আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই লক্ষ্য: মির্জা আলমগীর

আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই লক্ষ্য: মির্জা আলমগীর

ঢাকা, ৩১ মার্চ (জাস্ট নিউজ) :বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমানে আমাদের সামনে একটাই লক্ষ্য। সেটি হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। এর বাইরে আর কোনো বিকল্প চিন্তার সুযোগ নেই। আগে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি বাকি সব পরে।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রতিটি মানুষ অপেক্ষায় আছে একবার মাত্র সুযোগ চায়, সুযোগ পেলে এই সরকারকে দেখিয়ে দেবে। তাই সবাই জাগ্রত হোন। আন্দোলন, আন্দোলন, এবং আন্দোলন। রাজপথের আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। এখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। এটাকে বেগবান করে রাজপথে নামতে হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আজ গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে। আজ আসুন সবাই ফেটে পড়ুন, রাজপথে নেমে আসুন। এখন আর বসে থাকার সময় নেই একটাই লক্ষ বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। এ ব্যতীত অন্যকিছু নয়। আমাদের একটাই পথ আন্দোলন আন্দোলন আন্দোলন। কারণ আন্দোলনের বিকল্প কোনো পথ নেই। এখন আমাদের ঘরে বসে থাকার সময় নেই, আমাদের অধিকার, নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকারের জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে।

মির্জা আলমগীর বলেন, সব দল-মতের লোককে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে, ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতো সবাইকে একসঙ্গে আন্দোলন করতে হবে। একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে যেমন তিনি সবাইকে তেমন মনে করে। তাই তার কথার উত্তর দেওয়া আমাদের রাজনৈতিক শিষ্টাচারে নেই। তাই আমি তার কথার জবাব দিতে রাজি না।

মির্জা আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো বিরোধী মতকে সহ্য করতে পারে না। আর সেজন্যই তারা গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছো। তারা জানে বেগম খালেদা জিয়া রাজপথে নেমে আসলে আবার সেই ১৯৯০ সালের মত জনবিস্ফোরণ ঘটবে। তাই তাকে আটকে রেখেছে। তিনি বলেন, আজ আমরা এমন একটি সময় স্বাধীনতা দিবস পালন করছি যখন আমাদের সব স্বপ্ন ও অধিকারগুলোকে ভেঙে চুরমার করা হয়েছে। যে চেতনার জন্য আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম তা আজ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। কে ধ্বংস করেছে যারা আজ ক্ষমতা দখল করে রেখেছে জোর করে। কারণ তাদের চরিত্রই এটা, এটা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের যত বড় মেগা প্রজেক্ট তত বড় মেগা চুরি। কারণ তারা এক একটা মেগা প্রজেক্ট চালু করে দেশের সম্পদ চুরি করছে। দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যেখানে আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতারা ব্যর্থ হয়েছে সেখানেই বিএনপি ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সফল হয়েছেন। আর সেই জন্য জিয়াউর রহমানকে ভয় পায় আওয়ামী লীগ। শুধু জিয়াউর রহমান নয়, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, বিএনপির নেতাকর্মীকে ভয় পায়। শুধু তাই নয় বিএনপিকে সমর্থন করে বলে দেশের জনগণকে ভয় পায়। আর সেই জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে। তারা চায় আবারো ভোটারবিহীন নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে বাদ দিয়ে ৫ জানুয়ারি মার্কা কোনো নির্বাচন হতে দিবে না, হবে না।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে না। কারণ তারা জানে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ ভেঙে ভোট দিলে তারা ৩০টি আসনও পাবে না। তাই সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোট দিতে ভয় পায়।

সাবেক এ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এটি ঐতিহাসিক সত্য। এটিকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ইতিহাস। দেশের মানুষের মনে আশা করেছিলো আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন। কিন্তু তিনি সেটা পারেননি। করলেন মেজর জিয়া। আর সে জন্য বর্তমান সরকার তার নাম সহ্য করতে পারে না। তার নাম শুনলেই ভয় পায়।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজ আমরা এমন একটা সময়ে আলোচনা সভা করছি যখন আমরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বৈরাচার হিসেবে। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে এ স্বীকৃতি আমাদের জন্য লজ্জার। দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে নিজের জীবন দেয়নি স্বৈরাচার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য না। এটি দেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত লজ্জার।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বর্তমানে স্বাধীনতার চেতনা হচ্ছে একদলীয় শাসন, বিরোধী দলকে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার পালন করতে দেওয়া হবে না, মানুষের কথা বলার অধিকার থাকবে না। কিন্তু এ স্বাধীনতার চেতনা দেশের জনগণ গ্রহণ করবে না। স্বাধীনতার চেতনা এখন হয়ে গেছে একটি রাজনৈতিক ব্যবসা। কিন্তু দেশের জনগণ স্বাধীনতার চেতনাকে রাজনৈতিক ব্যবসায় পরিণত করতে মুক্তিযুদ্ধ করেনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, সরকারের দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ অনেক বেশি পেছনে চলে গেছে। কিন্তু বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ আরো ৬-৭ বছর আগে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতো।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, যে দেশে গণতন্ত্র নেই সে দেশে উন্নয়নশীল দেশের তকমা পুরোপুরি অর্থহীন। এটি জনগণের কাজে আসবে না। আজ দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষের কথা বলার অধিকার নেই। অথচ তকমা লাগানো হয়েছে উন্নয়নশীল দেশের। আসলে উন্নয়নশীল দেশের এ তকমা অর্থহীন। কারণ গণতন্ত্র ছাড়া কখনও সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

সাবেক এ আইনমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের সামনে ৩টি এজেন্ডা রয়েছে। যার প্রথমটি হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি। আমরা আমাদের নেত্রীকে ফিরে পেতে চাই। দ্বিতীয়টি হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, যাতে দেশের মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। আর তৃতীয়টি হচ্ছে এখনই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এখন থেকেই নির্বাচনের জন্য কাজ শুরু করতে হবে।

মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে ভয় পায়, তারা জনগণকে ভয় পায় বলে তাদের মোকাবেলা করার সাহস নেই। আর সে জন্য তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপির নয়, আওয়ামী লীগের দাবি ছিলো। আজ এখন তারাই বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার নাই।

সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন আজ মিথ্যা মামলায় কারান্তরীণ। কিন্তু তারপরও আমাদের কর্মসূচিতে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করে। আর সেই ভয়ে ভীত হয়ে বর্তমান সরকার আমাদের কোনো সভা সমাবেশের অনুমতি দেয় না।

মির্জা আব্বাস আরো বলেন, বর্তমান সরকার মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারাগারে আটকে রেখেছে। কারণ তিনি মানুষের কথা বলার অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন করছেন। আমি সরকারকে বলতে চাই মানুষের কথা বলার, ভোটের ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। না হলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হবে।

ড. আবদুল মঈন খান বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও আজ কেন স্বাধীনতাকে খুঁজতে হচ্ছে? বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারকে এর জবাব দিতে হবে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম কথা ছিলো গণতন্ত্র, কিন্তু সে গণতন্ত্র আজ ভুলুণ্ঠিত। এসবের জন্য ভোটারবিহীন সরকারকে জবাব দিতে হবে। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজ আমাদের শপথ নিতে হবে, যতক্ষণ বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে না, ততক্ষণ আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্ত করে তার নেতৃত্বে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করবো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা একটা বৈষম্যহীন সমাজের জন্য, সন্ত্রাস মুক্ত শিক্ষাঙ্গনের জন্যই, গণতন্ত্রের জন্য পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু তার কোনোটাই আজ প্রতিষ্ঠিত নেই। এসব প্রতিষ্ঠা করতে হলে দরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার। আর তার জন্য লড়াই করছেন বেগম খালেদা জিয়া সে জন্য তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিশ্বের কোথাও জুলুমবাজ সরকার টিকে থাকতে পারেনি, বাংলাদেশেও পারবে না। বর্তমান স্বৈরাচার সরকারকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে বিদায় করা হবে।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন জমির উদ্দিন সরকার, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৯১০ঘ.)