জাপা শিগগির মন্ত্রিসভা ছাড়বে

এরশাদের ঘোষণা তো আ’লীগ থেকে আসে!

এরশাদের ঘোষণা তো আ’লীগ থেকে আসে!

ঢাকা, ৬ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গত তিন বছরে বহুবার বলেছেন, তার দল ‘শিগগির’ মন্ত্রিসভা ছাড়বে। সর্বশেষ ৩ মার্চ বলেছেন, মন্ত্রিসভা ত্যাগ শুধুই সময়ের ব্যাপার। তবে জাপার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেক নেতাই বলছেন, মন্ত্রিসভা ত্যাগের ঘোষণা শুধুই কথার কথা। এরশাদ চাইলেও জাপার মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন না। তাদের বাধ্য করার বাস্তবতা জাপায় নেই।

সম্প্রতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে জাপার নেতৃত্বাধীন ৫৮ দলের জোট। মহাসমাবেশ থেকে মন্ত্রিসভা ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদ চমক দিতে পারেন- এমন গুঞ্জন থাকলেও তা সত্যি হয়নি। জাপার শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা নিশ্চিত করেছেন, মহাসমাবেশ উপযুক্ত মঞ্চ ছিল ‘বড় ঘোষণা’ দেওয়ার। কিন্তু সমাবেশ আয়োজনে সরকারের ‘সহযোগিতা’ ছিল। তাতে স্পষ্ট, মুখে বললেও মন্ত্রিসভা ত্যাগের পথে জাপা যাচ্ছে না।

৫ জানুয়ারির একতরফা ভাগাভাগির নির্বাচনে ৩৪ আসন পেয়ে সংসদে কথিত প্রধান বিরোধী দল হয় জাপা। বিরোধী দলের আসনে বসেও মন্ত্রিসভায় যোগ দেয় দলটি। জাপার তিন এমপি মন্ত্রিসভার সদস্য। নির্বাচন ‘বর্জনকারী’ এরশাদ মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদে রয়েছেন ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে। যা বাংলার সকল সিনেমাকে হার মানিয়েছে।

জাপা চেয়ারম্যান একাধিকবার বলেছেন, মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়া ঠিক হয়নি। মন্ত্রিসভা গঠনের চার বছর পর বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলছেন, বিরোধী দলে থেকে মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার নজির খুব বেশি নেই। দলের অস্তিত্ব ‘বাঁচিয়ে’ প্রকৃত বিরোধী দল হতে ভোটের বছরে তিনি মন্ত্রিসভা ছাড়তে চেয়েছেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি সংসদে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান, জাপার মন্ত্রীদের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিতে।

এরশাদ ও রওশনের মন্ত্রিসভা ছাড়ার ‘অভিপ্রায়’ নতুন নয়। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে জাপার সংসদীয় দলের মন্ত্রিসভায় প্রথমবারের মন্ত্রিসভা ছাড়ার কথা বলেন এরশাদ। এরশাদ সেদিন বলেছিলেন, প্রকৃত বিরোধী দল হতে সরকারের শরিকানা ছাড়তে হবে। চার বছরে এরশাদ ও রওশন অনেকবার বললেও মহাসমাবেশে তাদের বক্তব্যে এ বিষয়ক একটি শব্দও ছিল না। জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার বলেছেন, দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা মন্ত্রিসভা ছাড়ার বিষয়ে একমত। সুবিধাজনক সময়ে তারা এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন।

এরশাদ ও রওশন প্রকাশ্য বক্তৃতায় বারবার মন্ত্রিসভা ছাড়ার কথা বললেও জাপার মন্ত্রীরা এ ইস্যুতে নীরব। দলের এক মন্ত্রী ও দুই প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলছেন না। তাদের একজনও মন্ত্রিত্ব ছাড়তে রাজি নন বলে জানা গেছে। অতীতে তাদের বক্তব্য ছিল- মন্ত্রিসভা ছাড়ার আগে এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ ছাড়ূন। তবে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা দাবি করেছেন, দল থেকে তাকে কখনও পদত্যাগ করতে বলেনি।

২০১৫ সালের ৯ আগস্ট এরশাদ এক অনুষ্ঠানে আবারো বলেন, মন্ত্রিসভা ছাড়বেন তারা। দলের প্রেসিডিয়াম এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারি দলের নেতাকর্মীদের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এরশাদ জানান, দলীয় অবস্থান পরিস্কার করতে শিগগির মন্ত্রিসভা ছাড়বে জাপা। একই বছরে ২৩ মে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলে সরকারে শরিকানা ছাড়বেন। গত বছরের ৪ আগস্ট একই কথা বলেন। একই দিনে রওশন এরশাদও বলেন, দলীয় ফোরামে মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

সাড়ে তিন বছরে অসংখ্যবার ঘোষণা দিয়েও জাপা কেন মন্ত্রিসভা ছাড়েনি? এ প্রশ্নের উত্তর নাম প্রকাশ করে দলটির কোনো নেতাই গণমাধ্যমকে তথ্য দিতে চান না। দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের জানান, দলের প্রেসিডিয়ামে বছর দু-এক আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে ‘সময়মতো’ ছাড়বে জাপা। কোন সময়ে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে, তা দলীয় চেয়ারম্যানের এখতিয়ার। এরশাদ ও রওশন প্রায় একই সময়ে সরকার ছাড়ার কথা বললেও তা শিগগির বাস্তবায়ন হবে, এমন সম্ভাবনা দেখছেন না জি এম কাদের।

গত মাসের শুরুতে রংপুরে এরশাদ বলেন, মন্ত্রিসভা ছাড়া সময়ের ব্যাপার। এ বিষয়ে জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এরশাদের ঘনিষ্ঠ নেতারা জানান, শুধু জাপা চেয়ারম্যানের ওপর মন্ত্রিসভা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নির্ভর করে না। সরকার কী ভাবছে, সরকার মন্ত্রিসভায় জাপাকে রাখতে চায় কি-না, সেগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, ‘এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা।’

২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেয় জাপা। নির্বাচনের তিন মাস আগে ২০১৩ সালের অক্টোবরে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেন এরশাদ। জাপার তিনজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এবার ভোটের আগমুহূর্তে মন্ত্রিসভা ছেড়ে বিরোধীদের সঙ্গে সখ্যের একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারেন এরশাদ। কাজী ফিরোজ রশীদ এ বিষয়ে বলেন, ‘জাপা ভোটের আগে মন্ত্রিসভা ছাড়বে, তা নিশ্চিত। কত আগে ছাড়বে এ জবাব দেওয়ার সময় এখনও আসেনি।’ সুত্র: সমকাল।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০২৭ঘ.)