জেএসডি’র আলোচনা সভায় বক্তারা

বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে

বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে

বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। শনিবার ঐতিহাসিক প্রবাসী সরকারের ভুমিকা ও প্রস্তাবিত ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এ আহবান জানান তারা। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইতিহাসে সত্য না, এটা বলা অপরাধ। আওয়ামী লীগ তাদের তৈরি করা ইতিহাস প্রতিষ্ঠা করার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। যারা দীর্ঘকাল ধরে স্বাধিকার, স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার লড়াই করেছেন তাদের কারো নাম উচ্চারণ হয় না। এমনকি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমদ, জিয়াউর রহমানের নামও উচ্চারিত হয় না।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সনের যুদ্ধ কোন একক ব্যক্তি বা দলের নয়।

মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল সমগ্র জাতির আত্মবিকাশের আকাঙ্খাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সংবিধানকে ছিন্নভিন্ন করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খাকে তিরোহিত করে। বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় রাজনীতির আমূল সংস্কার করে অংশীদারিত্ব ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। এ লক্ষ্যে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুনির্দিষ্ট দার্শনিক ভিত্তি। ২৫শে মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার এবং গণহত্যা শুরুর মধ্য দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কবর রচিত হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সম্পন্ন হয়।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে সুযোগ্য নেতৃত্ব না থাকলে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন চরম ঝুঁকিতে পড়তো। এসব গভীর সত্য উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে জাতির ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীর মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে না। স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা কোন আদর্শিক সংগ্রাম কারো একক কৃতিত্বে সম্পন্ন হতে পারেনা। স্বাধীনতা ও জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে যাদের অসামান্য অবদান রয়েছে তাদেরকে সরকার সামান্য মর্যাদা দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে। বর্তমান সরকার অতিরিক্ত পরশ্রীকাতরতা সম্পন্ন।

আলোচনা সভায় আ স ম রব নিম্নোক্ত পাঁচ দফা উত্থাপন করেন;

(১) মুক্তিযুদ্ধের উজ্জ্বল কীর্তির স্মারক হিসেবে ১০ এপ্রিল বা ১৭ এপ্রিলকে 'প্রজাতন্ত্র দিবস' (জবঢ়ঁনষরপ উধু) ঘোষণা করতে হবে।
(২) ঢাকায় প্রজাতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে 'প্রজাতন্ত্র স্তম্ভ' স্থাপন করতে হবে।
(৩) সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার- এ দর্শনের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় 'অংশীদারিত্ব ভিত্তিক 'শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।
(৪) সকল রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এবং পাঠ্যপুস্তকে প্রবাসী সরকার, মুজিব বাহিনী সহ অন্যান্যদের ভূমিকা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
(৫) মুক্তিযুদ্ধে যার যা অবদান তার স্বীকৃতি দিতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গত ৫০ বছরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মহান ভাবাদর্শকে ধুলিস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সকল স্বপ্নকে গুড়িয়ে দিয়েছে। স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ লড়াই করতে হবে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, দেশ চরম সংকটে। সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধতা দেয়ার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তিদের উপেক্ষা করে তথাকথিত সুবর্ণ জয়ন্তী আয়োজন করেছে। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, সা কা ম আনিছুর রহমান খান, সিরাজ মিয়া, তানিয়া রব প্রমূখ।