সরকারকে মির্জা আলমগীর

সোজা বলে দেন যে, আমরা তাকে অনুমতি দেব না

সোজা বলে দেন যে, আমরা তাকে অনুমতি দেব না

খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে, ভয় পেয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তিনি স্বাভাবিকভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন। তবে এখনো তাঁর হার্ট ও কিডনি জটিলতা রয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘কেন আপনারা খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার অনুমতি নিয়ে খোঁড়া যুক্তি দিচ্ছেন। সোজা বলে দেন যে, আমরা দেব না। সেই ক্ষমতা তো আপনাদের নেই।’ তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানও এমন ছিলেন না। তিনিও তাঁর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চিকিৎসার সুবিধা দিয়েছেন, ছেড়ে দিয়েছেন। এমনকি তাদের ব্যক্তিগতভাবেও সাহায্য করেছেন। কিন্তু আপনাদের (বর্তমান সরকারের) যোগ্যতা নেই। থাকলে অনেক আগেই খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দিতেন।’

খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে অনুমতি না দেওয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার বলছেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতির এমন নজির নেই। কিন্তু ১৯৭৯ সালে আমাদের প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী আ স ম আব্দুর রব জেলে ছিলেন। তখন জিয়াউর রহমান দায়িত্বে ছিলেন। পরে তাঁকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে দেশে এসেছিলেন।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ২০০৮ সালে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাজা মাফ করে দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। কেন খালেদা জিয়ার বিষয়ে খোঁড়া যুক্তি দিচ্ছেন। সোজা বলে দেন যে, আমরা তাকে (বিদেশে যেতে) অনুমতি দেব না।

খালেদা জিয়া সম্পর্কে সরকারের কিছু মন্ত্রীর ‘বিদ্রুপাত্মক’ মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এসব মন্ত্রী যারা ওইভাবে ক্ষমতায় না এলে কোনোদিন এমপি হওয়ারও স্বপ্ন দেখতে পারত না, তারা আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সম্পর্কে যে ধরনের উক্তি করছেন তা থেকে বিরত থাকবেন। ভবিষ্যতে এই ধরনের উক্তি করলে তার যথাযোগ্য জবাব এ দেশের জনগণ আপনাদের দিবে।’

খালেদা জিয়া সম্পর্কে ‘যাচ্ছে তাই কথা’ বলে সরকার পার পাবে না বলে হুঁশিয়ারিও দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘যেসব কথা বলা হচ্ছে, এখন এগুলো শুধু অশালীন নয়, অমার্জিত এবং অগ্রহণযোগ্য। আমি আবারও বলছি, দয়া করে সংযত হোন, দয়া করে আপনাদের কথা—এটা একটু কমান। যাচ্ছে তাই বলবেন, আর আপনারা মনে করবেন সবসময় পার পেয়ে যাবেন এসব কথা। এভরি থিং ইজ বিং নোটেড অ্যান্ড দি পিপলস অব দিস কান্ট্রি উড বি গিভ আনসার টু টাইমলি। সময় যখন আসবে তারা তার জবাব দিয়ে দেবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তাঁকে (খালেদা জিয়া) অন্তরীণ করে রাখা, তাঁকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া—এটাই সরকারের লক্ষ্য। তাঁর দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। মূল উদ্দেশ্যটা কী? এদেশে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে একটি দল আছে সেটা হচ্ছে বিএনপি। জনগণের রাজনীতি যেটা সেটা হলো আপনারা একটা মাত্র দল ধারণ করে, সেটা হচ্ছে বিএনপি। অর্থাৎ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশের অন্তরাত্মা সেই রাজনীতি করে বিএনপি। এই দলের মূল শক্তি জনগণ। বিএনপির ভোটাররা যারা বাংলাদেশি, যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম দেখতে চায়, শতকরা ১০০ জন মানুষের যে মূল্যবোধ, ধর্মীয় বোধ, চিন্তাবোধ যারা ধারণ করে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে বিএনপি কাজ করে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের (সরকার) এই আচরণ ম্যাডামকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে না দেওয়ার বিষয়টা এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক, অমানবিক এবং জনগণকে ভ্রান্ত ধারণা দেওয়া হচ্ছে, বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা তখনও জানিয়েছি, এখনো জানাচ্ছি। আমরা কিন্তু খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার জন্য আবেদনটা করি নাই। আবেদটা করেছে পরিবার। ইটস ভেরি লাইটলি অ্যান্ড জেন্যুইন। তারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়, যারা আবেদনটা করেছেন। সেখানে সবাই এসপেক্ট করেছিল এমনকি বিদেশিরা পর্যন্ত তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে সুযোগ দেওয়া হবে। সেটা তারা দেয় নাই।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আপনারা শুধু কিছু পুঁজিবাদীর স্বার্থে, কিছু লুটপাটকারীর স্বার্থে পুলিশ দিয়ে শ্রমিকদের হত্যা করছেন। বাঁশখালীতে যে ঘটনা ঘটেছে, এটা তো সম্পূর্ণ শ্রমিকদের হত্যা করা হয়েছে কিছু পুঁজিবাদীর স্বার্থে। শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন চেয়েছিল, তারা ছুটি বাড়িয়ে নিতে চেয়েছিল। গতকাল টঙ্গীতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়েছিল। কেন? আলোচনা করেন, কথা বলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে বন্দুক বের করে গুলি করলেন?... কেউই নিরাপদ নয় আজকে।

লকডাউনে বিএনপির নিপুণ রায় চৌধুরীসহ নেতাকর্মী এবং আলেম-ওলামাসহ বিরোধী দলের যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঈদের আগেই তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান বিএনপির মহাসচিব।