অব্যবস্থার মধ্যে যা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। ফলে যে কোনো সময় দেশনেত্রীর শারীরিক অবনতি ঘটতে পারে, যার জন্য এই সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে। উনি (খালেদ্ াজিয়া) একজন হার্টের রোগী। বিগত ১০ বছর ধরে উনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ পরিবেশ এবং একাকীত্বের কারণে উনি যে কোনো সময় একউট হ্নদরোগে আক্রন্ত হতে পারেন। উনি একজন চোখের রোগী। কিছুদিন পূর্বে উনি বিদেশ থেকে চোখের অপারেশন করে ফিরেছেন। এ অবস্থায় উনার চোখের নিবীড় পরিচর্যা প্রয়োজন। যা জেলখার পরিত্যাক্ত জায়ঘায় কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়। জরুরী ভিত্তিতে উনাকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

বেগম খালেদা জিয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা হাঁটু সংক্রান্ত রোগ উল্লেখ করে বিশিষ্ট এই চিকিৎসক বলেন, উনি ৩০ বছর ধরে অষ্টিও আর্থোসিস রোগে ভুগছিলেন। যা উনার স্বাভাবিক চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল এবং প্রচন্ড হাটু ব্যাথায় ভুগছিলেন। এক পর্যায়ে হাঁটু সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শে উনি দুটি হাঁটুই প্রতিস্থাপন করে নেন। অর্থাৎ কৃত্রিম হাঁটুর জোড়া লাগানোর অপারেশন করেন। এরপর বেশ কিছু বছর পর‌্যন্ত উনি ভালো আছেন। কিন্তু জোড়া প্রতিস্থানের পর এর ফলাফল এব জোড়া ভালো থাকার সময়কাল সম্পূর্ণ নির্ভর করে অপারেশন পরবর্তী চলাচল ও হাঁটু ভাঁজের নিয়মের উপর। এই নিয়মগুলো মেনেই উনি এতদিন ভালো ছিলেন। অবৈধ সরকারের স্বঘোষিত জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত জেলখানায় উনি কি অবস্থায় আছেন। উনার চলাচলের অবস্থা, উনার ওয়াশরুম ব্যবহারের পদ্বতি, সবকিছুর ব্যাপারেই একজন হাঁটু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরী প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। কারণ এই নিয়মগুলি বর্তমান অবস্থায় সঠিক পরামর্শ অনুযায়ী সম্পাদন না হলে বেগম খালেদা জিয়ার মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সেখানকার অব্যবস্থার জন্য উনার কৃত্রিম জোড়া দুটি কোনোভাবে ঢিলে হয়ে যায় তাহলে দেশনেত্রীর চলাফেরা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে।

চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট, হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ও হাটু সংক্রান্ত রোগে ভুগছিলেন। কারাগারে যাওয়ার পর সেসব সমস্যা বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে বেগম খালেদা জিয়া বাইরের ডাক্তারদের পরামর্শ নিতে চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

ডা. রফিকুল কবির লাবু বলেন, আমরা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ দেখা করার অনুমতি দেয়নি। পরে আইজি প্রিজনের কাছে চিঠি দিলেও কোনো সাড়া পাইনি। আমরা বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মিলে দেখা করতে গিয়েছিলাম। দেখে চিকিৎসা দিলে অবশ্যই তিনি ভালো হতেন বলে আশাবাদী। বেগম খালেদা জিয়া নিজেও বাইরের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ নিতে চেয়েছেন। অথচ কারাগারের একজন জুনিয়র ডাক্তার বলে দিলেন তিনি দীর্ঘদিন ধরে হাটুর সমস্যায় ভুগছেন, এখন সেই ব্যথা বেড়েছে।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০৪৯ঘ.)