নথিতে ১৩টি বড় ভুল

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেখানো ডকুমেন্টের ‘ডিয়ার স্যারস’ পড়ে হাসলেন মির্জা আলমগীর

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেখানো ডকুমেন্টের ‘ডিয়ার স্যারস’ পড়ে হাসলেন  মির্জা আলমগীর

ঢাকা, ২৪ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাসপোর্ট জমা দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের পক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গণমাধ্যমকে যে ডকুমেন্ট দেখিয়েছেন সেটাতে ১৩টি বড় ভুল রয়েছে এবং এই নথি রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১ টার দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালযে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নথিতে থাকা ‘অসংগতি’ তুলে ধরে তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

মির্জা আলমগীর বলেন বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম যে ডকুমেন্ট দেখিয়েছেন সেটাতে অনেক ভুল আছে। ১৩টি বড় ভুল রয়েছে এই নথিতে। নথির যেসব স্থানে ‘ভুল’ করা হয়েছে, ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে এ ধরনের ভুল করা অস্বাভাবিক। তার এই ডকুমেন্ট রহস্যজনক ও সন্দেহজনক।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেখানো ডকুমেন্টটি প্রদর্শন করে মির্জা আলমগীর বলেন, নথির শুরুতেই ডিপার্টমেন্টের নাম ভুল লেখা হয়েছে। চিঠিতে লেখা আছে, ‘বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি’। কিন্তু হবে ‘হাইকমিশন অব বাংলাদেশ’। এতে বড় করে টেলিফোন নম্বর ও ফ্যাক্স নম্বর দেওয়া আছে, যেটা ‘আনকমন’ (অস্বাভাবিক)। ব্রিটিশ চিঠির মধ্যে এগুলো থাকে না। চিঠির ওপরে চারটি পাসপোর্টের কথা বলা হলেও নিচের দিকে আবার একটি পাসপোর্টের কথা বলা হয়েছে। চিঠির শেষাংশে ‘ফেইথফুলি’র এফ বড় হাতের অক্ষর দিয়ে লেখা হয়েছে। ব্রিটিশরা এটা কখনোই লিখবে না। যিনি সই করেছেন, তার কোনো নাম নেই। এসব বিবেচনায় চিঠি নিয়ে যথেষ্ট রহস্য রয়েছে।

এরপর মির্জা আলমগীরের আবেদনের সম্বোধনসূচক শব্দ ‘ডিয়ার স্যারস’ পড়ে হেসে ফেলেন। তিনি বলেন, এখানে এসআইআর এর জায়গায় লেখা হয়েছে এসআইআরএস।

বিএনপির এই নেতা বলেন, লন্ডন সফরের একমাত্র অর্জন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংগ্রহ করা তারেক রহমানের ২০০৮ সালে ইস্যু করা পাসপোর্টের ৩টি পাতা এবং ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের অসংখ্য ভুলে ভরা এক লাইনের রহস্যজনক একটি চিঠির ফটোকপি। কী বিচিত্র এই সরকার! কী দুর্বল তাদের অপকৌশল!

মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে স্পষ্ট ভাষায় দেশবাসীকে জানাতে চাই, তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক। তিনি তার এই প্রিয় দেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন ও থাকবেন।

তিনি বলেন, দেশের জনগণ এখন দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ও অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে বিপর্যস্ত। গুম-খুন-চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ। শেয়ার বাজার ও ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ। এই সময় অপরাজনীতি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা হচ্ছে। এতে জনগণের ক্ষোভের মাত্রা আরো বাড়বে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, তারেক রহমান পাসপোর্ট জমা দিয়ে নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের এমন বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে গতকাল সোমবার তারেক রহমানের পক্ষে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম লন্ডনে বলেছিলেন, ২০১৪ সালের ২ জুন যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ও মেয়ের পাসপোর্ট লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ফেরত পাঠানো হয়। তাদের কারও কাছে কোনো ট্রাভেল ডকুমেন্ট নেই, যা দিয়ে তারা বাংলাদেশে আসতে পারবেন।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৪৪০ঘ.)