নির্বাচনের ১০০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে : বি. চৌধুরী

নির্বাচনের ১০০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে : বি. চৌধুরী

ঢাকা, ২৯ মে (জাস্ট নিউজ) : নির্বাচনের অন্তত ১০০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিকল্পধারা সভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেন, যাতে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেজন্য আগেই সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ভোটার ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান তিনি।

মঙ্গলবার রাজধানীর অল কমিউনিটি ক্লাবে কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বিএনপির মাহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির সভাপতি আ.স.ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, শাহ আহম্মেদ বাদল আসাদুজ্জামান বাচ্চু প্রমুখ।

বি. চৌধুরী বলেন, যুক্তফ্রন্ট জাতীয় নির্বাচনের পর একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রতিশ্রিুতিবদ্ধ। ফ্রন্ট নিশ্চয়তা দিচ্ছে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মেধাবী লোকদের সাথে নিয়ে দেশেকে সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির পথে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে বিশাল বাজেট দেওয়া হচ্ছে এবং যার জন্য দুর্নীতি সর্বোচ্চ শিখরে। কোনো সরকারি অফিস দুর্নীতি থেকে মুক্ত নয়। বি. চৌধুরী আরো বলেন, দেশে রাজনৈতিক নির্যাতন ও নিপীড়ন চলছে এবং গণতন্ত্র নেই। ঢাকায় ২০ ভাগ ভোটারের বসবাস হলেও বিরোধী দলকে সভা সমাবেশ করতে দেয়া হয় না।

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, বিনা বিচারে হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে জেলে আটক রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক হয়রানি করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়েছে। যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বলেন, একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল ও সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া একধিক চ্যানেল সরকার নিয়ন্ত্রিত। তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। নির্বাচনকে প্রভাবিত করা হয় এবং এর সাম্প্রতিক উদাহরণ খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। পেশী শক্তি ও অবৈধ অস্ত্রের কারণে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের সকল সম্ভাবনার অবসান ঘটেছে।

বি. চৌধুরী বলেন, কালো টাকার জন্য সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এবং জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। সাধারণ মানুষ, ভোটার ও রাজনৈতিক কর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা নেই। এখন জাতীয় নির্বাচন জনগণের মৌলিক দাবি। কিন্তু তার আগে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।

ইফতার মাহফিলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ জাতির সামনে যে সংকট, এটি কোনো একক দল বা ব্যক্তির নয়। এ সংকট গোটা জাতির। আমাদের ওপর আজ যে দানব বসে আছে তাকে পরাজিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। অতীতের ভুল-ভ্রান্তি ভুলে সবাই আসুন এক সাথে কাজ করি। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করি।

ইফতার মাহফিলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মানুষ যখন ভয় পায়, তখন উল্টাপাল্টা কাজ করতে থাকে। আওয়ামী লীগও একই কাজ করছে। তারা মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিনাবিচারে মানুষ খুন করছে। মাদকের আসল হোতাকে না ধরে যারা পেটের দায়ে মাদক বহন করে তাদের বিনাবিচারে হত্যা করছে।

সরকারের চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে বন্ধুকযুদ্ধের সমালোচনা করে ইফতার মাহফিলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, তারা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আমাদের টাকায় অস্ত্র কিনে আমাদের জনগণকে বিনাবিচারে হত্যা করছে। অথচ আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি না নিয়ে, কোনো বিচার না করে আমাদের জনগণকে খুন করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে আ স ম আবদুর রব বলেন, যেতে তো সবাইকে হবে। তবে আইয়ুব, ইয়াহিয়া খানের মতো চলে যাওয়া কখনো কারো জন্য কাম্য না। আমরা চাই, আপনি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিন। না হলে জনগণের জোয়ারে এমনভাবে বিদায় নিবেন যেটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।

বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের বিষয়ে জেএসডি সভাপতি বলেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটকে রাখার ফলাফল কোনোভাবে ভালো হবে না। আমরা চাই আপনি ভালোভাবে বিদায় নিন। কারণ আইয়ুব, ইয়াহিয়া খানের মতো বিদায় নিন, সেটা আমরা চাই না।

বন্দুকযুদ্ধের সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানের নামে যেভাবে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে আসলে এটা একটি মৃত্যুর মিছিল। এখন পর্যন্ত বিনা বিচারে ১১১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এমন মৃত্যুর মিছিল পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।’

মান্না বলেন, তারা বলছে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, যে যুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এ যুদ্ধ হচ্ছে নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধ।

বেগম খালদো জিয়ার মুক্তি দাবি করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ‘আমি কোনো দ্বিধা না রেখে বলব বিনা শর্তে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে। তাকে এভাবে আটকে রাখার কোনো অধিকার সরকারের নেই।’

ইফতার মাহফিলে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন প্রমুখ।

(জাস্ট নিউজ/একে/২১১৬ঘ.)