কোটা বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ককে তুলে নিয়েছে ছাত্রলীগ

কোটা বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ককে তুলে নিয়েছে ছাত্রলীগ

ঢাকা, ২৫ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : কোটা সংস্কারের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি থেকে আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়কারী বিন ইয়ামিনকে তুলে নিয়েছে ছাত্রলীগ। এ অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, বিন ইয়ামিনকে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে তাড়াতাড়ি কর্মসূচি শেষ করার নির্দেশও আসে সরকার সমর্থক এই ছাত্রসংগঠনের নেতাদের কাছ থেকে।

রবিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ইয়ামিনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

আন্দোলনকারীরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষা সনদ গলায় ঝুলিয়ে ঝাড়ু হাতে নিয়ে রাজু ভাস্কর্য থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান হওয়ার কথা। এ জন্য সকাল ১০টা থেকে আন্দোলনকারীরা ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নিতে শুরু করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের জন্য তৈরি করা টি-শার্ট পরিহিত লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়ামিনকে ডেকে মধুর ক্যান্টিনে নিয়ে যান।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নির্দেশে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজামুল ইসলাম দিদার, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম ইহতেশাম, আইনবিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, স্কুলছাত্রবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদিন, কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেনসহ কয়েকজন ইয়ামিনকে নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন আন্দোলকারীরা।

মধুর ক্যান্টিনে আগে থেকেই বসা ছিলেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। ইয়ামিনকে সেখানে নেয়ার পর তাঁর পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হয় এবং কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়।

ঘটনাস্থলে থাকা একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ সময় এসএম জাকির হোসাইন বলেন, এখানে তোর আসার উদ্দেশ্য কী?
ইয়ামিন বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না। আমি আমার বিশ্বাস থেকে এসেছি।

একপর্যায়ে সোহাগ-জাকির আন্দোলনকারীকে মধুর ক্যান্টিনের গোলঘরের ভেতরে নিয়ে যান। ভেতরে ছাত্রলীগের নেতারা সবাই চেয়ারে বসে ছিলেন। সেখানে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীকে দাঁড় করিয়ে রেখে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

বিষয়টি জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ গণমাধ্যমকে বলেন, তাঁর কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম, সে কী কারণে কোটা সংস্কার চায়, আর সে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে কি না। তবে আমরা তাঁকে কোনো মানসিক চাপ দিইনি।

তবে আন্দোলনের সমন্বয়কারী হাসান আল মামুন বলেন, ইয়ামিনকে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁরা কয়েকজন মধুর ক্যান্টিনে গিয়েছিলেন। তখন তাঁদের তাড়াতাড়ি আন্দোলন শেষ করার নির্দেশ দেন ছাত্রলীগ নেতারা।

এদিকে টিএসসি চত্বরে সন্ত্রাসবিরোধী শহীদ রাজু ভাস্কর্য থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত গলায় শিক্ষা সনদ ঝুলিয়ে রাস্তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নর অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ- এর ব্যানারে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তবে এতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।

তাঁদের পাঁচ দফা দাবি হলো- কোটা সংস্কার করে ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা, কোটাপ্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া, চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটার কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়া, চাকরিক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাটমার্ক ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা।

গত ১৮ মার্চ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলা প্রত্যাহার ও সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়। সেখান থেকে আজকের এই অভিনব প্রতিবাদের ঘোষণা আসে।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৭১৮ঘ.)