ওবায়দুল কাদের রাজাকার পরিবারের সদস্য: এমপি একরামুল

ওবায়দুল কাদের রাজাকার পরিবারের সদস্য: এমপি একরামুল

‘আমি কথা বললে তো আর মির্জা কাদেরের বিরুদ্ধে কথা বলব না। আমি কথা বলব ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে। একটা রাজাকার পরিবারের লোক এই পর্যায়ে এসেছে, তার ভাইকে শাসন করতে পারে না। এগুলো নিয়ে আমি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কথা বলব। আমার যদি জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি না আসে। তাহলে আমি এটা নিয়ে শুরু করব।’

ফেসবুক লাইভে এসে এভাবেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে রাজাকার পরিবারের সদস্য বলে মন্তব্য করেছেন নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে একরামুল করিমের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি থেকে প্রচারের কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভিডিওটি সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে তার আগেই ২৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়।

এ নিয়ে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এ ঘটনায় নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে একরামুল করিম চৌধুরী জানান, ভিডিও সরিয়ে নিলেও তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পরিবারের বিরুদ্ধে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সত্য এবং তিনি সত্য কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীরা খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, তার (ওবায়দুল কাদের) পরিবারে কারা রাজাকার ছিল। তবে ওবায়দুল কাদের একজন মুক্তিযোদ্ধা। দীর্ঘদিন ধরে তার ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে এলোমেলো বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি (ওবায়দুল কাদের) তার ভাইকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, এজন্য আমি এসব কথা বলেছি।’

এ প্রসঙ্গে বসুরহাট পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আমাদের পরিবারে কে রাজাকার তার প্রমাণ তাকে (একরামুল) দিতে হবে। না হয় জনতার আদালতে তার বিচার হবে, না হয় আমি অপরাধী হলে আমার বিচার হবে।’

আজ শুক্রবার সকালে ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পরিবার ও আমার পিতার যথেষ্ট অবদান রয়েছে। ওবায়দুল কাদের সম্মুখের মুক্তিযোদ্ধা। বরং একরাম চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা বার বার দল ও দলের নেতাদের সঙ্গে বেইমানি করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সত্য কথা বলায় এখন আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সত্য বলে যাব। আপনারা খবর নিন, কে কেমন, সত্য তুলে ধরার জন্য আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ রইল।’

একরামুল করিম চৌধুরীর বক্তব্যের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল কবির জুয়েল ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কাদের সাহেব শুধু কোনো রাজনৈতিক নেতা নয়, একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। আমরা কাদের কাছ থেকে রাজনীতি শিখব। এমন ঘটনা দুঃখজনক।’

এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে মানহানি মামলার আবেদন করেছেন সদর উপজেলার ১০ নম্বর অশ্বদিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. রিয়াজ উদ্দিন।

গতকাল দুপুরে নোয়াখালী চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের ২ নম্বর আমলি আদালতে তিনি এই মামলার আবেদন করেন। কিন্তু আদালতের বিচারক ছুটিতে থাকায় আবেদনের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী পলাশ চন্দ্র সাহা।

আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন বৃহস্পতিবার বিকালে কোম্পানীগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এসময় একরামুল চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপরাজনীতির অভিযোগ তুলেন আবদুল কাদের মির্জা।

বিক্ষোভ শেষে তারা একরামুল করিম চৌধুরী ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সামছুদ্দিন জেহানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।

পরে রাত ১টার দিকে এবং আজ সকালে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীতে একরামুল করিম চৌধুরীর অনুসারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীরারাও বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল থেকে আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।