সাইফুর রহমানের হাতে অর্থনীতির সফল বাস্তবায়ন হয়েছে : মির্জা আলমগীর

সাইফুর রহমানের হাতে অর্থনীতির সফল বাস্তবায়ন হয়েছে : মির্জা আলমগীর

বিএনপি সরকারের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের হাতেই দেশে ‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতি’র সফল বাস্তবায়ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রবিবার সন্ধ্যায় গিয়ে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের কর্মময় জীবন তুলে ধরতে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমান সাহেব মনে করেছিলেন, সাইফুর রহমানকে তার সাথে পেলে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে, ব্যবসা-বাণিজ্যকে একটা নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা যাবে। দেশটাকে সৃজনশীল অর্থনীতিতে পরিণত করা যাবে। তিনি তা প্রমাণও করেছিলেন।

সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, অর্থনীতিবিদদের সাথে যখন কথা হয়, তখন তারা বলেন যে সাইফুর রহমান সাহেবের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব একটা স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা। আমার বন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সাইফুর রহমানের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল তিনি বাংলাদেশকে একটা স্টেবল মাইক্রো ইকোনমি উপহার দিয়েছিলেন।

পোশাক শিল্পের বহুমুখীকরণে সাইফুর রহমানের চিন্তার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু গার্মেন্টেসে উনি থাকতে চাননি। গার্মেন্টস শিল্পকে অনেক সময়ে ব্যঙ্গ করে বলতেন, তুমি শুধুমাত্র দর্জির একটা শিল্প বানাইবা। বাংলাদেশকে তিনি একটা ম্যানুফেকচারিং কান্ট্রি হিসেবে তৈরি করতে চেয়েছিলেন। যে কাজটি তিনি শুরু করেছিলেন ইপিজেডগুলোর মাধ্যমে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাইফুর রহমান বিরোধিতার মুখে ভ্যাট প্রবর্তন করেছেন। যার ফলোশ্রুতি আজকে বাংলাদেশের রাজস্ব আহরণ অনেকগুণ বেড়ে গেছে। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ও নারী শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করেছিলেন তিনি। বেগম খালেদা জিয়ার দিকনির্দেশনায় নারী শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষায় দারিদ্র্য শিশুদের নিয়ে আসার জন্য তিনি শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি প্রবর্তন করেছিলেন। এসব ছিল তার সৃজনশীল পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, সাইফুর রহমানের ওপর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আস্থা ছিল, জিয়াউর রহমানেরও আস্থা ছিল, গোটা জাতির আস্থা ছিলে। তিনি ১২ বার সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছেন। পার্থক্যটা এখানে যে তিনি সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট নিতে চাননি। তিনি ঋণের আবদ্ধ হতে চাননি। ঋণে ডুবে মরতে চাননি। যে কারণে অত্যন্ত শৃঙ্খলার মধ্যে ধীরে ধীরে আগে খুটিকে শক্ত করে দেশের অর্থনীতিকে উঠাতে চেয়েছেন। এ জন্য স্লো যেতে চেয়েছেন। আমরা তার কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।

২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে নিজের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৬ সালে সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ছিলেন সাইফুর রহমান। তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠার সাথে যুক্ত ছিলেন। দ্বিতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে সদস্য নির্বাচিত হন এই রাজনীতিবিদ। এম সাইফুর রহমান বাণিজ্যমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী ও দীর্ঘ সময় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে সংসদে ১২ বার বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফের সভাপতিত্বে ও সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের সদস্য সচিব এম কাইয়ুম চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, এ জেড এম ডা: জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দস তালুকদার দুলু, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের পৌর মেয়র জি কে গউস ও মরহুম এম সাইফুর রহমানের ছেলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এম নাসের রহমান বক্তব্য রাখেন।

এমজে/