স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে ফের কারাগারে খালেদা জিয়া

স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে ফের কারাগারে খালেদা জিয়া

ঢাকা, ৭ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ): বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার শেষে হাসপাতাল থেকে শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে তাঁকে আবার কারাগারে নেওয়া হয়েছে।

এর আগে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে তাঁকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিএসএমএমইউ-এ নেওয়া হয়।

বিএসএমএমইউয়ের কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময়টাতে খালেদা জিয়া কেবিন ব্লকের ৫১২ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর কয়েকটি এক্স-রে করা হয়।

এদিকে খালেদা জিয়া কারাগার থেকে হাসপাতালে পৌঁছানোর পর কিছুটা হেঁটে গিয়ে লিফটে ওপরে ওঠেন। এ সময় তাঁর পরনে ছিল অফহোয়াইট রঙের জামদানি শাড়ি। তাঁর চারপাশে ছিল পুলিশ, চিকিৎসক, নার্স, কারারক্ষী।

খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে হাসপাতালে নেওয়া এবং হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় ওই সব সড়কে যান চলাচল সীমিত করা হয়হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রচুর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

বিএসএমএমইউ-এ রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ থেকে বের হয়ে গাড়িতে ওঠেন। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গাড়ি কারাগারের উদ্দেশে রওনা করে। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান গাড়ির কাছে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। তখন ওই দুই নেতা জোর করে সামনে এগিয়ে গাড়ির কাঁচ ধরে খালেদা জিয়াকে হাত নেড়ে বিদায় জানান।

বেগম খালেদা জিয়াও হাসিমুখে হাত নাড়েন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সরকার অবশেষে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ। তার এই অসুস্থতার জন্য সরকার দায়ী। কারণ তাকে নির্জন কারাগারে রেখেছে অবৈধ সরকার। তিনি খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানোর দাবি জানান।

এরই মধ্যে হাসপাতাল ও কারাগার এলাকায় বিএনপির কিছু কিছু নেতা-কর্মীকে ভিড় করতে দেখা গেছে। তবে পুলিশ হাসপাতালের সামনের জড়ো হওয়া বিএনপির কিছু কর্মীকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শাহবাগ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করে থানায় রাখা হয়েছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে তাঁকে সেখানে রাখা হয়।

গত ১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গঠিত বিশেষ মেডিকেল বোর্ড কারাগারে গিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। বোর্ডের সদস্যরা হলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অধ্যাপক মো. শামছুজ্জামান (অর্থোপেডিকস), অধ্যাপক মনসুর হাবীব (নিউরোলজি), অধ্যাপক টিটু মিয়া (মেডিসিন) ও সোহেলী রহমান (ফিজিক্যাল মেডিসিন)।

পরের দিন চিকিৎসক মো. শামসুজ্জামান গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তবে গুরুতর নয়।

এদিকে গতকাল শুক্রবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ম্যাডামের স্বাস্থ্য খুব ভালো নয়। প্রথম থেকেই আমরা তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কে খুব উদ্বিগ্ন। তাঁর সমস্যাগুলো বেশ বেড়ে গেছে।’

হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বেগম খালেদা জিয়ার কয়েকজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন। ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মধ্যে নিউরো মেডিসিনের ওয়াহিদুজ্জামান এবং মেডিসিনের এফ এম সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি ও তাঁর দুই মেয়ে হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন।

(জাস্ট নিউজ/জেআর/১৪২৫ঘ.)