একই অভিযোগে ৬ থানায় ৬ মামলা, আসামি বিএনপির ৫০০ নেতা-কর্মী

একই অভিযোগে ৬ থানায় ৬ মামলা, আসামি বিএনপির ৫০০ নেতা-কর্মী

পাবনার ৬ থানায় প্রায় একই ধরনের অভিযোগে এনে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার ভেতর ৬টি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশের ভাষ্য, ঘটনাগুলো মঙ্গলবার একই দিনে ঘটেছে। আর বুধবার দিন-রাত মিলিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বাদী হয়ে এসব মামলা দায়ের করেছেন।

এই ৬ মামলার যে অভিযোগ তা হলো—ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া।

একইসঙ্গে সবগুলো মামলায় জায়গাভেদে ৩ থেকে ৬টি পর্যন্ত অবিস্ফোরিত ককটের উদ্ধারের দাবিও করেছে পুলিশ।

এ নিয়ে একই রকম অভিযোগে গত ৩ দিনে পাবনায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সংখ্যা দাঁড়াল ৭টিতে। সব মিলিয়ে আসামির সংখ্যা ৫ শতাধিক। যদিও এসব মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে অনুষ্ঠেয় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করতে পরিকল্পিতভাবে এসব মামলা করা হচ্ছে।

সব ওসির বক্তব্য একই রকম, ঘটনার সময়ও এক
এই মামলাগুলোর বিষয়ে পাবনার ৭ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার একটির সঙ্গে আরেকটি প্রায় হুবহু মিলে যায়।

ভাঙ্গুড়া থানার ওসি রাশেদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে ভাঙ্গুড়া পৌর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীরা বিশ্বকাপ ফুটবল দেখার সময় হঠাৎ করে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪টি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আব্দুল জব্বার বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক শহীদুল ইসলাম ও পৌর বিএনপির সদস্য সাইদুল ইসলাম বুরুজসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৬০-৭০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।'

ঈশ্বরদী থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, 'মঙ্গলবার রাতে আলহাজ্ব টেক্সাইল মিলস হাইস্কুলে নাশকতার উদ্দেশ্যে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ৬টি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় থানার এসআই শীতল কুমার বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আজমল হোসেন সুজনসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০-১৬০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।'

চাটমোহর থানার ওসি জালাল উদ্দিন বলেন, 'চাটমোহর পৌর এলাকার আফ্রাতপাড়ায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসাদুল ইসলাম হীরার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভেতর মঙ্গলবার রাতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা গোপন বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালালে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত অবস্থায় ৪টি ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় নাশকতার অভিযোগ এনে পুলিশ বিএনপি নেতা হাসাদুল ইসলাম হীরাসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে, অজ্ঞাতনামা আরও ৯০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে।'

আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনও বলেন, 'মঙ্গলবার রাতে পৌর এলাকার কড়ইতলা মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে বসে খেলা দেখছিলেন আওয়ামী-লীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় হঠাৎ করে কার্যালয়ের পাশে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় পৌর আওয়ামী-লীগের যুগ্ম আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম মুকুল বাদি হয়ে বুধবার দুপুরে একটি মামলা করেছে। মামলায় বিএনপির ১০ নেতার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।'

সুজানগর থানার ওসি আব্দুল হান্নান জানান, মঙ্গলবারেই নতুন কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় বিএনপির ২ গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনার কারনে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানার উপপরিদর্শক বাদী হয়ে ৭ বিএনপি নেতার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।

সাঁথিয়া থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, 'সাথিয়ার ধোপাদহ ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে আওয়ামী লীগের নেত-কর্মীরা বৈঠক করার সময় ৩টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতা মনছুর আলী বাদী হয়ে বিএনপির ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৬০-৭০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।'

আতাইকুলা থানার ওসি হাফিজুর রহমানও বলেন, 'মঙ্গলবার রাতে আতাইকুলায় ১টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ঘটনায় উপপরিদর্শক শহীদ বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৬০-৭০ জনের নামে বুধবার মামলা দায়ের করেন।'

এর আগে গত সোমবার পাবনা শহরের খেয়াঘাট সড়ক এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগ এনে জেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ৭ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে সদর থানা পুলিশ।

পুলিশের ভাষ্য, এসব মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এদিকে এসব মামলাকে 'হয়রানিমূলক' অভিহিত করে পাবনা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাসুদ খন্দকার বলেন, 'আগামী ৩ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে যেতে নেতা-কর্মীদের বাধা দিতেই এমন সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এভাবে আমাদের আটকানো যাবে না।'