খালেদা জিয়ার রুমে থাকে না বিদুৎ, নেই জেনারেটরও: মির্জা আলমগীর

খালেদা জিয়ার রুমে থাকে না বিদুৎ, নেই জেনারেটরও: মির্জা আলমগীর

ঢাকা, ৩০ মে (জাস্ট নিউজ) : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখাই সরকারের মূল লক্ষ্য। বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ একথা বলেন।

কারান্তরীণ দলীয় চেয়ারপারসনের শারিরীক অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কারাগারের স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, বিশুদ্ধ পানির অভাব, গুমোট আবহাওয়া ও নিয়মিত বিদ্যুৎহীনতার কারণে দেশনেত্রীর শ্বাসকষ্ট ও জ্বর লেগেই আছে। প্রতি রাত্রে তার জ্বর আসছে। এটা যে কোনো সুস্থ মানুষের জন্য অত্যন্ত এলার্মিং। জ্বরটা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, পরিত্যক্ত এই কারাগারে এখন কোনো জেনারেটর নেই; প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। বাতি জ্বলে না, মোমবাতি ও হাতপাখা দিয়ে কাজ চালাতে হয়। এই যে অমানবিকতা, এই যে হৃদয়হীনতা- এটার তুলনা নেই!

মির্জা আলমগীর বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও বেগম খালেদা জিয়াকে প্রথম শ্রেণীর প্রাপ্য সুবিধাদি দেওয়া হচ্ছে না। স্বাভাবিক নিয়মে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিরা অনেক জিনিস নিজ খরচে নিতে পারলেও বেগম খালেদা জিয়া সেই সুযোগ পাচ্ছেন না। তিনি সারাজীবনে যেটাতে অভ্যস্ত, সেখানে তার ন্যূনতমটা পাচ্ছেন না। সুস্থ মানুষ হিসেবে থাকার জন্য যেটা তার প্রয়োজন, সেটাও তিনি পাচ্ছেন না। তাকে চিকিৎসকরা প্রেসক্রাইব করেছে যে ফিজিওথেরাপি দরকার, সেটাও তিনি পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, তার (খালেদা জিয়া) যে রান্না হয়, সেই রান্নার কোয়ালিটি অত্যন্ত খারাপ হয়ে গেছে। বাইরে থেকে, তার পরিবারের থেকে, তার বাসা থেকে খাবার নিতে দেওয়া হচ্ছে না। এই কথাগুলো বলতে বলতে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি। ন্যূনতম যেটুকু মানবিক আচরণ, যেটা পর্যন্ত করা হচ্ছে না।

বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়ার আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আটকে রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মঙ্গলবার কারাগারে পরিবারের সদস্যরা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করার বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পরিবারের সদস্য কারাগারে গিয়ে দেখেছেন যে, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। অসুস্থতা এমন পর্যায়ে গেছে যে, তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না। তার বাম হাত অত্যন্ত এফেক্টটেড- এটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার নিউরো সমস্যা অনেকগুণ বেড়ে গেছে। আপনারা জানেন যে, দেশনেত্রী আগে থেকেই অস্ট্রিওআর্থারাইটিজ, বেক পেইন, রক্তশূণ্যতাসহ কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০ বছর আগে হাঁটু দুটিতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, দুই চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখনই জরুরিভাবে তার রক্ত পরীক্ষা করা দরকার। বিশেষায়িত এমআরআই করা দরকার। তার সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, কোনো কাল বিলম্ব না করে অবিলম্বে তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে, আমরা বলেছিলাম গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, মূল মামলায় তার জামিন হয়ে গেছে। সেই জামিন ঠেকানোর জন্য সরকার সর্বোচ্চ আদালতে গেছে। এক-মাস দুই মাস সেখানে কাটিয়েছে। তারপরে সেখানে জামিন দিতে যখন বাধ্য হয়েছে, তখন একটার পর একটা ওই সমস্ত মিথ্যা মামলা নিয়ে আসছে। সেই মিথ্যা মামলাগুলোতে হাই কোর্ট থেকে যখন জামিন পাচ্ছে সেই জামিনও আটকে দিচ্ছে। পুরো ব্যাপারটা হচ্ছে, সরকার সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বেআইনিভাবে জামিনকে আটকানোর জন্য তারা বাধার সৃষ্টি করছে। তিনি যেন বেরোতে না পারেন সেটা তারা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। সরকারের মূল লক্ষ্য দেশনেত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা ও যে নির্বাচন ডিসেম্বরে আসছে সেই পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটকিয়ে রাখা।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/২২২৮ঘ.)