চাকরিতে কোটা: কী আছে বাংলাদেশের আইনে?

চাকরিতে কোটা: কী আছে বাংলাদেশের আইনে?

ঢাকা, ১৫ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : বাংলাদেশে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে ঘোষণা দিলেও, এখনো এ বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।

কবে হবে- তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সরকারি কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এখনো এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা এরকম সংশ্লিষ্টদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার জন্য যে কমিটি গঠন করার কথা, সেটিও এখনো গঠিত হয়নি।

কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথমে মন্ত্রীপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সেখানে জনপ্রশাসন সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ছাড়াও আরো কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা থাকতে পারেন।

এই কমিটি তাদের পর্যবেক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরই প্রজ্ঞাপন জারি করে কোটার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

তবে কমিটি এখনো গঠিত না হওয়ায় কমিটির কাজের ধরন বা আওতা সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ১১ এপ্রিল সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।

এই ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করলেও, প্রধানমন্ত্রীর ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন কোটা সুবিধা পাওয়া ব্যক্তিরা।

গত কয়েকদিন ধরেই তারা ঢাকা এবং বিভিন্ন জেলা শহরে সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সমাবেশ করছেন। প্রয়োজনে এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন তারা।

'আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান' নামের একটি সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কবির বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, প্রথমে তারা দেখতে চান, এ বিষয়ে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কি ঘোষণা দেয়। সেটা দেখেই তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ আসনে কোটায় নিয়োগ হয়। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা নাতি-নাতনির জন্য, ১০ শতাংশ নারীদের জন্য, জেলা কোটায় ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে আসলে এ বিষয়ে কি বলা হয়েছে?

সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলছেন, সংবিধানের দুটো অনুচ্ছেদে কোটা শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি, কিন্তু বলা হয়েছে, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করার জন্য, অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সমতা আনার জন্য, তাদের ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া যাবে। নারী, পুরুষ লিঙ্গ ভেদে বা ধর্ম ভেদে বৈষম্য করা যাবে না। আবার বলা হয়েছে, যারা অনগ্রসর, পিছিয়ে পড়া, তাদের পক্ষে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বা বিশেষ আইন করা যাবে।

চাকরিতে কোটা থাকা না থাকার ব্যাপারে সংবিধানে কিছু বলা নেই। এটা পুরোপুরি সরকারের ব্যাপার বলে তিনি মনে করেন।

বর্তমান কোটার সংখ্যাও বিভিন্ন সময় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

“এর আগে কোটা সুবিধা চালুর বিষয়টিও সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে করা হয়েছে। সেখানে কোনো সংস্কার আনা, রাখা বা বাতিল করার বিষয়টিও আরেকটি প্রজ্ঞাপন দিয়েই করা যাবে। এজন্য পার্লামেন্টে আলোচনার কোনো দরকার নেই।”

“কিন্তু যেকোনো ভাবেই হোক, সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর গোষ্ঠীগুলোর জন্য সরকারে বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে,” বলছেন মি. মালিক। “তবে সেটা কিভাবে রাখা হবে, কার জন্য কতটুকু রাখা হবে, তা পুরোপুরি সরকারের বিষয়,” বলেন তিনি।

গত বুধবার বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে যখন অনেকটা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন, তখন এ বিষয়টি দেখার জন্য মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, এখনো কোনো কমিটি গঠিত হয়নি। এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনাও পাওয়া যায়নি।

পুরো বিষয়টি সম্পন্ন হতে আরো সময় লাগবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র: বিবিসি

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২১৪৩ঘ.)