ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে খুন-মাদকের আসামিদের মনোনয়ন

ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে খুন-মাদকের আসামিদের মনোনয়ন

ঢাকা, ৬ মে (জাস্ট নিউজ) : ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে মনোনয়ন নিয়েছে বেশ কয়েকজন খুন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মাদক মামলার আসামি। ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী এসব নেতাদের নিয়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর সাভারের আমিন বাজার। জমি দখলের ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে অস্ত্রশস্ত্র ও দলবল নিয়ে যান আদাবর থানার ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ। জমি দখল নিয়ে সেখানে গোলাগুলি শুরু হলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন দুজন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা হয়। মামলার পর মূল অভিযোগপত্রে ৩৮ নম্বর আসামি করা হয় তাকে। সেই মামলায় এখনো হাজিরা দিচ্ছেন তিনি। এতো গেল জমি দখলে গিয়ে খুনের অভিযোগ। এর বাইরেও এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত তিনি। সাংগঠনিকভাবে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়া হলেও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত রিয়াজ মাহমুদ ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতির মনোনয়ন উঠিয়েছেন।

শুধু রিয়াজই নন, উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি পদে মনোনয়ন উঠানো আরো দুই প্রার্থী সালমান খান প্রান্ত ও রকিবুল ইসলাম রাজু। যাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অভিযোগে রয়েছে একাধিক মামলা। অনেক ব্যবসায়ীকে হুমকি-ধামকির মাধ্যমে সরিয়ে দিয়ে নিজে বা নিজের লোক দ্বারা ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ থাকা সত্বেও তাদের মনোনয়ন উঠানোকে কেন্দ্র করে উত্তর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আদাবর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ এলাকায় লোকজনের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। সন্ত্রাসী কার্য্কালাপের কারণে লোকজন তাকে সন্ত্রাসী হিসেবেই চেনেন। চাঁদাবাজি, ছিনতাই থেকে শুরু করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য এমন কোন কার্যকলাপ নেই যা তিনি করেন না। তিনি ছাত্রলীগ নেতা হয়েও কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ছাত্রলীগ নেতার এমন কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ।

মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সালমান খান প্রান্তের বিরুদ্ধে খুনের মামলা না থাকলেও পুরো উত্তরাজুড়ে রয়েছে বিশাল চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট। রয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য দখলের অভিযোগও। বিশেষ করে ডিশ ও ইন্টারনেটের পুরো ব্যবসাই তার নিয়ন্ত্রণে। কোন ধরনের লাইসেন্স না থাকলেও এ ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন তিনি। উত্তরা পশ্চিম থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইদুল ইসলাম সোহেলের মামা ইন্টারনেট ব্যবসায়ী মুকুলের পুরো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেন, এছাড়া ডিশ ব্যবসায়ী আনোয়ারুল হকের ব্যবসাও দখল করে এখন নিজের লোক দ্বারা পরিচালনা করছেন। আব্দুল্লাহপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে উত্তরবঙ্গের গাড়ি, ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের গাড়ি থেকে দৈনিক ও মাসিক হারে নিয়মিত চাঁদা উঠান তিনি। উত্তরা পূর্ব থানাধীন টঙ্গি ব্রিজের দক্ষিণ পার্শে আব্দুল্লাহপুর ফুটপাত থেকে দৈনিক ও মাসিক হারে চাঁদা উঠান। উত্তরা মাসকট প্লাজা থেকে আধুনিক হাসপাতাল পর্যন্ত রাস্তার দুপাশ থেকে দৈনিক ও মাসিক হারে চাঁদা উঠান। উত্তরায় অবস্থিত রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস থেকেও চাঁদাবাজি করেন তিনি।

এছাড়াও উত্তরায় অনৈতিক কার্যকলাপ হয় এমন অসংখ্য বাসা-বাড়ি ও আবাসিক হোটেলেও তার নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। চাচা ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়ার সুবাদে নানা অপকর্ম করেও পার পেয়ে যান তিনি।

অস্ত্র হাতে প্রান্ত
ভাষানটেক ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রকিবুল ইসলাম রাজু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজুর আপন বড় ভাই সুমন ৯৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। তার বাবা মৃত কামাল হোসেন সাবেক বিএনপির সংসদ সদস্য কামরুল ইসলামের খুবই ঘনিষ্ট ছিলেন। তার পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে জমি দখল ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের জোরালো অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে ভাষাণটেক থানায় মাদক, জমি দখল ও ছিনতাইয়ের অসংখ্য মামলা রয়েছে। সে বিতর্কিত ব্যবসায়ী হওয়া সত্বেও দামাল কোর্ট মার্কেটের বর্তমান সভাপতিও সে। নেপথ্যে মাদকের ব্যবসা থাকলেও প্রকাশ্য ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত তিনি।

ছাত্রলীগের এই তিন নেতার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন উঠানোর ঘটনায় পুরো মহানগর ছাত্রলীগ উত্তরে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে অন্য নেতারা বলেন, ছাত্রলীগ নেতা হওয়া সত্বেও যারা খুন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসায়ীসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত তারা গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলে ছাত্রলীগ নানা প্রশ্নের সন্মুখিন হবে। পাশাপাশি ছাত্রলীগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যাবে। তাই তারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের যেন ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে না রাখা হয়।

অভিযোগের ব্যাপারে এ তিনজনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও সরাসরি যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি। সুত্র: নতুন সময়।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৫২২ঘ.)