করোনা হেল্প সেন্টার থেকে কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে: বিএনপি

করোনা হেল্প সেন্টার থেকে কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে: বিএনপি

করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির পদত্যাগ চেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। রোববার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির করোনা পর্যবেক্ষণ সেলের আহ্বায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য এই দাবি জানান। গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে সারাদেশে দলের হেল্প সেন্টারে ওষুধ সামগ্রী পাঠানো উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, দেশে সরকার নেই। উচ্চ পর্যায়ে কমিটি মিটিং করে গার্মেন্টস খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলো। সেই পর্যায়ে সিনিয়র সেক্রেটারি বা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আছেন। তাদের মাথায় এটুকু ঢুকলো না যে, আমরা যে খুলে দিচ্ছি এই লোকগুলো কিভাবে আসবে? এই যে উদাসীনতা। কারণ মানুষ নিয়ে তারা তো ‘ইন্টারেস্টেড’ না। তারা ভোট করে ক্ষমতায় আসবে না, ভবিষ্যতে আসবে যে তারও কোনো চিহ্ন নেই। এ জন্য জনগণ ‘ইজ নট ফ্যাক্টর’। আমি মনে করি এই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি যে মিটিং করলো তাদের এখনই পদত্যাগ করা উচিত।

টুকু বলেন, সরকার যেভাবে এই ধরনের অতি মহামারীকে হেন্ডেল করছে তাদের আর এক মিনিট ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। যারা মানুষের জানমাল রক্ষা করে না, তারা সরকার চালাতে পারে না। আমি তো মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর সুবুদ্ধির উদয় হোক। ক্ষমতা হস্তান্তর করুক, ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশের মানুষকে সেবার পথ সুগম করে দিক।

বিএনপির এই নীতি নির্ধারক আরো বলেন, আমরা প্রতিদিন সারাদেশে স্থাপিত দলের হেল্প সেন্টার থেকে মানুষের যে আহজারি, তার খবর পাচ্ছি। হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে না, আমাদের কাছে আসে। আমরা তো হাসপাতাল না, আমরা হেল্প সেন্টার। প্রতিদিন শত শত লোক আসছে যে, আমাদেরকে এখানে রাখেন।

তিনি বলেন, জেলা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন নেই। প্রতিটি জেলা সদরে কী পরিমাণ অক্সিজেনের অভাব চলছে, আপনারা যদি খোঁজ নেন পাবেন। তাই আমরা জনগণের দল হিসেবে আমরা যার যা আছে তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আপনারা শুনে অবাক হবেন যে, এই প্রথম আমরা কেন্দ্র থেকে ওষুধ দিচ্ছি। এতদিন আমাদের দলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা তাদের নিজেদের পয়সা দিয়ে মানুষকে সেবা করেছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমাদের তৃণমূল কর্মীরা অমানবেতর জীবনযাপন করছেন, না খেয়ে থাকছেন, মামলা মোকাদ্দমায় জর্জরিত। এখনো বিএনপির করোনা হেল্প সেন্টার থেকে আমাদের দলের কর্মীদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, তাদের না কি ওয়ারেন্ট আছে। আমার প্রশ্ন তাদের কাছে, এখন মূখ্য উদ্দেশ্য কী, মানুষকে বাঁচানো, না কি বিরোধী দলকে নিপীড়ন করার?

রফতানিমুখী শ্রমিকদের গত দু’দিনের দুর্ভোগের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, দু’দিনে যা দেখেছি আমরা, চোখের পানি রাখতে পারিনি। আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জে, যমুনার পাড়ে। লাখো মানুষের ভিড় হয়েছে। মানুষ যারা খেতে পারে না তারাও খাবার নিয়ে পথযাত্রীদেরকে সাহায্য করেছে। কোনো প্রশাসনের কোনো লোক আসেনি। এই হলো জনগণের প্রতি সরকারের কমিটমেন্ট।

টুকু বলেন, আমরা কাজ করছি, মানুষের পাশে আছি। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিনিয়ত খবর রাখছেন। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) অসুস্থ। যখনই আমাদের মহাসচিব দেখা করতে যান তিনি জিজ্ঞাসা করেন- আমরা কী কাজ করছি, কিভাবে মানুষকে সহযোগিতা করছি।

বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা জানান, এ পর্যন্ত বিএনপি সারাদেশে প্রায় ৬০ জেলায় ৬০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার হেল্প সেন্টারের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। সাড়ে নয় হাজার কোভিডি-১৯ আক্রান্ত রোগীকে ওষুধসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। প্রায় ২০ লাখ মাস্ক ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ২৫ হাজার ২৫০ জন কোভিড আক্রান্ত রোগীকে টেলিফোনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছে দলের সকল পর্য়ায়ের কর্মকর্তারা। হেল্প সেন্টার থেকে ওষুধ, মাস্ক, স্যানিটাইজার, অক্সিজেন সরবারহ, অ্যাম্বুলেন্স সুবিধাসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ সেবা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান টুকু।

এছাড়াও গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যায়ে মানুষকে টিকা পাওয়ার জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়ায়ও দলের নেতা-কর্মীরা কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

বিএনপির স্বাস্থ্য-বিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিকুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন, মানিকগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ ও নারায়নগঞ্জ মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু। পরে তাদের হাতে ওষুধ সামগ্রী তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সালাম প্রমুখ।