দলে গণতন্ত্রয়ানে এগিয়ে বিএনপি

দলে গণতন্ত্রয়ানে এগিয়ে বিএনপি

মনিরুল ইসলাম ফরাজী

স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় আরোহণ করে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথে প্রথম বারের মতো এক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। সদ্য স্বাধীন দেশে গণমানুষের অধিকার হরণের এটা ছিলো এক কলঙ্কিত নজির। স্বাধিকার আর মুক্তির লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া বাংলাদেশিদের জন্য আবারো গণতন্ত্রের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্র রাজনীতি চর্চার পথ। একনায়ক আর স্বৈরাচারী দলীয় শাসনের বিপরীতে দেশে জনগণের গণতন্ত্র চর্চাকে অবারিত করার অংশ হিসেবে নিজে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।

একবিংশ শতাব্দীতে এসে আবারো হোঁচট খেয়েছে গণতন্ত্র। মানুষের নেই মতপ্রকাশ, ভোটাধিকার আর গণতন্ত্র চর্চার অবারিত সুযোগ। জালিয়াতি আর প্রহসনের ভোটের পর মানুষ আর এখন দীর্ঘ লাইনে ভোটের জন্য দাঁড়ায় না। বাস্তবতা হলো মেকি গণতন্ত্র আর মেদুল উন্নয়নের ঢোল পিটিয়ে আবারো মানুষের গণতন্ত্র হরণ করেছে আওয়ামী লীগ। জেল-জুলুম, গুম আর হাজারো হুলিয়া মাথায় নিয়ে নানান চড়াই আর উতরাইয়ের মধ্যেও দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আর পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।

শহীদ জিয়াউর রহমানে পর তার রেখে যাওয়া কাজ বাস্তবায়নে প্রাণ উজাড় করে নিজেকে গণতন্ত্রের সংগ্রামে নিবেদিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনসহ জাতির অধিকার আর সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলনে অনড় থেকে আপোষহীন দেশনেত্রী খেতাবে নিজেকে ভূষিত করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। আর সেজন্য বরাবরই পড়েছেন শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে। কি সহ্য করতে হয়নি তাকে? নিজের বাসা থেকে উচ্ছেদ, দুই পুত্রসহ কারাবাস আর সর্বশেষ সাজানো মামলায় দুই বছরের মতো কারা নির্যাতন। এ কারাবাসে শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হয়েছে খালেদা জিয়ার।

স্বাধীনতার ঘোষক পিতার আদর্শ, আপোষহীন নেত্রীর অভিভাবকত্বে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার সে লড়াইয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান নেয়া তারেক রহমান। গণতন্ত্রের এ সংকটে দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত গণতন্ত্রকে বিস্তৃত আর বিকশিত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। নতুন আর সংহত উদ্যোগ হিসেবে দলের সকল পর্যায়ে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের উদ্যেগ নেয়া হচ্ছে। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এখন এ বিষয়টি নিয়েই তাদের পরিকল্পনা-পর্যালোচনা করছেন।

একইসঙ্গে কমিটিতে নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী ৩৩ শতাংশ নারী রাখার ওপরও জোর দিয়েছে দলটি। আর দলের এই সিদ্ধান্ত সাংগঠনিক কাঠামোর আরো এক ধাপ অগ্রগতি হিসেবেই দেখছেন বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হলে প্রকৃতপক্ষে যারা মাঠের রাজনীতি করে, জনগণের জন্য কাজ করেন, তারা মূল্যায়িত হবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার জাস্টনিউজকে বলেন, গত শনিবার (১৮ জুলাই) রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচনের মাধ্যমে দলের সকল কমিটি দেয়ার বিষয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন- ‘সকল কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে দেয়া উচিত।’ এই বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান গুরুত্বারোপ করেছেন।

তিনি জানান, এখনো এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, আলোচনা চলছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ জাস্টনিউজকে বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। সবসময় নির্বাচন পদ্ধতিতে বিশ্বাস করে।’

তিনি বলেন, ‘সকল রাজনৈতিক দলকেই কমিটি দিতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমরা আপাতত কমিটি নিয়ে ভাবছি না। বর্তমান যে কমিটি আছে সেটার কোনো পরিবর্তন হবে না। তবে যখন কমিটি নির্বাচনের সময় হবে, যখন আমরা কমিটির কার্যক্রম শুরু করবো, তখন নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি দেয়ার বিষয়টি দেখবো।’

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা জানান, নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি দেয়ার বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমযান তারেক রহমানের নির্দেশনা রয়েছে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আরো আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম জাস্টনিউজকে বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটির বিষয়ে আমরা আন্তরিক।’

ছাত্রদলের উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নানারকম প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন পর কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ ইকবাল হোসেন শ্যামল নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের নেতৃত্বে সারাদেশে ছাত্রদল এখন অনেক শক্তিশালী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার ছাত্রলীগের হামলার পরও ছাত্রদল সেখানে শক্ত অবস্থানে রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার কারণেই ছাত্রদল এখন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। ছাত্রদলের মহানগর, জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়নে পর্যায়েও এখন ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।’

উল্লেখ্য, ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনে ড্যাব ও ছাত্রদলের কমিটি হওয়ার পর নেতৃত্বের বিষয়টি একদিকে যেমন সমাদৃত হয়েছে অন্যদিকে নিজ সংগঠনের ভেতরে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি হয়েছে। কোন রকম চাপ ছাড়াই তারা নির্ভার হয়ে কাজ করছে এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখছে। একই প্রক্রিয়ায় বিএনপির সকল স্তরের কমিটি গঠনের বিষয়ে এখন আলোচনা চলছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী কমিটিতে ৩০ শতাংশ নারী রাখার বিষয়টিও জোর দেয়া হচ্ছে।