খালেদা জিয়া অসুস্থ, চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না কারা কর্তৃপক্ষ

খালেদা জিয়া অসুস্থ, চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না কারা কর্তৃপক্ষ

ঢাকা, ৬ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : বাইরের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারা কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে সচেতন চিকিৎসক সমাজ।

সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকদের সংগঠনটির তরফে এ অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বিএমএ’র সাবেক সহ-সভাপতি প্রফেসর ডা. রফিকুল কবির লাবু বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট, হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁটু সংক্রান্ত রোগে ভুগছিলেন। কারাগারে যাওয়ার পর সেসব সমস্যা আরো বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে খালেদা জিয়া বাইরের ডাক্তারদের পরামর্শ নিতে চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিচ্ছে না।

ডা. লাবু বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ দেখা করার অনুমতি দেননি। পরে আইজি প্রিজনের কাছে চিঠি দিলেও কোনো ধরনের সাড়া পাইনি। আমরা বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মিলে দেখা করতে গিয়েছিলাম। বাইরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারলে তিনি ভালো হতেন বলে আমরা আশাবাদী। খালেদা জিয়া নিজেও বাইরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে চেয়েছেন। অথচ কারাগারের একজন জুনিয়র ডাক্তার বলে দিয়েছেন তিনি দীর্ঘদিন ধরে হাঁটুর সমস্যায় ভুগছেন, এখন সেই ব্যথা বেড়েছে।

ডা. লাবু বলেন, চক্রান্ত করে খালেদা জিয়াকে ভালো চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। ওই জুনিয়র চিকিৎসকের কি দোষ দেব, সে তো উপর থেকে যে নির্দেশ আসে সেটাই বলে। এর বাইরে কিছু বলতে পারে না।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া কিছুদিন আগে চোখের অপারেশন করিয়েছেন। ৩০ বছর ধরে হাঁটু সংক্রান্ত অষ্টিও আর্থোসিস রোগে ভুগছিলেন। প্রচণ্ড হাঁটু ব্যথা ওনার স্বাভাবিক চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল। এক পর্যায়ে হাঁটু সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করে কৃত্রিম হাঁটুর জোড়া লাগানোর অপারেশন করান। এরপর থেকে কঠোর নিয়মকানুনের মধ্যে থাকায় তার হাঁটুতে কোনো সমস্যা হচ্ছিল না। তবে কারাগারে যাওয়ার পর আবার হাঁটুর ব্যথা বেড়েছে। ওনার চলাচলের অবস্থা, ওয়াশরুম ব্যবহারের পদ্ধতি সবকিছুর ব্যাপারেই একজন হাঁটু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন। তা না হলে কারাগারের পরিবেশের জন্য কৃত্রিম জোড়া লাগানো দুটি হাঁটু কোনোভাবে ঢিলে হয়ে গেলে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এসময় তিনি বাইরের চিকিৎসক দিয়ে খালেদা জিয়ার শরীরের সার্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান। অন্যথায় কোনো ক্ষতি হলে তার দায় সরকারকে নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।

সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা বলেন, ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তিনি বক্ষব্যাধিতে আক্রান্ত বহু বছর ধরে। এমন অবস্থায়ও উদ্দেশ্য মূলকভাবে পরিত্যক্ত কারাগারের জরাজীর্ণ ভবনে রাখা হয়েছে। যেখানে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের জন্য ওনার পূর্বের শ্বাসকষ্টজনিত বক্ষব্যাধি মারাত্মকভাবে বেড়ে যেতে পারে। যা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ব্যবস্থা ওই কারাগারে নেই। তিনি গত ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। জরাজীর্ণ পরিবেশ, একাকিত্ব এবং সরকারের মানসিক নির্যাতনের কারণে ওনার রক্তের শর্করা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে অথবা কমেও যেতে পারে। যা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএমএ’র সাবেক সভাপতি ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. একেএম আজিজুল হক, বিএমএ’র সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুস সালাম, ড্যাবের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. শহীদ হাসান, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক ডা. শহীদুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০৩০/ঘ)