দেশে একনায়কতন্ত্র চলছে: জি এম কাদের

দেশে একনায়কতন্ত্র চলছে: জি এম কাদের

দেশে এখন সাংবিধানিকভাবে একনায়কতন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, সরকারি দলের অনেক নেতা-কর্মী এখন বলছেন, স্বৈরতন্ত্র দরকার। স্বৈরতন্ত্র হলে উন্নয়ন হয়।

শনিবার বেলা একটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় পার্টির প্রয়াত মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর স্মরণসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। সভার আয়োজন করে পার্টির চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটি।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জি এম কাদের বলেন, তিন দলের আন্দোলন চলাকালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিলেন। তখন দাবি ছিল স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। দেশে আজ যে শাসনব্যবস্থা চলছে, সেটিতে উল্টোটাই সফলতা লাভ করেছে। অর্থাৎ গণতন্ত্র নিপাত যাক, স্বৈরতন্ত্র মুক্তি পাক। এখন দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। সংবিধান অনুযায়ী দেশে এখন একনায়কতন্ত্র চলছে।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জি এম কাদের বলেন, বাংলাদেশে এমন সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে সৎ, নিষ্ঠাবান ও মেধাবীরা বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন, লাঞ্ছিত হচ্ছেন। তাঁরা সমাজে টিকে থাকতে পারছেন না। উল্টো দিকে মেধাশূন্য ও দুর্নীতিবাজ মানুষের উত্থান ঘটছে।

দেশে সুশাসনের অভাবে এমনটা হচ্ছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, দেশে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন হচ্ছে না। বরং দুষ্টের পালন ও শিষ্টের দমন হচ্ছে। দলীয়করণের কারণে একশ্রেণির মানুষ আইনের ঊর্ধ্বে অবস্থান করছেন। সরকারি দলের লোকেরা সে সুযোগে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন।

সরকারের বিরোধিতা করা প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সরকার তৈরি করে জনগণ। তাই সরকারের প্রশংসা করার অধিকার যেমন আছে, তেমনি তাকে নিন্দা বা সমালোচনা করার অধিকারও থাকতে হবে। পাশাপাশি সরকারের পরিবর্তন করার অধিকারও থাকতে হবে। নাহলে এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হলো না। কিন্তু এখন সরকারের বিরুদ্ধে যেকোনো সমালোচনাকে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। অত্যন্ত সুচতুরভাবে এটি করা হচ্ছে।

দেশে জবাবদিহির অভাবে বৈষম্য বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, দেশে গরিব আরও গরিব হচ্ছে, বড়লোক আরও বড়লোক হচ্ছে। এ বৈষম্যের জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। জবাবদিহিহীন একটি সরকার চলছে। এ কারণেই বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে। সবখানে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

দেশ এখন দোজখ হয়ে গেছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ যাঁরা পরকালে চলে যাচ্ছেন, তাঁদের ব্যাপারে নিকটাত্মীয়রা শোকাহত হই। কিন্তু আমার বিশ্বাস, যাঁরা ওপরে চলে যান, তাঁরা মোটামুটি এ দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন। এটি আমরা ধারণা করতে পারি। কারণ, এ দেশটা এখন কিছুটা হলেও দোজখের সমতুল্য হয়ে গেছে। মানুষ খেতে পারে না, চলতে পারে না, আয় নেই। প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। যেখানে যাচ্ছে, সেখানে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। টিসিবির লাইনে দুই–আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য পাচ্ছে না। তাই মানুষের এ দেশে থাকা আর দোজখে থাকার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।’

মিয়ানমার প্রসঙ্গ টেনে জি এম কাদের বলেন, ‘মিয়ানমার বারবার রোহিঙ্গাদের আমাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যখন-তখন তারা বোমা ফেলছে, গোলাগুলি করছে, আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে। এসব দেখে মনে হয়, আমাদের দেশে কোনো নীতি নেই। আমরা ব্যর্থ হয়েছি এ সমস্যা সমাধান করতে। রোহিঙ্গারা আমাদের বড় বোঝা হয়ে গেছে। মিয়ানমারের উসকানিমূলক কাজ বেড়ে যাচ্ছে। আমরা নতজানু পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে বাক্যবিনিময় করে শেষ করে দিচ্ছি। কোনো কাজ করে দেখাতে পারছি না।’

স্মরণসভায় প্রধান আলোচক ছিলেন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রধান বক্তা ছিলেন মহাসচিব মুজিবুল হক, স্বাগত বক্তব্য দেন উত্তর জেলার সদস্যসচিব সফিক-উল আলম চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন উত্তর জেলার আহ্বায়ক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন যুগ্ম মহাসচিব ও বাবলুর সন্তান আশিক আহমদ, সাবেক সংসদ সদস্য মো. ইলিয়াস প্রমুখ।