মুক্তিযুদ্ধ জনগণের যুদ্ধ, কোনো দলের বা গোষ্ঠীর অর্জন নয়: বিএনপি

মুক্তিযুদ্ধ জনগণের যুদ্ধ, কোনো দলের বা গোষ্ঠীর অর্জন নয়: বিএনপি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মালিক হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ জনগণের যুদ্ধ কোনো দলের বা গোষ্ঠীর অর্জন নয়। হয়তো আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিরাট পার্থক্য বিদ্যমান। কিন্তু অপ্রাপ্তি যাই থাকুক, স্বাধীনতা আমাদের জীবনের সেরা অর্জন। এই প্রাাপ্তির সঙ্গে আর কোনো অগ্রগতি বা অন্য কিছুর তুলনা চলে না। তাই ২০২১ সালের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে হবে বিপুল উদ্দীপনা ও উৎসাহের সাথে। রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। এসময় বিএনপি ২০২১ সালে বছরব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আড়ম্বরপূর্ণভাবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে বলে জানান ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ তৎকালীন সরকারি মালিকানাধীন দৈনিক বাংলা পত্রিকা এবং পরবর্তীতে আবার ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রচিত ‘একটি জাতির জন্ম’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এই নিবন্ধটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের একটি অনন্য দলিল। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের দল বিএনপির উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের লক্ষ্যে গঠিত বিশেষ কমিটির কার্যক্রম এগিয়ে নিতে স্বাধীনতার ঘোষকের প্রবন্ধটিকে একটি গাইডলাইন হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলা হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির কাছে যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হলো- যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায়বিচারের মূলমন্ত্রে আমরা স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলাম, মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা চর্চার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা থাকবে- আজ কি আমরা তার কিছু দেখতে পাচ্ছি? মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এখন পরিণত হয়েছে রীতিমতো দুঃস্বপ্নে।

তিনি বলেন, আজ কারা স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্রকামী মানুষদের গুম খুন করছে, অপহরণ করছে, গুম কিংবা অপহৃত মানুষগুলোকে কেন সীমান্তের ওপারে পাওয়া যায়? কেন সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়? অথবা কেন স্বাধীন বাংলাদেশের একটি সরকার সীমান্তে মানুষ হত্যার প্রতিবাদ করার সাহস পর্যন্ত পায় না বা হারিয়ে ফেলেছেন, কেন স্বাধীন বাংলাদেশের মর্যাদার পক্ষে কথা বললে আবরারের মতো মানুষদেরকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়? মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জনগণ যে রাষ্ট্রের মালিক হয়েছিল সত্যিকার অর্থে জনগণের কাছে কি সেই রাষ্ট্রের মালিকানা আছে, নাকি এখন নিজ দেশেই পরাধীন? আজ চলমান কঠিন বাস্তবতায় স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েছে এটিই প্রমাণিত সত্য যে দেশ এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষায় বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী শক্তির বিকল্প নেই। এই সত্যটিই স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার শাসনামল, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার শাসনামলে বারবার প্রমাণিত হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে শহীদ জিয়ার হাত ধরেই আধুনিক বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার সূত্রপাত মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশে অর্থনীতির মূল ভিত্তি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলেই রচিত হয়েছিল। যে পোশাক খাত ও প্রবাসী আয়ের ওপর ভিত্তি করে বর্তমান অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে, শহীদ জিয়ার হাত ধরেই তার যাত্রা শুরু। নাগরিকদের বিদেশে কর্মসংস্থান ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং গার্মেন্টস রফতানি শুরু হয় শহীদ জিয়ার উদ্যোগেই।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ পরিচিত হয়েছিল তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে। আর শহীদ জিয়াউর রহমানের শাসনামলে আন্তার্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিল একটি কার্যকর ও কল্যাণ ও আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে। একইভাবে পরবর্তীকালে বিএনপি যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততবার বেগম জিয়ার নেতৃত্বে জনকল্যাণমূলক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তার সময়ে বাংলাদেশ এশিয়ান ইমার্জিং টাইগার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয় তার সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। নারী-শিক্ষা এগিয়ে নিতে বেগম জিয়া নারীদের বিনা বেতনে পড়াশুনার সুযোগ করে দেন। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিএনপি’র সাফল্যের অগণিত উদাহরণ রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিএনপি এসব সাফল্যের বিস্তারিত পুস্তিকা আকারে প্রকাশের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র নতুন প্রজন্মের কাছে আরো স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরার প্রয়াস গ্রহণ করবে।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আগামী বছরের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি-স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সাথে উদযাপনের লক্ষ্যে গঠিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির প্রথম ভার্চুয়াল সভা শনিবার (২১ নভেম্বর) আমার সভাপতিত্বে এবং কমিটির সদস্য সচিব বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল আলোচনায় যোগ দিয়ে উদযাপন কমিটির প্রথম সভার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান।

তিনি বলেন, সভায় সিদ্ধান্ত হয়- বিএনপি ২০২১ সালে বছরব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আড়ম্বরপূর্ণভাবে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হবে এবং এই কর্মসূচী মাঠপর্যায়ের তৃণমূূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে যে সকল কর্মসূচী গ্রহণ করা হতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বিষয়ভিত্তিক রচনা প্রতিযোগিতা, অংকন প্রতিযোগিতা, চিত্র প্রদর্শনী, বিষয়ভিত্তিক প্রকাশনা যেমন- গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, বৈদেশিক নীতি, সমাজতন্ত্র থেকে মুক্ত বাজার অর্থনীতি ইত্যাদি, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিএনপির ভূমিকা, শহীদ জিয়া’র কর্মসূচীভিত্তিক কর্মশালা, বিএনপি’র বিভিন্ন শাসনামলের সাফল্য, লিফলেট, পুস্তিকা প্রকাশ, লিফলেট বিতরণ, ডকুমেন্টারি নির্মাণ, নৃত্যনাট্য, পথনাটক, সাংস্কৃতিক কর্মসূচী, ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী, বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম-বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠনে বিএনপি’র ভূমিকা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শন, দেশ গঠনে ১৯-দফার ভূমিকা, সেনাবাহিনীকে আধুনিক বাহিনীতে রূপান্তর, শহীদ জিয়ার উন্নয়নের রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা সভা ও প্রকাশনা।

পাশাপাশি ২০২১ সালে অন্তত ৬টি বিষয়ভিত্তিক প্রকাশনা প্রকাশের প্রস্তাব সভায় গৃহীত হয়। তাছাড়া বছরব্যাপী কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে আলোচনা-সভা, দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ স্পট/ স্থাপনায় সমাবেশ করা, দেশব্যাপী জেলা-উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ে উৎসবমুখর পরিবেশে জনসমাবেশ ও র‌্যালীর প্রস্তাব করা হয়।

পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে অন্যান্য কর্মসূচী সংযোজন অথবা বিয়োজন করা যাবে। এ সকল কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যে সকল বিষয়-ভিত্তিক উপকমিটি গঠন করা হবে তার অন্যতম অর্থ উপকমিটি, প্রচার, প্রকাশনা, ব্যবস্থাপনা, সাজ-সজ্জা, দফতর, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক ও মিডিয়া উপকমিটি বলেও জানান স্থায়ী কমিটির এ সদস্য। এ ছাড়া বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহ স্ব স্ব কর্মসূচী গ্রহণ করবে। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।