বাবুর ইন্তেকাল: জাতীয়তাবাদী রাজনীতির এক উদীয়মান নক্ষত্রের বিদায়

বাবুর ইন্তেকাল: জাতীয়তাবাদী রাজনীতির এক উদীয়মান নক্ষত্রের বিদায়

গণতন্ত্রের লড়াইয়ে তিনি ছিলেন নির্ভীক প্রাণ এক। সামনের কাতারে থেকেই অংশ নিয়েছেন জনগণের ভোটাধিকার আর অধিকার প্রতিষ্ঠার সকল আন্দোলনে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির এই উদীয়মান নক্ষত্র এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টার দিকে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়।

এরপর রাত দেড়টার দিকে শফিউল বারী বাবুকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন।

জনপ্রিয় এবং গণমানুষমুখী এ নেতার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। শোকাহত স্বজন আর সহযোদ্ধারা স্মৃতিচারণ করছেন রাজপথের লড়াকু সৈনিক আর সহযোদ্ধা এই প্রিয় মুখটির।

সকাল ১০ টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মরহুম শফিউল বারী বাবুর প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদসহ হাজার হাজার মানুষ জানাজায় শরীক হন। জানাজার পূর্বে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আবেগাপ্লুত কন্ঠে মরহুম শফিউল বারীর বাবুর নির্ভিক পথ চলার কথা উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল।

বাদ আছর লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিউল বারী বাবুর আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোক এবং সমবেদনা প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদল, বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।

এক নজরে শফিউল বারী বাবু

ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন শফিউল বারী বাবু। যোগ দেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতিতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বিএনপির ও এর সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক পদে কাজ করেছেন নিরলসভাবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানবাধিকার এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সামিল থেকেছেন তরুণদের নেতা হিসেবে। আমৃত্যু লড়েছেন শহীদ জিয়া প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির আদর্শ বাস্তবায়নে।

দলের সব সংকটকালে তার সাহসী নেতৃত্ব ছিল নেতা-কর্মীদের জন্য প্রেরণার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাকে বারবার কারাভোগের নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।

শফিউল বারী বাবু ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন ছাত্ররাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছিলেন। সৎ, কর্মীঘনিষ্ঠ ও দক্ষ সংগঠক হিসেবে তার পরিচয় পাওয়া যায় ছাত্রজীবন থেকেই। রাজনীতিকেই জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন তিনি।

দলের কর্মসূচি পালনে বাবু ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হিসেবে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে দেশের যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উপদ্রুত মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি করোনার বিপর্যস্ত, আতঙ্কিত আর নিরন্ন মানুষের কাছে ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেছেন তিনি দুয়ারে দুয়ারে। গণমানুষের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন বাবু।

জিএস/