ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্র-জনতার নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার ও নাগরিক সমাজ।
এই দাবিতে আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক সমাজ’-এর ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। অবস্থান কর্মসূচিতে গ্রেপ্তারকৃতদের বাবা, মা, ভাইসহ অন্তত ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আটক ওই ছাত্ররা কি কাউকে খুন করেছে, বলাৎকার করেছে, চাঁদাবাজি বা ছিনতাই করেছে? তারা মানুষের অধিকারের কথা বলেছে, যৌক্তিক প্রতিবাদ করেছে। মানুষের অধিকারের কথা বলা যদি অপরাধ হয়, আমিও সেই একই অপরাধে অপরাধী। আমাকেও গ্রেপ্তার করুন। ১৯৫২ সালে ছাত্ররা অধিকারের কথা বলেছে বলেই আমরা ভাষার অধিকার পেয়েছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে। অনেক স্বৈরশাসক সরকারের পতন হয়েছে।’
অবস্থান কর্মসূচিতে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, একটি সরকার কতটা দুর্বল হলে ৩৫ জন ছাত্রের ভয়ে কাঁপতে থাকে। সরকার তাদের গ্রেপ্তার তো করেছেই, এরপর নির্যাতন করেছে, তাদের রিমান্ডে নিয়েছে। রিমান্ড এমন একটা ফালতু জিনিস, কেবল অত্যাচার করা ছাড়া এর কোনো কাজ নেই। রিমান্ডে যারা প্রশ্ন করে, তাদের নিজেদের কোনো ধারণাও নেই যে, দেশে কী হচ্ছে, আমরা কী চাই, কেন চাই, চাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আছে কি না। ছাত্রনেতারা এমন কি করেছে যে তারা জামিন পাবে না? তাদের জামিন দেওয়া হবে না কেন? রিমান্ডে অত্যাচার করে অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়। আদালত এ বিষয়ে জানেও। রিমান্ড ব্যবস্থা তুলে না নিলে দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা মুশকিল হয়ে যাবে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমাদের ছাত্ররা কি চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করেছিল? তাহলে তাদের কেন গরুর মতো কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করা হয়? কাশিমপুর কারাগারে বন্ধুদের খোঁজ-খবর নিতে এবং তাদের খাবার দিতে গিয়ে আমাদের পাঁচজন আটক হয়েছেন। কারাফটক থেকে এভাবে আটক করা কতটা অমানবিক! এই রকম কি কোনো আইন এদেশের আইনে আছে? এছাড়া হাস্যকরভাবে আরও কয়েকজন ছাত্রনেতাকে আটক করা হয়েছে। তাদের নামে কোনো মামলাও ছিল না। তাদের এক একজনকে এক এক মামলায় ধরে রিমান্ডের পরে যখন আদালতে জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। আবার নতুন কোনো মামলায় তাদের জড়ানো হয়। এর মাধ্যমে যারা বাইরে আছে, তাদের ভয় দেখানো হয়। তাই বলে কি আমরা থেমে যাব? এই পরিণতির কারণে কি আমরা হেরে যাব? কখনওই না।’
গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রনেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে নুরুল হক নুর বলেন, তাদের যদি মুক্তি দেওয়া না হয়, তাহলে আমাদের ঈদ হবে গণভবনের সামনে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তিনজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কী করছেন? ৫১ জনের মধ্যে পাঁচজন কাশিমপুর কারাগারে বন্ধুদের দেখতে গিয়েছিল। সেখানে তাদের আটক করা হয়। এই সরকার পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে ভয় এবং ত্রাস সৃষ্টি করতে চায়। ছাত্রদের আজকে ভয় দেখানো হচ্ছে। এদেশের ছাত্রসমাজ এর জবাব দেবে। এমন অন্যায় চলতে থাকলে আপনাদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত অতি দ্রুত উৎখাত হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান, সদস্য সচিব আরিফ হোসেন, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান প্রমুখ।