জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই খালেদা জিয়ার জন্মতারিখ নিয়ে রিট: বিএনপি

জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই খালেদা জিয়ার জন্মতারিখ নিয়ে রিট: বিএনপি

জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মতারিখ নিয়ে রিট করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার জন্মতারিখের নথি তলবের বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আজ সোমবার দুপুরে তিনি এই মন্তব্য করেন।

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে বিষয়টার (খালেদা জিয়ার জন্মতারিখ) কথা বলা হয়েছে, এটা তো ফেইক। এভারকেয়ারের যে রিপোর্টের কথা বলা হয়েছে, এই ধরনের কোনো রিপোর্টই এভারকেয়ার করে নাই। যে তারিখটা বসিয়েছে তারা, এটা ফলসলি করা হয়েছে। যে কাগজটা তারা দিয়েছে, যার ওপরে আদালত একটা হুকুম দিয়েছে। এই হুকুমটা আমি জানি না, বিং এ ল’ইয়ার.. একটা কিভাবে দিলেন?

বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশে তো রাজনীতি নেই। এখন উদ্দেশ্যই তাদের একটাই- এই ধরনের (জন্মদিন) ইস্যুগুলো তুলে এনে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা, ডায়ভার্ট করার চেষ্টা করা, মূল সমস্যা থেকে জনগণকে ভুল দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। আর কিছুই না। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এসব তারা করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে একদলীয় শাসনে দেশ চলছে। এটা থেকে প্রমাণিত হয়- জুডিশিয়রি ইজ নট ফ্রি। জুডিশিয়ারির কিন্তু এটা আমলেই নেওয়া উচিত ছিল না। দে শুড হেল বিন টোটালি রং। যে ভদ্রলোক করেছেন সে তো পারসোনালি সংক্ষুব্ধ না। আমি যতটুক আইন বুঝি যে, রিটটা তখনই হতে পারে যদি কেউ ব্যক্তিগতভাবে সংক্ষুব্ধ হন। ব্যক্তিগতভাবে যদি সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, নিজে সংক্ষুব্ধ হয় তখন হি কেন গো ফর এ রিট। এটা তা না। উনার জন্মদিনের ব্যাপারে কি আছে, না আছে এটা তো তাদের দায়িত্ব না।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন, বহু লোকের কিন্তু জন্মতারিখ আসল একটা, আর সার্টিফিকেটে তারিখ আরেকটা আছে। কারণ হচ্ছে, বিশেষ করে আমাদের জেনারেশনের সময়ে তখন সঠিকভাবে বাবা-মায়ের জন্ম তারিখ মনে রাখতে পারতেন না—জন্ম কবে হয়েছে, ডায়েরি-টায়েরি ম্যানটেইন করতেন না। ফলে দুই রকম হতে পারে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা কোনো দিন ইস্যু হতে পারে না, দিস ক্যান বি ইস্যু। হ্যাঁ, এখন পার্টিকুলার একটা ডেটে কেউ জন্ম নিতে পারবে না—এটা একটা ঘোষণা দিয়ে দিলে তো হয়ে যায়। নো বডি ওইদিন…হিসাব করে আপনাকে সন্তানের জন্মদানের কথা চিন্তা করতে হবে। এ ছাড়া তো উপায় নাই।’

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন বিনষ্ট হবে—মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ নিয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যাবলী ইতিপূর্বে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত হয়েছে। কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের অধীনে মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কর্তৃত্ব হস্তান্তর করা হলে তা স্বাধীন নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যূনতম সম্ভাবনাটুকু বিনষ্ট করবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে এই ধরনের সিদ্ধান্ত হীনরাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হলে তা ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের ন্যূনতম পরিসরকেও ধ্বংস করবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে চিরতরে ধবংস করবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির শেকড় আছে বলেই বিএনপি টিকে আছে। এতো নির্যাতন, গুম-খুন, হাজার হাজার মামলার পরও বিএনপি টিকে আছে শুধু এই দলের ‘ডিপ রুট’, মানুষের হৃদয়ের অনেক গভীর চলে গেছে বিএনপি।

সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেখুন দুর্নীতি কোন মাত্রায় গেছে যে পাবনার মতো জেলা শহরের একটা কোম্পানির কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছে ভ্যাটের জন্য। ব্যবসায়ীদের একটা নীরব কান্না আছে। এভাবে তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চলছে।

নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমার ফেসবুক, টুইটার এগুলোর রহস্য নিয়ে আমি খুব উদ্বিগ্ন। আমি অনেকবার বলেছি। আমি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার চিঠি দিয়েছি, উকিল নোটিশ দিয়েছি। তারপরেও দেখি যে, আমার নামে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট খোলা আছে। আমরা যতদূর জানি যে, সার্ভিলেন্সে এই সমস্ত মিডিয়ায় যখন গোয়েন্দারা ঢুকে তখন তারা বিভিন্ন রকম তৈরি করে। এটা শোনা কথা। কোথায় যাবো বলেন? কোনো ফেসবুক নেই। যেগুলো ফেইক। আমি নিজে একবার বিবৃতি দিয়ে বলেছি। আমি থানায় জিডি করেছি থানায়, আমি মামলা করেছি, উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে।