ছাত্রদলের সমাবেশে পুলিশের লাঠিপেটা, গুলি; আহত ৫০

ছাত্রদলের সমাবেশে পুলিশের লাঠিপেটা, গুলি; আহত ৫০

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদ ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আয়োজিত ছাত্রদলের সমাবেশে নেতাকর্মীদের পুলিশ লাঠিপেটা করেছে।

কর্মসূচি ঘিরে রবিবার সকাল ১০টার দিক থেকে ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাব এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে তারা রাস্তায় নামেন।

এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। নেতাকর্মীদের যাকে সামনে পায়, তাকে লাঠিপেটা করে। চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া।

পুলিশের লাঠিপেটায় একপর্যায়ে নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। তারপর নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। তখন তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।

এ সংঘর্ষে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সহ-সভাপতি মামুন খান, সাজিদ হাসান বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, যুগ্ম সম্পাদক করিম প্রধান রনি, সহ সাধারণ সম্পাদক ইসা মমতাজ ইজাজ, আক্তারুজ্জামান আক্তার, মহানগর পূর্বের সহ-সভাপতি আরমান হোসেন বাপ্পি, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সাবেক সদস্য ওমর ফারুক শাকিল চৌধুরী, ইডেন কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব সানজিদা ইয়াসমিন তুলিসহ অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

জানা গেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর খেতাব বাতিলের প্রতিবাদে এ সমাবেশ করার কথা ছিল ছাত্রদলের। সমাবেশ শুরুর আগেই প্রেস ক্লাবের সামনে এবং বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নেয়। আর সমাবেশে আসা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রেস ক্লাবের ভেতরে অবস্থান নেয়। বেলা এগারোটার দিকে প্রেস ক্লাবের মূল গেট দিয়ে নেতাকর্মীরা বের হওয়ার চেষ্টা করলে এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। পরে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ দলটির নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা আনিসুর রহমান খন্দকার অনীক বলেন, লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ছিল। কর্মসূচি পালনের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে প্রায় ৫০০ নেতা-কর্মী জড়ো হয়েছিলেন। বেলা ১১টার পর হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে তাঁরা বের হওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ তাঁদের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। নেতা-কর্মীরা বের হওয়া মাত্রই পুলিশ বেপরোয়া লাঠিপেটা শুরু করে। এরপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি ছোড়ে। বিএনপি-ছাত্রদলের অনেকে আহত হয়েছেন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। সংঘর্ষে আহত ছাত্রদল নেতা ওমর ফারুক শাকিল জানান, আহত হাবিব উন নবী খান সোহেলকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার পিঠে লোহার পাইপ ঢুকে গিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। যে কারণে ক্ষতস্থানে অনেকগুলো সেলাই করতে হয়েছে।

ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেছেন, পুলিশের হামলায় ছাত্রদলের ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তারা ঢাকা মেডিকেল ও ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের ৬/৭ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া একজন ক্যামেরাপারসন আহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ছাত্রদলের ৩/৪ নেতাকর্মী তাদের কাছে আটক আছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

ডিএমপির রমনা জোনের উপপুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমরা আগে থেকেই জানতাম প্রেস ক্লাবের সামনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জড়ো হবে। অনুমতি না নিয়ে সমাবেশ করতে চাইলে আমরা তাদের বাধা দেই। কিন্তু তারা বাধা উপেক্ষা করে রাস্তায় নামতে চাইলে টিয়ার শেল ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেই।