বাড়ি থেকে বের হলেই ডিবি-পুলিশ, তবুও উজ্জীবিত বিএনপি

বাড়ি থেকে বের হলেই ডিবি-পুলিশ, তবুও উজ্জীবিত বিএনপি

ঢাকা ১২ মে (জাস্ট নিউজ) : খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু শনিবার সকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, বাড়ি থেকে বেরোলেই ডিবি-পুলিশ। গণগ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। কর্মীরা বাড়িতে ঘুমাতে পারছে না। আত্মগোপনে থেকে গণসংযোগ করতে হচ্ছে। ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে দিচ্ছে না পুলিশ। অফিস থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।

শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার রাত ৩টা পর্যন্ত আরো ২১ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে। পুলিশ আতংকে দলীয় কর্মী এবং সাধারণ ভোটাররা দিশেহারা। সরকারের সার্বিক আচরণে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের চূড়ান্ত রূপ দেখতে পাচ্ছে খুলনাবাসী। আর নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। পুলিশের গণগ্রেফতার এবং হয়রানির প্রতিবাদ জানাতে সকাল সাড়ে ৮ টায় নগরীর মিয়াপাড়ার বাসভবনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু একটি অর্থবহ, অংশগ্রহণমূলক ও ভীতিহীন নির্বাচন করতে আবারো সেনাবাহিনী নিয়োগের জোর দাবি জানান। তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনী ছাড়া কোনো ভাবেই কেএমপির আওয়ামী পুলিশ দিয়ে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারকে খুশি করতে চায়। এ কারণে বার বার সেনাবাহিনী নিয়োগের দাবি জানানো হলেও তারা এড়িয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, খুলনার পুলিশ জঘন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। প্রচারণার শুরুর দিকে শুধুমাত্র কর্মীদের গ্রেফতার করা হলেও এখন নেতাদের গ্রেফতার করা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত দেড়শ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ শনিবার রাত ৩টা পর্যন্ত আরো ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে সাতক্ষীরার ৩ জন এবং ২১ নং ওয়ার্ডের একজন- এ ৪ জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি পুলিশের কাছে তাদের সন্ধান দাবি করেন।

শত ঝড়-ঝাপটার মধ্যেও নেতা-কর্মী ও ভোটারদের মনোবল ভেঙ্গে যায়নি উল্লেখ করেন তিনি বলেন, সরকার এবং সরকারি দল আতংক ছড়িয়ে বিএনপিকে মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের কোনো অপচেষ্টাই সফল হয়নি। বরং তিনি গণসংযোগে বেরোলে জনতার ঢল নামছে। এ কারণে গণসংযোগ শেষ হলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। ২৪ নং ওয়ার্ডে বিএনপি অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। ২৬ নং ওয়ার্ড বিএনপি অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দেয়া হচ্ছে না- এমনকি অনেক নেতা-কর্মীর পরিবারকে ঘর-বাড়িও ছাড়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে, কর্মী-ভোটাররাও সেইভাবে তৈরি হচ্ছে। তিনি সময়মত কর্মীদের কাজে নামা এবং ভোটারদের ঘর থেকে বের হয়ে ভোট প্রদানের আহবান জানান।

তিনি সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, এত ভয় কিসের? সরকারি দলের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক নাকি উন্নয়নের জোয়ারে নৌকা ভাসাবেন? তাহলে আমাদের ওপর কেন এত হামলা? খুলনার জনগণ সাড়ে ৯ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ১৫ মে রায় দেবেন- এ বার্তা পেয়েই পুলিশকে ব্যবহার করে তারা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই শহরে সন্ত্রাসের মেয়র হয়ে আপনার সম্মান বাড়বে না। এভাবে গণগ্রেফতার, অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে যদি জিতেও যান তবে নগরবাসীর সামনে মুখ দেখাতে পারবেন না। অবিলম্বে পুলিশকে গণগ্রেফতার বন্ধ করতে বলুন। তিনি তালুকদার আব্দুল খালেককে সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে ভোটের রাজনীতিতে ফিরে আসার আহবান জানান।

মাত্র ২৮ দিনের প্রচারণায় ৩১টি ওয়ার্ডের সকল এলাকা এবং সকল ভোটারের কাছে পৌঁছাতে না পারায় তিনি নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, তিনি একজন প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণায় থাকার কথা। কিন্তু প্রতিদিন তাকে গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের খবর নিতে হচ্ছে। তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নিতে হচ্ছে। প্রেস ব্রিফিং করতে হচ্ছে। গণগ্রেফতারের কারণে কর্মীরাও ভোটারদের কাছে যেতে পারছে না। তিনি ভোটারদের নিজ দায়িত্বে ভোট প্রদান করে সেই ভোট রক্ষার আহবান জানিয়ে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে আবারো সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানান।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, জামায়াতের মহানগর শাখার সহকারি সেক্রেটারি অ্যাড. শাহ আলম, অ্যাডভোকেট বজলুর রহমান, নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম, খেলাফত মজলিসের মাওলানা নাসির উদ্দিন, মুসলীম লীগের অ্যাডভোকেট আক্তার জাহান রুকু, বিজেপির নগর সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন সেন্টু, শফিকুল আলম তুহিন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মশিউর রহমান নান্নু, শামসুজ্জামান চঞ্চল, শরিফুল ইসলাম বাবুসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৯০৫ঘ.)