বাম জোটের বিক্ষোভে পুলিশি হামলা, লাঠিচার্জ

‘ভোট ডাকাতির সরকার উন্নয়ন করতে পারে না’

‘ভোট ডাকাতির সরকার উন্নয়ন করতে পারে না’

কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতারা। তারা বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। গঠিত হয় অবৈধ ও জনসমর্থনহীন সংসদ। অবৈধ ক্ষমতাসীন এই সরকারের ফ্যাসিস্ট শাসনে আজ জর্জরিত পুরো দেশের জনগণ। তাই এই দুঃশাসনের অবসানে গণঅভ্যুত্থান ও গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

বুধবার ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দু'বছর পূর্তিতে বাম জোট ঘোষিত দেশব্যাপী 'কালো দিবস' পালন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখী কালো পতাকা মিছিলের আগে সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ের এই সমাবেশের পর কালো পতাকা মিছিলটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার পথে দু'দফা পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় পুলিশের হামলা ও লাঠিচার্জে বাম জোটের কয়েক নেতাকর্মী আহতও হয়েছেন।

এদিকে, 'কালো দিবস' পালনের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলায় ডিসি অফিসের সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ করেছেন বাম জোট নেতাকর্মীরা।

পুরানা পল্টন মোড়ের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন। বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আ ক ম জহিরুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নজরুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল ইসলাম সবুজ, ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজুম মুনীর, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য আকবর খান।

সাইফুল হক বলেন, এই সরকার ৩০ ডিসেম্বরকে 'গণতন্ত্রের বিজয় দিবস' আখ্যা দিলেও বাস্তবে সেদিন মানুষের ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক অভ্যুত্থান ও দিনের ভোট রাতে নেওয়ার মাধ্যমে অবৈধভাবে সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তাই ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসা সরকারের 'বিজয় দিবস' পালন মানুষ গ্রহণ করেনি। এই অবৈধ সরকারের দেশ পরিচালনায় নৈতিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নেই। তারা চেষ্টা করছে ফ্যাসিবাদ ও দুঃশাসন কায়েম করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার। সরকার সোজা পথে না হাঁটলে মানুষের সামনে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গণজাগরণ, গণবিস্ফোরণ ও গণঅভ্যুত্থান ছাড়া কোনো পথ খোলা থাকবে না। 'ভোট ডাকাতির নির্বাচনের' আয়োজক নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাদের বরখাস্ত করার দাবি জানান তিনি।

জোনায়েদ সাকি বলেন, এই সরকার ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের কথা বলে ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র ও দলীয় গুণ্ডা নেতাকর্মীদের কাজে লাগিয়ে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র দখল করেছিল, ব্যালটে সিল মেরে ভোটের বাপ ভর্তি করেছিল। এর মধ্য দিয়ে সরকার ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশের ১৮ কোটি নাগরিককে চরমভাবে অপমান করেছে। তিনি বলেন, রাজপথে কার্যকর আন্দোলনের ঐক্য ছাড়া এই সরকারকে বিদায় দেওয়া যাবে না।

সভাপতির বক্তব্যে আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, ভোট ডাকাতির মাধ্যমে নির্বাচিত এই সরকার জনগণের উন্নয়ন করতে পারে না। এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে। এই দাবি আদায়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সমাবেশের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে 'কালো পতাকা মিছিল' বের হলে মৎস্য ভবন এলাকায় মিছিলকারীদের বাধা দেয় পুলিশ। এ বাধা অতিক্রম করে মিছিলটি শাহবাগে গেলে আবারও বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বাম জোট নেতাকর্মীদের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা বাচ্চু ভূঁইয়া, ছাত্রনেতা বিল্লাল হোসেন, রিপনসহ বেশ কয়েক নেতাকর্মী আহত হন।

পুলিশের বাধার মুখে শাহবাগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করা হয়। এ সময় 'ভোট ডাকাতির' নির্বাচনের আয়োজক ও আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে আগামী ৬ জানুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের কর্মসূচি ঘোষণা হয়।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল ডিসি অফিসের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কালো পতাকা সমাবেশে বক্তব্য দেন সিপিবির জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সেলিম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক দুলাল মজুমদার, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের অধ্যাপক নৃপেন্দ্র নাথ বাড়ৈ, বাসদের প্রকৌশলী ইমরান হাবিব রুমন, গণসংহতি আন্দোলনের দেওয়ান আব্দুর রশিদ নীলু প্রমুখ।