আর সুযোগ দেওয়া হবে না: সরকারকে বিএনপি মহাসচিব

আর সুযোগ দেওয়া হবে না: সরকারকে বিএনপি মহাসচিব

ভয় পেয়ে সরকার বিভাগীয় সমাবেশ বানচালে পুলিশ লেলিয়ে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে ভয় পেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে, পরিবহণ ধর্মঘট করাচ্ছে। ২০১৮ সালের মতো তাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) আর সুযোগ দেওয়া হবে না।’

‘তাই শেখ হাসিনাকে (প্রধানমন্ত্রী) পরিষ্কার করে বলছি, এখনই পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করুন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জনগণের উত্তাল তরঙ্গে বিদায় নিতে হবে। আবারো বলছি, এখনো সময় আছে নিরাপদে প্রস্থান করুন। তা না হলে রেহাই নেই।’

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কৃষক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

‘সার, বীজ, ডিজেল ও কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম কমানো এবং খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে’ এ সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল। এতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষক দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী যোগ দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সমাবেশকে বানচাল করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় মারামারি করতে পুলিশকে লেলিয়ে দিয়েছে। সিরাজগঞ্জে গুলি করেছে। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য) স্ত্রীকে পর্যন্ত গুলি করেছে, সিলেটে গুলি করেছে, হবিগঞ্জে গুলি করেছে। সমাবেশকে আপনারা এত ভয় পান কেন? আজকে জনগণ জেগে ওঠেছে, জনগণ জেগে আছে।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দুর্ভিক্ষের কথা বলেছেন। দুর্ভিক্ষ তো আসবে গত এক দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে।’

‘মাঠপর্যায়ে কৃষকদের দুরবস্থার’ কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কৃষকদের কোমর ভেঙে দিয়েছে। কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। ডিজেলের দাম বেড়ে গেছে ৫০ গুণ। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১০ গুণ। তাহলে এখন কৃষকরা কোথায় যাবে? তাই শেখ হাসিনাকে (প্রধানমন্ত্রী) ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এ দেশের কৃষকরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে ফসল ফলায়। তাদের গায়ে পারফিউম বা সেন্টের গন্ধ থাকে না, গায়ে থাকে মাটির গন্ধ। কৃষকের গায়ে থাকে সেই বৃষ্টিতে ভেজা কাদার গন্ধ। তারা দিনরাত্রি পরিশ্রম করে ফসল ফলিয়ে এ দেশের মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে। অথচ নির্বাচনের সময় কৃষকদের বিনামূল্যে সার দেবে বলেছিল এই অবৈধ সরকার। বিনামূল্যে সার দেয়নি বরং এখন সারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এখন ধান বিক্রি করে তার দাম পাওয়া যায় না, ন্যায্যমূল্য পায় না। এখন অনেক প্রান্তিক কৃষক ক্ষেত ছেড়ে, মাঠ ছেড়ে ঠেলাগাড়ি-ভ্যান চালায়।’

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বর্তমান সরকারকে ‘সরানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কি ২০১৮ সালের আগের রাতের নির্বাচনে যাব? শেয়ালের কাছে মুরগি দেব? না। তাহলে শেখ হাসিনাকে সরাতে হবে।’

কৃষক দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ুন, সমস্ত কৃষকদের জাগিয়ে তুলুন। এই দেশকে যদি রক্ষা করতে হয়, এই জাতিকে যদি রক্ষা করতে হয়, অধিকারকে যদি রক্ষা করতে হয় তাহলে এই ভয়াবহ দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করতে হবে। মুক্ত করতে হবে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে, ফিরিয়ে আনতে হবে তারেক রহমানকে। তাই জনগণকে সংগঠিত করুন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘এ দেশে আর কোনো দিনই দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। বিএনপির নেতাকর্মীদের গায়ে রক্ত থাকতে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমার নেত্রীকে বন্দি করে রেখেছেন। যদি কথায় কাজ না হয় তাহলে হাতুড়ি নিয়ে আসব, জেলের তালা ভাঙব। আমার নেত্রীকে বের করব। একটু অপেক্ষা করছি, ডাক আসলে সারা বাংলাদেশের মানুষ যে নেত্রীকে (খালেদা জিয়া) ভালোবাসে, তার জন্য ঢাকায় অবস্থান নেবে। তাকে মুক্ত করবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর কোনো বাড়াবাড়ি করা হলে ঢাকা শহরে কী হবে তা বলতে পারব না। তাই বাড়াবাড়ি বন্ধ করুন।’

সভাপতির বক্তব্যে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান জাফির তুহিন বলেন, ‘অবিলম্বে কৃষি উপকরণের দাম না কমালে সচিবালয়, গণভবন ঘেরাও করা হবে।’

কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমিনুল হক, তাবিথ আউয়াল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ইশরাক হোসেন প্রমুখ।