সরকার হটাতে একমত বিএনপি-জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম

সরকার হটাতে একমত বিএনপি-জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম

সরকার বিরোধী বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে চলমান সংলাপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর সাথে সংলাপ করেছে বিএনপি। সংলাপে সরকার সরাতে একমত হয়েছে বলে জানান বিএনপি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতারা।

শনিবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একমত হয়েছি যে, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবো। সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। সেই সঙ্গে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। তারপরে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন হবে। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি নতুন পার্লামেন্ট গঠন হবে। সেই পার্লামেন্টের মাধ্যমে সকল দলের মতামতের ভিত্তিতে একটি সরকার গঠন করা হবে। এই বিষয়গুলোতে আমরা একমত হয়েছি যে, আন্দোলনের ব্যাপারে আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে যুগপৎভাবে আন্দোলন শুরু করবো এবং আন্দোলনকে একটা সুনির্দিষ্ট পর্যায়ে, অর্থাৎ এই সরকারকে পদত্যাগের মধ্যে দিয়ে আন্দোলনকে সফল করার জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবো।

তিনি বলেন, আমরা একমত হয়েছি, আমাদের গণতন্ত্রের নেত্রী, যিনি সারাটা জীবন গণতন্ত্রের লড়াই সংগ্রাম করেছেন। যাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় প্রতিহিংসামূলকভাবে আজকে তিন বছর ধরে, প্রথমে কারা অন্তরীণ এখন গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। চরম অসুস্থতার মধ্যেও তাকে বিদেশে চিকিৎসা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। সেই নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি একই সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে যাদের বন্দি করে রাখা হয়েছে আলেম ওলামাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাজা দেওয়া হয়েছে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৫ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তাদের সবার মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করার ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের যে ঘোষিত কর্মসূচি সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করার; সেই কর্মসূচি অনুযায়ী আজকে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছি। আমাদের দেশের মানুষের ওপরে যে দুঃশাসন চেপে বসে আছে অনির্বাচিত একটি সরকার। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য, আশা-আকাঙ্খা সেগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়ে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে, প্রশাসন বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে রাষ্ট্রকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে। তাদের বিরুদ্ধে সমস্ত রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার ব্যাপারে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতাদের সাথে আলাপ করে একমত হয়েছি।

এসময় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী বলেন, আজকে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। দেশের মানুষ আজকে সুখি না, পেটের খুদায় মানুষ রাস্তাঘাটে হাহাকার করছে। বন্যার মধ্যেও সরকারের সাহায্য পর্যাপ্ত পরিমাণে যাচ্ছে না। তাছাড়া দেশের প্রধান যে জিনিসটা গণতন্ত্র ধ্বংস করে ফেলেছে। এই সরকারকে আর টিকে থাকতে দেওয়া যায় না। অনতিবিলম্বে এই সরকারকে হঠাতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার হঠানোর জন্য আমাদের কোরবানির প্রয়োজন আছে, আন্দোলনের প্রয়োজন আছে। আমরা সেজন্য যা কিছু প্রয়োজন হয়, তা করতে একমত হয়েছি।

সংলাপে বিএনপির পক্ষে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের পক্ষে মনসুরুল হাসান রায়পুরীর সঙ্গে দলটির মহাসচিব মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, নির্বাহী সহ সভাপতি মাওলানা আব্দুর রহিম ইসলামাবাদী, সিনিয়র সহ সভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা শেখ মজিবুর রহমান, সহ সভাপতি মাওলানা শহীদুল ইসলাম আনসারী, সহ সভাপতি আলহাজ জামাল নাসের চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল হক কাওসারী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা রশিদ বীন ওয়াক্কাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী জাকির হোসাইন খান উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৪ মে রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে প্রথম বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে গত ২৭ মে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ৩১ মে গণসংহতি আন্দোলন এবং ১ জুন বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ২ জুন কল্যাণ পার্টি, ৭ জুন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ৮ জুন জাতীয় পার্টি ( কাজী জাফর), ৯ জুন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ১২ জুন ন্যাপ ভাসানী, ১৬ জুন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের অংশ হিসেবে এসব বৈঠক করছে বিএনপি।