বৈঠকের পর চাঙ্গা নেতারা

সমাবেশ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি

সমাবেশ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি

কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে তিন দিনের সিরিজ বৈঠকের পর চাঙ্গা বিএনপি নেতারা। শিগগিরই কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ শীর্ষস্থানীয় নেতা ও পেশাজীবীদের সঙ্গেও সভা করবে হাইকমান্ড। এরপর সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দাবিতে হবে এই সমাবেশ।

জানা যায়, সমাবেশ কর্মসূচির বিষয়ে সিরিজ বৈঠকে কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের কাছ থেকে দুই ধরনের মতামত পেয়েছেন দলীয় হাইকমান্ড। অনেকে সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার কথা বলেছেন, আবার কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরে এই কর্মসূচি পালনের পরামর্শ দিয়েছেন। সমাবেশের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে হাইকমান্ড।

তবে বিভাগীয় পর্যায়ে নাকি জেলা শহরে সমাবেশ হবে তা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। ধারাবাহিক সভায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের দাবি আদায়ের জন্য জোরদার আন্দোলনের ব্যাপারে সব নেতাই একমত পোষণ করেছেন। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনকে সামনে রেখে শিগগিরই সমাবেশ কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন নেতারা। কর্মসূচির ব্যাপারে সভায় বিএনপি হাইকমান্ড বলেন, সমাবেশ কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়টি আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। তবে বিভাগীয় পর্যায়ে না জেলা শহরে হবে-তা স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিন দিনের ধারাবাহিক বৈঠকে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কী করণীয় এবং সংগঠনের অবস্থা কেমন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আমরা আরও কিছু সভা করব। বিশেষ করে দলের নির্বাহী কমিটি সদস্য ও জেলা নেতাদের নিয়েও সভা করব, তাদের মতামত শুনব। পেশাজীবীদের সঙ্গেও আলোচনা করার কথা রয়েছে। শনিবার (আজ) আমাদের স্থায়ী কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সে লক্ষ্যেই আমরা দলীয় নেতাদের মতামত নিচ্ছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের মতামত নেব। সবার মতামত নিয়ে আমরা সামনে পথ চলতে চাই। এটাও ঠিক, আমাদের দাবিগুলো সরকার স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেবে না। এক্ষেত্রে আন্দোলনের বিকল্প নেই। আমরা আন্দোলনেই আছি। সময়মতো আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দেব।

বিএনপির কেন্দ্রীয় জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, ‘এবার কর্মসূচি ঘোষণা হলে তা সফল হওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। এখন সব পর্যায়ের নেতাকর্মী মনে করছেন, আর পিছু হটার সুযোগ নেই। আমাদের আর ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। সামনে যে কর্মসূচি আসবে তাতে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সাহস নিয়ে, অনেক বেশি কমিটমেন্ট নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।’

তিনি বলেন, ধারাবাহিক সভাগুলোতে বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে কী ভাবছি-তা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের কাছ থেকে শুনেছেন। আসলে নেতা হিসাবে কার্যনির্বাহী কমিটির দায়িত্বশীল পদে থাকার কারণে আমাদের ওপর যে দায়িত্বটা বর্তায় তা পালনে আমরা নানা সময়ে কমবেশি সীমাবদ্ধতার পরিচয় দিয়েছি। যখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সামনে কথা বলার সুযোগ পাই, উনি যখন আমাদের উদ্দেশে বলেন-তখন সবাই উজ্জীবিত, অনুপ্রাণিত ও সাহসী হই। আমাদের দায়িত্ববোধটাও বেড়ে যায়। আমরা নিজেরাও আমাদের ভুল-ত্রুটি, সীমাবদ্ধতা সেগুলো সংশোধন করে আরও বেশি করে দায়িত্ব পালন করার ব্যাপারে মানসিকভাবে সিদ্ধান্ত নিই, প্রস্তুতি গ্রহণ করি। সভার পর নেতারা অনেক উজ্জীবিত হয়েছে। যা সামনে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করবেন তারা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, সিরিজ বৈঠকে নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকজন নেতা কথা বলেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপি হাইকমান্ড বলেন, ‘আমেরিকাসহ অধিকাংশ দেশ বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চায়। গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাও বিভিন্ন সময় বিবৃতি দিয়েছে। বহির্বিশ্বের শক্তিগুলো কাউকে ক্ষমতায় বসাবে না। দেশের ভেতরে যদি আপনারা (দলীয় নেতাকর্মী) বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন বহির্বিশ্বের শক্তিগুলোকে তখন স্বাভাবিকভাবেই পাশে পাওয়া যাবে।’

তিন দিনের সিরিজ বৈঠকে নেতারা আগামীতে আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে হলে রাজধানী ঢাকাকে প্রস্তুত করার কথা বলেন। তারা বলেন, ২০১৫ সালে সারা দেশে তুমুল আন্দোলন হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অসংখ্য নেতাকর্মী সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করেছে। ওই সময় তারা গ্রেফতার হয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু রাজধানী ঢাকা শহরে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। সামনে ঢাকাকে প্রস্তুত করতে হবে, ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। নেতারা বলেন, বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোথায় সমস্যা আছে, সমন্বয়হীনতা আছে-এসব বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে মূল দলের যে সমস্যাগুলো আছে তা নিরসন করতে হবে। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামলে জয় নিশ্চিত।

বৈঠকে নেতারা আরও বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে শামিল হতে হবে। সামনের আন্দোলনে বিএনপি নেতৃত্ব দেবে। যারা দেশে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়, মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় সবাইকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। যেটা হতে পারে এক প্ল্যাটফরমে অথবা যুগপৎ ধারায়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে একই। এছাড়া অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো ‘ঠিক করার তাগাদা’ এসেছে বৈঠকে। বিশেষ করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ‘দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি’ গঠনের ব্যাপারে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়। অঙ্গসংগঠনের কমিটি দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না, কমিটিতে স্থান পেতে নানা তদবির-লবিং করতে হয়, মফস্বল থেকে ঢাকায় এসে কমিটির জন্য তদবির করতে হয় ইত্যাদি বিষয়গুলোও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নজরে আনেন নেতারা।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মামুন খান বলেন, আমাদের অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকনির্দেশনায় সাংগঠনিকভাবে ছাত্রদল আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। বিশেষ করে ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীরা অনেক চাঙ্গা হয়েছে। এখান থেকে সামনের আন্দোলনে আমরা ভালো কিছু পাব।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বে থাকার সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, তিন দিনের ধারাবাহিক বৈঠকে মোট ২৮৬ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ১১৮ জন বক্তব্য দেন।