শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী আজ

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী আজ

মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী আজ।

১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় নিভৃত পল্লী বাগবাড়ীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দূরদর্শীসম্পন্ন জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক, অসাধারণ দেশপ্রেমিক, অসম সাহসী ও সহজ-সরল ব্যক্তিত্বের প্রতীক হিসেবে জিয়াউর রহমান ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ১৯৮১ সালে কতিপয় বিপথগামী সামরিক কর্মকর্তার হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মর্মান্তিকভাবে শহীদ হন।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে তাঁর মাতা-পিতা তখন আদর করে কমল নামে ডাকতেন। তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে কলকাতায়। তাঁর বাবা মনসুর রহমান তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। কলকাতার হেয়ার স্কুলে শহীদ জিয়া ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পরিবারের সঙ্গে শিশু জিয়া করাচি চলে যান। সেখানে কেটেছে তাঁর স্কুল ও কলেজ জীবন। করাচির স্কুল-কলেজে অধ্যয়নকালে শহীদ জিয়া একজন ভাল হকি খেলোয়াড় ছিলেন। স্কুলে তিনি ইংরেজিতে ভাল বক্তৃতা দিতে পারতেন। কৈশোরে নির্মেদ দেহের অধিকারী এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি।

করাচির ডি জে কলেজে পড়ার সময় ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান সামরিক একাডেমিতে একজন অফিসার ক্যাডেট হিসেবে শহীদ জিয়া যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে শহীদ জিয়া কমান্ডো ট্রেনিং লাভ করেন। ১৯৬৭ সালের এপ্রিল মাসে জিয়াউর রহমান ঢাকার অদূরে জয়দেবপুর সাব ক্যান্টনমেন্টে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় ব্যাচে লিয়নে সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পশ্চিম জার্মানি যান। ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। তাঁর ঘাঁটি ছিল ষোলশহর বাজারে। এখান থেকেই শহীদ জিয়া দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

১৯৭১ সালে জাতির সবচেয়ে বড় বিপদের দিনে মুক্তিপাগল দিশেহারা জনগণের কাছে একটি ‘অবিস্মরণীয় কন্ঠস্বর’ তাদের হৃদয়ে আশার সঞ্চার করেছিল। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম থেকে জাতির সেই ক্রান্তিলগ্নে ভেসে এসেছিল একটি কন্ঠস্বর ‘আমি মেজর জিয়া বলছি।’ সেই কন্ঠ সেদিন অযুত প্রাণে নতুন সঞ্জীবনী মন্ত্র এনে দিয়েছিল। মেজর জিয়ার কন্ঠস্বর শুনে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে দিশেহারা গোটা জাতি। ‘আমি মেজর জিয়া বলছি...বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি’। তাঁর এই অবিস্মরণীয় অবিনাশী ঘোষণায় পথহারা মুক্তিকামী জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে।

জিয়াউর রহমান শুধু মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি, তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মেজর জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কর্নেল এমএজি ওসমানীকে এ দায়িত্ব অর্পণ করার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর বৃহত্তর এলাকায় বীরত্বের সঙ্গে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তিনি চৌকস জেড ফোর্স গঠন ও পরিচালনা করেন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন দীর্ঘ নয় মাসে কোনো একটি দিনও তিনি তাঁর স্ত্রী বা পুত্রের কথা চিন্তা করেননি, দেশ আর দেশের মানুষই ছিল তাঁর সার্বক্ষণিক চিন্তায়। যুদ্ধ শেষে জিয়াউর রহমান পুনরায় সেনাবাহিনীতে ফিরে আসেন এবং ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফের পদে বহাল হন।

আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্রান্তিকালে বিদ্রোহী কবির ধূমকেতুর মতোই ত্রাতার ভূমিকায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব ঘটেছিল। তিনি একজন সৈনিক থেকে ক্রান্তিকালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এদেশের সমৃদ্ধির প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। জিয়াউর রহমানের সততা ও দেশপ্রেম ছিল সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে ও ঈর্ষণীয়। তাঁর দেশপ্রেমের প্রকৃষ্ট উদাহরণই হলো ‘বাংলাদেশ’। তাঁর সততা নিয়ে তার চরম শত্রুও কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী খোন্দকার মুশতাক আহমাদ ক্ষমতা দখল করে প্রেসিডেন্ট হলে সেনাবাহিনীসহ গোটা জাতির ভাগ্যোন্নয়নে তখন বিরাজ করছিল চরম অনিশ্চয়তা। এরই মধ্যে খোন্দকার মুশতাককে পাল্টা আরেক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করে আধিপত্যবাদের ক্রীড়নকরা ক্ষমতা দখল করে। ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বর আধিপত্যবাদীদের এদেশীয় চরেরা ষড়যন্ত্র করে জিয়াউর রহমানকে বন্দি করে। কিন্তু ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে সিপাহি-জনতা তাঁকে মুক্ত করেন। সে সময় কিংকর্তব্যবিমূঢ় নেতৃত্বশূন্য জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য জিয়াউর রহমানকে দায়িত্ব দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয় সৈনিক-জনতা।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতির চরম অধঃপতনের সময় মহান দেশপ্রেমের আলোকবর্তিকা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। দেশের নেতৃত্ব গ্রহণের পর জিয়াউর রহমান অল্প সময়ের মধ্যেই ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তলাবিহীন ঝুড়ির বদনাম মুক্ত করে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেন। তিনি একদলীয় শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেশে বাকব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা জিয়া জাতির নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি বিদেশে শ্রমবাজার তৈরি করে জনশক্তিতে পরিণত করেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশে ইপিজেড-এর শুভ সূচনা করেন এবং তা গণচীনের আগেই। তাঁর কর্মসূচির মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক দর্শন নিহিত রয়েছে যা হলো উৎপাদনমুখী রাজনীতি, বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি, ন্যায়ভিত্তিক শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা। এই বিষয়গুলো ছিল তাঁর রাজীনতির মূল লক্ষ্য।

তাঁর অন্যতম উপহার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তাঁর সুশাসনে উদীয়মান এক অমিত সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় আসন লাভ করে। জিয়াউর রহমান ছিলেন সমৃদ্ধ এবং উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও পথপ্রদর্শক। তাঁর সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। পার্থিব লোভ-লালসা ও ক্ষমতার মোহ তাঁকে ন্যায় ও সত্যের আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত করতে পারেনি। অন্যায় ও অসত্যের কাছে তিনি কোনোদিন মাথানত করেননি। জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততা, পরিশ্রমপ্রিয়তা, কর্তব্যনিষ্ঠা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা, নির্লোভ, নির্মোহ ও গভীর দেশপ্রেমসহ বহু সৎ গুণাবলী দিয়ে তিনি জাতির সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এক নতুন জাগরণ সৃষ্টি করেন। স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি দেশগড়া কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যেই জনগণের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তাঁর বলিষ্ঠ, গতিশীল ও পরিকল্পিত নেতৃত্বে দেশ সত্যিকার উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই দেশবাসীর প্রাণপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নেন।

মুসলিম বিশ্বে, জোটনিরপেক্ষ বলয়ে ও পাশ্চাত্যে তেজোদীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালনে, সার্কের সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে শহীদ জিয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের অগ্রভাগে এনে দিয়েছিলেন। জিয়ার ঈর্ষণীয় এই জনপ্রিয়তা ও দেশপ্রেমই তাঁর জন্য কাল হয়েছিল। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা চট্টগ্রামে তাঁকে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানের শাহাদতবরণে গোটা পৃথিবী শোকাভিভূত হয়ে পড়েছিল। এই শোকের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল শেরেবাংলানগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জানাজায়। লাখো লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সেদিন জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং অর্জিত স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র, যা আজ ভূলুন্ঠিত।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাণী:

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক, মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের অধিনায়ক, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করি। জাতির এক ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমান এক ঐতিহাসিক যুগান্তকারী দায়িত্ব পালন করেন। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য নেতৃত্বহীন জাতির দিশারী হয়ে শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় এবং তিনি যুদ্ধে অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। তিনি হন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। স্বাধীনতা-উত্তর দুঃসহ স্বৈরাচারী দুঃশাসনে চরম হতাশায় দেশ যখন নিপতিত, জাতি হিসেবে আমাদের এগিয়ে যাওয়া যখন বাধাগ্রস্ত, ঠিক সেই সংকটের এক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান জনগণের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন। মিথ্যা প্রতিশ্রুতির অপরাজনীতি দ্বারা জনগণকে প্রতারিত করে স্বাধীনতা-উত্তর ক্ষমতাসীন মহল যখন মানুষের বাক-ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে হরণ করে গণতন্ত্রকে মাটি চাপা দিয়েছিল, দেশকে ঠেলে দিয়েছিল দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে, বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির আন্তর্জাতিক খেতাবপ্রাপ্ত হতে হয়, জাতির এরকম এক চরম দুঃসময়ে ৭ই নভেম্বর সৈনিক-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে শহীদ জিয়া ক্ষমতার হাল ধরেন।

জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই তিনি বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। উৎপাদনমুখী রাজনীতি প্রবর্তন করে তিনি দেশকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে কৃষি বিপ্লব, গণশিক্ষা বিপ্লব ও শিল্প বিপ্লব, সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারি সহায়তার সমন্বয় ঘটিয়ে ১৪০০ খাল খনন ও পুনঃখনন করেন। গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করে অতি অল্প সময়ে ৪০ লাখ মানুষকে অক্ষর জ্ঞানদান করেন। এছাড়া গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ঠউচ) গঠন করে গ্রামাঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যবস্থা করেন। তিনি পল্লী চিকিৎসক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, ফলে তাঁর আমলে ২৭,৫০০ পল্লী চিকিৎসক নিয়োগপ্রাপ্ত হয় এবং তাতে গ্রামীণ জনগণের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি হয়। শহীদ জিয়া ছিলেন আধিপত্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক আপসহীন দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক। তাই সকল ধরনের আধিপত্যকামী বৈদেশিক চাপ ও অশুভ প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টাকে অগ্রাহ্য করে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ শহীদ জিয়ার এক অবিস্মরণীয় অবদান। যার কারণে দেশের সার্বভৌমত্ব শক্তিশালী হয় এবং স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মর্যাদার আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। তাই দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা নিজেদের নীল-নক্শা বাস্তবায়নের কাঁটা ভেবে জিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কিন্তু তাঁর এই আত্মত্যাগে জনগণের মধ্যে গড়ে উঠেছে দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে এক ইস্পাতকঠিন গণঐক্য। শহীদ জিয়ার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শনেই আমাদের জাতিসত্তার সঠিক স্বরূপটি ফুটে ওঠে যা আমাদের ভৌগোলিক জাতিসত্তার সুনির্দিষ্ট পরিচয় দান করে। বিশ্ব মানচিত্রে আমাদের আত্মপরিচয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখারও অবিনাশী দর্শন। শহীদ জিয়ার জন্মদিনে তাঁর প্রদর্শিত পথেই আমরা আধিপত্যবাদের থাবা থেকে মুক্ত হবো ও গণতন্ত্র ফিরে পাবো। আর এর জন্য সর্বশক্তি দিয়ে ‘গণতন্ত্রের মা’ গৃহবন্দি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি দূরদর্শী, দেশপ্রেম, সাহস, বীরত্ব, সততা, কর্মতৎপর, জনঘনিষ্ঠতা, ঔদার্য ও আড়ম্বরহীন এক কিংবদন্তী মহান রাষ্ট্রনায়কের জন্মবার্ষিকীতে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা, গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার, ন্যায় বিচার ফিরিয়ে আনা এবং মানুষের হারানো মৌলিক ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধার করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাই। আল্লাহ হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি :

মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ও আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ শেরেবাংলানগরস্থ শহীদ জিয়ার মাজারে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।বেলা ১২টায় দলের বিভিন্ন ইউনিট এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন শেরেবাংলানগরস্থ শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন।

জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দৈনিক সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে এবং ইতিমধ্যে পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে আজ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির উদ্যোগে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় বেলা ৩টায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত আলোচনা সভায় দেশব্যাপী জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দও সংযুক্ত থাকবেন।

শহীদ জিয়ার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ পেশাজীবী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শহীদ জিয়ার জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে চিত্রাঙ্কন, রচনা প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র প্রদর্শন এবং বিএনপি ও ড্যাবসহ চিকিৎসকদের সংগঠন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করবে। আজ নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিএনপির উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে। অনুরূপভাবে পরের দিন বুধবার নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে ড্যাব-ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হবে।

অনুরূপভাবে আজ সারাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ের ইউনিটসমূহ নিজেদের সুবিধানুযায়ী সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করবে।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্ট বার অডিটোরিয়ামে আগামীকাল বুধবার বেলা ২টায় শহীদ জিয়ার কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।